নারীদের খুব কমন একটি সমস্যার নাম এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) যার প্রধান লক্ষণ হলো পিরিয়ডের সময় তীব্র প্রকৃতির পেট ব্যথা। এছাড়াও কোমর ব্যথা, সহবাসের সময় ব্যথা, প্রস্রাব ও মলত্যাগের সময় ব্যথা, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এই রোগ একদম সারিয়ে ফেলার মতো কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তবে চিকিৎসা গ্রহণ করার মাধ্যমে রোগ লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহ জটিলতা কমানো সম্ভব হয়।   

এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা উপকারী হতে পারে। এই অনুচ্ছেদে এন্ডোমেট্রিওসিস এর ৮টি ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।  

এন্ডোমেট্রিওসিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে তা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। (Galan, 2023) 

১। গরম সেঁক দেওয়া 

Hot Compress

এন্ডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়। এই ব্যথা কমানোর জন্য পেটে গরম সেঁক দেওয়া উপকারী হবে।

খেয়াল রাখতে হবে যেন খুব বেশি গরম ব্যবহার করা না হয় এবং একটানা দীর্ঘসময় সেঁক দেওয়া যাবে না।

গরম সেঁক দেওয়ার জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে যার মধ্যে গরম পানি ভরে তলপেটে ধরে থাকতে হয়। এই ধরনের ব্যাগ বাজারে (ফার্মেসি, সুপার শপ অথবা অনলাইন শপ) কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ইস্ত্রি বা চুলার সাহায্যে এক টুকরো কাপড় গরম করে সেঁক দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। 

এন্ডোমেট্রিওসিস জনিত তীব্র প্রকৃতির পেট ব্যথা নিরাময়ের আরেকটি চমৎকার উপায় হতে পারে গরম পানিতে গোসল করা। বিশেষ করে শীতের দিনে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে যা ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

২। হলুদ

হলুদে বিদ্যমান কারকিউমিন (Curcumin) এর প্রদাহ নাশক গুণাবলী রয়েছে যা ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা নিরাময়ের জন্য এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ পরিমাণ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া উপকারী হবে। 

পানিতে গুলিয়ে খেতে অনেকের কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। তাই স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মধু যোগ করা যেতে পারে অথবা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।  

৩। আদা 

আদার প্রদাহ নাশক গুণাবলী রয়েছে যা এন্ডোমেট্রিওসিস জনিত ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রান্নার কাজে খাবারের গন্ধ ও স্বাদ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আদার এমন উপকারিতার জন্য Gingerol নামক একটি উপাদানের ভূমিকা রয়েছে। 

অল্প একটু আদা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও গরম পানিতে আদা কুচি করে কেটে আদা পানি তৈরি করে পান করা উপকারী হবে। রং চায়ের সাথে আদা যোগ করা একটি ভালো উপায় হতে পারে। 

৪। খাবার 

কতিপয় খাবার এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে যেগুলো যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। যেমনঃ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ময়দার তৈরি খাবার, গরুর মাংস, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চিনি ইত্যাদি। 

এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ নিরাময়ে কিছু কিছু খাবার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমনঃ সবধরনের ফলমূল ও শাকসবজি, বাদাম, গ্রিন টি, অলিভ অয়েল‌ ইত্যাদি। এছাড়াও খাদ্যতালিকায় মাছ রাখতে হবে। কারণ মাছ হলো প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি খাবার।  

৫। ব্যায়াম 

এন্ডোমেট্রিওসিস ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যায়াম করা বেশ উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে খুব ভারী প্রকৃতির ব্যায়াম করা যাবে না।‌ যেমনঃ ভারোত্তোলন করা, জোরে দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি ইত্যাদি। মৃদু প্রকৃতির ব্যায়াম করা উপকারী হবে। যেমনঃ হাঁটাহাঁটি, ইয়োগা, লম্বা শ্বাস নেওয়া (ব্রিদিং এক্সারসাইজ), মেডিটেশন ইত্যাদি।  

৬। ম্যাসাজ 

ব্যথা নিরাময়ের জন্য তলপেটে হালকাভাবে ম্যাসাজ (Massage) করা উপকারী হবে। তবে খুব জোরে বা দীর্ঘসময় পর্যন্ত ম্যাসাজ করা যাবে না। কারণ এতে করে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। বিছানায় শুয়ে নিজের হাত দিয়ে তলপেটে হালকাভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। ম্যাসাজ করার ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৭। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ এন্ডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। 

এন্ডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় রোগ‌ লক্ষণ অনেক তীব্র আকার ধারণ করে থাকে। তাই‌ এই সময়ে যতটা সম্ভব বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালো।

৮। ওষুধ

Endometriosis Medicine

এন্ডোমেট্রিওসিস জনিত ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যথা নাশক ওষুধ (NSAIDs- nonsteroidal anti-inflammatory drugs) সেবন করা যেতে পারে। ওটিসি মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত ব্যথা নাশক ওষুধগুলো সহজলভ্য (সবার ঘরেই থাকে) এবং ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। (Watson, 2023)

প্যারাসিটামল (Paracetamol)

আমাদের দেশে যেসব নামে প্যারাসিটামল কিনতে পাওয়া যায় তা হলো- 

  • Ace®
  • Aceta®
  • Asta®
  • Atopen®
  • ATP®
  • Depol®
  • Fast®
  • Feva®
  • Fevac®
  • Napa®
  • Paret® 

আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) 

আইবুপ্রোফেন নিচে উল্লেখিত নামে কিনতে পাওয়া যায়- 

  • Advel® 
  • Alflam®  
  • Arafa® 
  • Beflam®
  • Deprofen® 
  • Intaflam® 
  • Iburex®
  • Indoflam® 
  • Profen® 
  • Siflam®
  • Uniflam® 

ব্যথা নিরাময়ের জন্য Paracetamol ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট অথবা Ibuprofen ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের যেকোনো একটি ওষুধ দিনে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৪ বার খাওয়া যেতে পারে। তীব্র প্রকৃতির ব্যথা হলে একইসাথে দুইটি ওষুধ সেবন করতে হবে। 

কখনোই খালিপেটে ওষুধ সেবন করা যাবে না। দুই বার ওষুধ সেবনের মধ্যবর্তী সময়ের দূরত্ব নূন্যতম ৬ ঘন্টা হওয়া উচিত। ওটিসি মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত ওষুধ সেবন করার জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।‌ তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া একটানা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওষুধ সেবন করা যাবে না।

ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা রোগ‌ লক্ষণ নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে শুধুমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতির উপর ভরসা না করে গাইনী ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

এন্ডোমেট্রিওসিসের জন্য যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে জটিলতা হিসেবে বন্ধ্যাত্ব (গর্ভধারণ করতে সক্ষম না হওয়া) সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে এন্ডোমেট্রিওসিসে ভুগছেন এমন নারীদের ক্ষেত্রে ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

References

Galan, N. (2023, May 30). 9 home remedies for treating endometriosis symptoms. Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/321402

Watson, K. (2023, 2 8). Home Remedies for Endometriosis Symptoms. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/home-remedies-for-endometriosis

Last Updated on November 21, 2023