স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি ২৮ দিনের (সর্বনিম্ন ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ দিন) চক্রে পিরিয়ড হয়ে থাকে। আর পিরিয়ডের দৈর্ঘ্য হয় ৩ থেকে ৫ দিন অথবা সর্বোচ্চ ৭ দিন এবং প্রতিবার পিরিয়ডে ২০ মিলি থেকে সর্বোচ্চ ৮০ মিলি পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। স্বাভাবিকের চেয়ে মাসিক বেশি হয় কেন এবং পিরিয়ড বেশি হলে করণীয় কি সেই বিষয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পিরিয়ডে বেশি ব্লিডিং
২১ দিনের কম সময়ে চক্র হওয়া, ৭ দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড থাকা অথবা ৮০ মিলির চেয়ে বেশি পরিমাণে রক্তক্ষরণ হলে সেটিকে মেডিকেলের ভাষায় Heavy menstrual bleeding (পূর্বে বলা হতো Menorrhagia) বলা হয়। আর দুইটি পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে অস্বাভাবিক ভাবে রক্তক্ষরণ হলে সেটিকে Abnormal uterine bleeding (পূর্বে বলা হতো Metrorrhagia) বলা হয়। যা হোক, দুইটাই অস্বাভাবিক ঘটনা এবং এর কারণ হলোঃ (Cleveland Clinic, 2021)
- থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি পরিমাণে হরমোন নিঃসরণ হওয়া
- ওভারিতে সিস্ট হওয়া (PCOS- Polycystic ovary syndrome)
- জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা পলিপ
- জননেন্দ্রিয়ের ইনফেকশন
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- জরায়ু ক্যান্সার ইত্যাদি
মেনার্কি (জীবনের প্রথম পিরিয়ড) ও মেনোপজের কাছাকাছি সময় গুলোতে পিরিয়ড সংক্রান্ত এই ধরনের সমস্যা গুলো বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও যাদের শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার অধিক ঝুঁকি রয়েছে।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে?
পিরিয়ডের অস্বাভাবিক রক্তপাত ছাড়াও এক্ষেত্রে আরো যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলোঃ
- মাথাঘোরা
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি
- ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া
- হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া
- চামড়া ফ্যাকাশে দেখায়
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা তা বোঝার একটি সহজ উপায় হলো প্রতি ২ ঘন্টার কম সময়ে প্যাড পরিবর্তন করার প্রয়োজন হওয়া। এছাড়াও ক্যালেন্ডারে দাগ কেটে কয়দিন পর পর কতদিন মেয়াদে পিরিয়ড হচ্ছে সেটার হিসাব রাখতে পারেন। হঠাৎ কোনো মাসে একটু বেশি ব্লিডিং হলে চিন্তার কিছু নেই কারণ শরীরে প্রতিনিয়ত হরমোনের পরিবর্তন হয় আর যার ফলে এমনটি হতে পারে। তবে একটানা ৩ মাস ধরে এমন সমস্যা হলে অথবা মাঝে মধ্যেই অস্বাভাবিক পিরিয়ড দেখা গেলে সেক্ষেত্রে একজন গাইনী ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
পিরিয়ড বেশি হলে করণীয়
পিরিয়ড বেশি হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের নিমিত্তে সর্বপ্রথম একজন চিকিৎসকের নির্দেশনা মোতাবেক কতিপয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সাধারণত এক্ষেত্রে যেসব পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে তা হলোঃ
- শারীরিক পর্যবেক্ষণ
- প্যাপ টেস্ট (Pap test)
- রক্ত পরীক্ষা (CBC)
- প্রেগন্যান্সি টেস্ট
- থাইরয়েডের টেস্ট
- আল্ট্রাসনোগ্রাফি
- বায়োপসি
পরীক্ষার মাধ্যমে যে কারণ নির্ণয় হবে সেই মোতাবেক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। যেমনঃ
- হরমোন জনিত অস্বাভাবিকতার ক্ষেত্রে হরমোন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ
- ইনফেকশন হলে এন্টি বায়োটিক
- জরায়ুতে টিউমার বা সিস্ট থাকলে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে
- এছাড়াও পিরিয়ডের সময় ব্যথা থাকলে আইবুপ্রোফেন সেবন করা যেতে পারে।
পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা যায়। আর তাই বেশি বেশি পিরিয়ড হলে তাদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা দূর করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বেশি পরিমাণে আয়রন রয়েছে এমন খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গরু ও মুরগির কলিজা, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, সব রকমের ডাল, বাদাম, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, পালংশাক, কচু শাক, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কিসমিস, খেজুর, আখরোট ইত্যাদি। এছাড়াও রক্তস্বল্পতা খুব তীব্র প্রকৃতির হলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক আয়রন বড়ি সেবন করতে হবে।
অস্বাভাবিক রক্তপাত জনিত এই রোগটি প্রতিরোধ করা যায় না। তবে কতিপয় নিয়ম মেনে চললে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যেমনঃ শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, যৌন বাহিত রোগ যেন না হয় সেই জন্য অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকা, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করা ইত্যাদি।
References
Cleveland Clinic. (2021, November 11). Abnormal Uterine Bleeding. Retrieved from Cleveland Clinic:
https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/15428-uterine-bleeding-abnormal-uterine-bleeding
Last Updated on April 15, 2023
Leave A Comment