কিডনি (Kidney) মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম যা প্রতিনিয়ত রক্ত পরিশোধন করে থাকে। নানাবিধ সমস্যার কারণে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটতে পারে যাকে কিডনি ফেইলিউর (Kidney failure) নামে অভিহিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) এর তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৯০ শতাংশ কিডনি ফেইলিউর এর রোগী কোনো লক্ষণ বুঝতে সক্ষম হয় না। অর্থাৎ রোগীর অজান্তেই কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। (Yetman, 2021)
এই পর্যায়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, লক্ষণই যদি প্রকাশ না পায় তাহলে কিভাবে কিডনি ফেইলিউর এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব? কিডনি ফেইলিউর এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে যথাযথ জ্ঞান থাকা ও সচেতন হওয়া জরুরি। এই অনুচ্ছেদে আমরা আলোচনা করবো কিডনি ফেইলিউর এর কারণ, লক্ষণ, পর্যায় ও পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়ে। সেই সাথে অনুচ্ছেদের শেষের দিকে রয়েছে কিভাবে কিডনি ভালো রাখা যায় সেই ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS of UK) প্রদত্ত বিশেষ নির্দেশনা।
Table of Contents
কিডনি ফেইলিউর কি?
কিডনি ফেইলিউর সম্পর্কে জানার পূর্বে কিডনি কি এবং কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। মানুষের শরীরের পাঁচটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ (Vital organs) অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। মানুষের শরীরে ২ টি কিডনি রয়েছে যা কোমরের অংশে মেরুদন্ডের দুই পাশে অবস্থিত। বাম কিডনির অবস্থান ডান কিডনি থেকে সামান্য উপরের দিকে এবং সেই সাথে ডান কিডনির আকার বাম কিডনির তুলনায় সামান্য ছোট।
শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনুযায়ী প্রতিনিয়ত রক্ত কিডনিতে প্রবেশ করে এবং পরিশোধন হয়। এই প্রক্রিয়ায় কিডনিতে ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তের মধ্যে থাকা শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় পানি ও ক্ষতিকর উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এতে করে শরীর থেকে যেমন বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায় তেমনি শরীরে পানি, এসিড ও খনিজ (Minerals) উপাদানের ভারসাম্য বজায় থাকে।
কোনো কারণবশত যখন কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম অর্থাৎ রক্ত পরিশোধন করতে ব্যর্থ হয় তখন শরীরের রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ জমা হতে থাকে। কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমের এই ব্যর্থতাকে মেডিক্যালের ভাষায় কিডনি ফেইলিউর (Kidney failure or, renal failure) বলা হয়। সাধারণত কিডনির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অকেজো হয়ে গেলে তখন কিডনি রক্ত পরিশোধন করতে ব্যর্থ হয়। আর রক্তে এই অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ জমা হয়ে রক্তের মধ্যকার উপাদান সমূহের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে।
কিডনি ফেইলিউর এর কারণ কি?
কিডনি ফেইলিউর এর যেমন নানাবিধ কারণ (Cause) রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর (Risk factors) বা ঝুঁকির কারণ। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুযায়ী কিডনি ফেইলিউর হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে। (Yetman, 2021) এছাড়াও এই তালিকায় আরো রয়েছে:
- পারিবারিক কিডনি রোগের ইতিহাস
- ৬০ বছরের বেশি বয়স্করা
- হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
- স্থূলতা (Obesity)
- ধুমপান ইত্যাদি
মোটাদাগে শারীরবৃত্তীয় দুইটি সমস্যার দরুন কিডনি ফেইলিউর হয়ে থাকে। যেমন: কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া এবং প্রস্রাব নিঃসরণে সমস্যা। তবে এর বাইরেও অন্যান্য আরো কিছু কারণ রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে নিচে তুলে ধরা হয়েছে।
কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া
কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে রক্ত পরিশোধন কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটে যা কিডনি ফেইলিউর এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নানাবিধ কারণে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে। যেমন:
- হার্টের রোগ
- লিভারের রোগ
- ইনফেকশন (Infection)
- এলার্জি (Allergic reaction)
- উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা
- বেশি বেশি প্রদাহ নাশক ওষুধ খাওয়া
- ডায়রিয়া, বমি অথবা কম পরিমাণে পানি পান করার ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা (Dehydration) ইত্যাদি
উল্লেখ্য উচ্চ রক্তচাপ যেমন কিডনি ফেইলিউর এর ঝুঁকি বাড়ায় তেমনি ভাবে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করার ফলে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায় যা কিডনি ফেইলিউর এর একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
প্রস্রাব নিঃসরণে সমস্যা
শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনুযায়ী কিডনিতে প্রস্রাব উৎপন্ন হয়ে তা মূত্রথলিতে জমা হয় যা পরবর্তীতে মূত্রনালীর (Urethra) মাধ্যমে বাইরে বের হয়ে যায়। কোনো কারণবশত এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটলে তখন কিডনির উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং রক্ত পরিশোধন কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটে। যে সমস্ত বিষয়গুলো প্রস্রাব নিঃসরণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার (Prostate cancer)
- কিডনিতে পাথর (Kidney Stones)
- জরায়ু, মূত্রথলি ও কোলন ক্যান্সার
- মূত্রনালী সরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি
উল্লেখ্য পুরুষের ক্ষেত্রে যে সমস্ত ক্যান্সার অধিক হারে হতে দেখা যায় তার মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সার অন্যতম। এই প্রস্টেট ক্যান্সার আবার কিডনি ফেইলিউর এর কারণ হতে পারে।
আর তাই কিভাবে প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় সে ব্যাপারে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
অন্যান্য: কিডনি ফেইলিউর এর অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
- ফরমালিন ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা
- অধিক পরিমাণে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা
- এন্টি বায়োটিক ওষুধের অযাচিত ব্যবহার
- মদ্যপানের অভ্যাস ইত্যাদি
কিডনি ফেইলিউর এর লক্ষণগুলি কী কী?
কিডনি ফেইলিউর এর পর্যায় (Stages) ও ব্যক্তি ভেদে কিডনি ফেইলিউর এর লক্ষণের ক্ষেত্রে পার্থক্য হতে পারে। তবে সার্বিক ভাবে যে সমস্ত লক্ষণাবলী দেখা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
- রাতের বেলায় ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া
- পা ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া
- বুকে ব্যথা ও অস্বাভাবিক চাপবোধ
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ (Fatigue)
- বমি বমি ভাব ও বমি
- ক্ষুধামন্দা (Loss of appetite) দেখা যায়
- ঘুমের সমস্যা হয় (Trouble sleeping)
- খিঁচুনি (Seizure) হতে পারে ইত্যাদি
কিডনি ফেইলিউর এর উপসর্গ নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানাবিধ ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন: কোমর ব্যথা (Back pain) হলেই মানুষ মনে করে থাকেন যে কিডনিতে সমস্যা হয়েছে। মনে রাখবেন কোমর ব্যথা মানেই কিডনির সমস্যা নয় বরং প্রায় ক্ষেত্রেই তা হয়ে থাকে আঘাত জনিত অথবা কোমরের হাড় ক্ষয়ে যাওয়া (Osteoporosis) বা বেড়ে যাওয়ার (Osteophytes) দরুন। তবে কিডনিতে পাথর বা ইনফেকশন জনিত কিডনি ফেইলিউর এর ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও কিডনি ফেইলিউর এর শেষ পর্যায়ের উপসর্গ হিসেবে কোমর ব্যথা দেখা যেতে পারে।
কিডনি ফেইলিউর এর প্রাথমিক লক্ষণ কি কি?
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে কিডনি ফেইলিউর এর প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ক্ষেত্রেই তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে আর তখন একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সিদ্ধান্ত হলো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া। কিডনি ফেইলিউর এর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ:
- কোনো কারণ ছাড়াই শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ
- বমি বমি ভাব অথবা বমি
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
- চোখের পাতা ও মুখ মন্ডল ফুলে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি
নোটঃ প্রকৃতপক্ষে কিডনি ফেইলিউর এর প্রাথমিক লক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে পার্থক্য হতে পারে। আর তাই কারো কারো বেলায় প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট দেখা যেতে পারে। আবার কিডনি ফেইলিউর এর শেষ পর্যায়ের লক্ষণ হিসেবেও শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। অর্থাৎ একই লক্ষণ দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে।
বিভিন্ন সাধারণ সমস্যার (যেমন: ডায়রিয়া, বমি, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি) ক্ষেত্রেও অনেক সময় চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা (Serum creatinine) করানোর নির্দেশনা দিয়ে থাকেন যা সাধারণ মানুষের কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। অনেকেই মনে করে থাকেন যে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির জন্য হয়তোবা চিকিৎসকেরা এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বস্তুত এই ধারণা সম্পূর্ণ রূপে ভুল। কিডনি সংক্রান্ত কোনো লক্ষণ ব্যতীত এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য হলো প্রাথমিক অবস্থায় কিডনির সমস্যা নিরুপন করা যা সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
কিডনি ফেইলিউর এর ইউরিন কালার
কিডনি হলো রক্ত পরিশোধন ও প্রস্রাব উৎপাদনকারী একটি অঙ্গ আর তাই কিডনি ফেইলিউর সহ কিডনির যে কোনো সমস্যা বা রোগের ক্ষেত্রে প্রস্রাব (Urine) এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত প্রস্রাবের রং দেখে কিডনির অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রস্রাবের রং (urine color) এর সাথে কিডনির সমস্যা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
- প্রস্রাব সাদা বা হালকা হলুদাভ হলে তা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি কিডনির সুস্থতা ও শরীরে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে তা ইঙ্গিত করে
- গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব শরীরে পানির ঘাটতিকে (Dehydration) নির্দেশ করে। এমতাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত
- কমলা রঙের প্রস্রাব সাধারণত কিডনির সমস্যাকে নির্দেশ করে না। বরং তা প্রস্রাবে পিত্তরসের (Bile) উপস্থিতির দরুন হয়ে থাকে যা লিভারের সমস্যাকে নির্দেশ করে
- প্রস্রাবের সাথে রক্তের উপস্থিতি প্রস্রাবের বর্ণ লাল করে ফেলে যা কিডনির সমস্যার দরুন হতে পারে। আর এমতাবস্থায় প্রস্রাব পরীক্ষা করানো উচিত
- প্রস্রাবে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিনের উপস্থিতি অধিক ফেনা যুক্ত প্রস্রাব সৃষ্টি করে থাকে যা কিডনি রোগের সংকেত বহন করে
কিডনি ফেইলিউর এ কি কি টেস্ট করা হয়?
কিডনি ফেইলিউর ও কিডনির অবস্থা সম্পর্কে জানতে সাধারণত যে সমস্ত ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা সমূহ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
Serum Creatinine: কিডনির অবস্থা সম্পর্কে জানতে ও কিডনি ফেইলিউর নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও কার্যকরী পরীক্ষা হলো Serum Creatinine বা ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে রক্ত (Blood) নেওয়া হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা হলো পুরুষদের জন্য ০.৯ থেকে ১.৩ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (0.9-1.3 mg/dL) এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ০.৬ থেকে ১.১ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (0.6-1.1 mg/dL)
প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine R/E): নমুনা হিসেবে প্রস্রাব সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্রাবের মধ্যে থাকা উপাদান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়। প্রস্রাবের মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো উপাদানের (Albumin, sugar, pus cell, sediment, white blood cell etc.) উপস্থিতি থাকলে তা কিডনির সমস্যাকে ইঙ্গিত করে।
রক্ত পরীক্ষা: নমুনা হিসেবে রক্ত সংগ্রহ করে তার মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। যেমন: ইউরিয়া (Blood urea nitrogen), ইউরিক এসিড (uric acid), অতিরিক্ত পরিমাণে ESR (erythrocyte sedimentation rate), অতিরিক্ত শ্বেত রক্ত কণিকা (WBC- white blood cell) ইত্যাদি কিডনির সমস্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।
এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি (X-ray & Ultrasonography: কিডনিতে পাথর রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা সহ মূত্রনালী, মূত্রথলি ও প্রস্টেট গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের জন্য কোমরের দিকে এক্সরে (X-ray of KUB) ও পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি (USG of Abdomen) করা হয়। এছাড়াও ক্ষেত্রে বিশেষে সিটি স্ক্যান (CT scan) ও এমআরআই (MRI) করার প্রয়োজন হতে পারে।
৫ ধরণের কিডনি ফেইলিউর
কিডনি ফেইলিউর এর প্রধানত দুইটি ধরন বা প্রকরণ রয়েছে। যথা:
Acute kidney failure: এই ধরনের কিডনি ফেইলিউর হঠাৎ করে হয়ে থাকে এবং দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে।
Chronic kidney failure (CKD): এক্ষেত্রে ধীর গতিতে শরীরের মধ্যে অস্বাভাবিকতার দরুন কিডনি বিকল হতে থাকে এবং প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
Acute Kidney Disease এবং chronic kidney disease এর মধ্যকার পার্থক্য সমূহ নিচে ছক আকারে তুলে ধরা হলো:
Acute kidney disease | Chronic kidney disease (CKD) |
দ্রুত সংক্রমণ হয় | ধীরে ধীরে সংক্রমণ হয়ে থাকে |
সাধারণত দুর্ঘটনা, ইনফেকশন, ওষুধের বিষক্রিয়া ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে | সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ফলে হয়ে থাকে |
Acute kidney failure এ রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে | রেগুলার ফলোআপ এ থাকলে প্রাথমিক লক্ষণ অনুযায়ী এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা সম্ভব। তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না |
দ্রুত চিকিৎসা নিলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে থাকে | চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী ভালো থাকে তবে সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হয় না |
মোটের উপর কিডনি ফেইলিউর এর পাঁচটি প্রকরণ (5 typys) রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন:
- Acute prerenal kidney failure: হঠাৎ করে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার দরুন এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে
- Acute intrinsic kidney failure: কিডনিতে আঘাত বা কিডনির অভ্যন্তরীণ রক্তনালীর সমস্যার দরুন এই ধরনের কিডনি ফেইলিউর হয়ে থাকে
- Chronic prerenal kidney failure: দীর্ঘদিন যাবত কিডনিতে রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যার দরুন এই ধরনের কিডনি ফেইলিউর হয়ে থাকে। যেমন: দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা
- Chronic intrinsic kidney failure: দীর্ঘদিন যাবত কিডনিতে প্রদাহ বা ইনফেকশনের দরুন এই ধরনের কিডনি ফেইলিউর হয়ে থাকে
- Chronic post-renal kidney failure: প্রস্রাব নিঃসরণে খানিকটা বাঁধার দরুন এই ধরণের কিডনি ফেইলিউর হয়ে থাকে। যেমন: প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার
কিডনি ফেইলিউর এর স্টেজ সমূহ?
কিডনি ফেইলিউর এর স্টেজ (Stage) বা পর্যায় নির্ণয় করা হয় eGFR (estimated glomerular filtration rate) এর মান অনুযায়ী। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে খুব সহজেই eGFR জানা যায় যা রক্তের ক্রিয়েটিনিন, বয়স, শরীরের ওজন ও লিঙ্গের (Gender) উপর ভিত্তি করে হিসাব করে বের করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুযায়ী কিডনি ফেইলিউর এর ৫ টি পর্যায় রয়েছে যার ৩য় পর্যায়ের আবার দুইটি প্রকরণ রয়েছে যা নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। (National Kidney Foundation, 2021)
স্টেজ ১ (Stage 1): eGFR এর মান ৯০ বা তার বেশি হলে তা খুবই কম মাত্রার কিডনি সমস্যাকে নির্দেশ করে। এমতাবস্থায় কোনো লক্ষণ দেখা যায় না এবং কোনো চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। এই পর্যায়ে শুধুমাত্র জীবন যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।
স্টেজ ২ (Stage 2): eGFR এর মান ৬০ থেকে ৮৯ হলে তা মৃদু প্রকৃতির সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ে তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা (Follow up) করানো উচিত। সেই সাথে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা জরুরি।
স্টেজ ৩ এ (Stage 3a): eGFR এর মান ৪৫ থেকে ৫৯ হলে তা মৃদু থেকে মাঝারি প্রকৃতির কিডনি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ে নানাবিধ অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়। যেমন: ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, কোমর ব্যথা, হাত পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি
স্টেজ ৩ বি (Stage 3b): eGFR এর মান ৪৪ থেকে ৩০ হলে মাঝারি থেকে জটিল প্রকৃতির কিডনি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ের ক্ষেত্রেও স্টেজ 3a এর মতো নানাবিধ অস্বাভাবিক লক্ষণাবলী দেখা যায়। এমতাবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
স্টেজ ৪ (Stage 4): eGFR এর মান ২৯ থেকে ১৫ হলে তা জটিলতর কিডনির সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ে কিডনির খুব সামান্য অংশই স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে তবে ডায়ালাইসিস (Dialysis) এর প্রয়োজন হয় না।
স্টেজ ৫ (Stage 5): eGFR এর মান ১৫ এর নিচে হলে তা কিডনি ফেইলিউর এর চরম পর্যায়কে নির্দেশ করে যেখানে বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস (Dialysis) করানো জরুরি হয়ে পড়ে। এই পর্যায়ের লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় শ্বাসকষ্ট, বমি, চুলকানি ইত্যাদি।
কিডনি ফেইলিউর এর চিকিৎসা
কিডনি ফেইলিউর এর নানাবিধ চিকিৎসা (Treatment) পদ্ধতি রয়েছে যা কিডনি ফেইলিউর এর কারণ ও পর্যায়ের উপর নির্ভর করে। নিচে কিডনি ফেইলিউর এর চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন: প্রথমেই আসে নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের কথা যার মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কিডনি ফেইলিউর এর রোগী সুস্থতার সাথে বেঁচে থাকতে পারে। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন পদ্ধতি বলতে ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা সহ পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো বা সিঁড়ি বেয়ে উঠা ইত্যাদি উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রায় ওষুধ সেবন করতে হবে এবং এন্টি বায়োটিক ওষুধ সেবনের বেলায় অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস: প্রাত্যহিক খাবার গ্রহণের ব্যাপারে পুষ্টিবিদের নির্দেশনার পাশাপাশি একজন কিডনি ফেইলিউর এর রোগীর জন্য কিছু খাবার বর্জন করার ব্যাপারেও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বেশি রয়েছে এমন খাবার গুলো কম খাওয়া উচিত। যেমন: খাবার লবণ, ডাবের পানি, অ্যাভোকাডো, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কলা, আলু, মিষ্টি আলু, টমেটো, শিমের বিচি, বাদাম, পালং শাক ইত্যাদি
- ফসফরাস বেশি রয়েছে এমন খাবার যেমন: ডার্ক চকোলেট, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, বাদামী চালের ভাত ইত্যাদি কম খেতে হবে
- চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে
সাধারণত কিডনির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অকেজো হয়ে গেলে অর্থাৎ চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের কিডনি ফেইলিউর এর রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে ডায়ালাইসিস (Dialysis) ও কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা যে বিষয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
ডায়ালাইসিস (Dialysis): চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের কিডনি ফেইলিউর এর রোগীদের জন্য চিকিৎসা হিসেবে রয়েছে ডায়ালাইসিস যা রোগীকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। মূলত এটি কিডনি ফেইলিউর এর প্রতিকারমূলক কোনো চিকিৎসা নয়, বরং কিডনি রক্ত পরিশোধন করতে পারে না বিধায় বাইরে থেকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত পরিশোধন করা হয়ে থাকে। এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া যা একজন পঞ্চম পর্যায়ের কিডনি ফেইলিউর রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত করানোর প্রয়োজন পড়ে।
কিডনি প্রতিস্থাপন (Kidney transplant): ডায়ালাইসিসের বিকল্প হিসেবে কিডনি প্রতিস্থাপন চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে একজন কিডনি ডোনারের প্রয়োজন পড়ে যার শরীর থেকে একটি সুস্থ কিডনি নিয়ে কিডনি ফেইলিউর এর রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে এটি একটি জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের (Nephrologist) সাথে যথাযথ পরামর্শের পর এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে কিডনি ফেইলিউর এর চিকিৎসা
বাংলাদেশে কিডনি ফেইলিউর এর যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা রয়েছে। প্রায় প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ (Nephrologist) চিকিৎসক রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা।
এছাড়াও কিডনি রোগীদের বিশেষ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে রয়েছে বিশেষ হাসপাতাল যা “কিডনী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” নামে পরিচিত। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল মিরপুর-২, ঢাকায় অবস্থিত যেখানে কিডনি সংক্রান্ত সকল রোগের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কিডনি ফেইলিউর রোগী কতদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে?
কিডনি ফেইলিউর এর একজন রোগী কতদিন বেঁচে থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে বলা খুবই কঠিন। তবে কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়। যেমন: বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেই সাথে রোগী কিডনি ফেইলিউর এর কোন পর্যায়ে (Stage) রয়েছে তার উপর চিকিৎসার সফলতাও বেঁচে থাকা নির্ভর করে। এর পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune system) ও নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুযায়ী একজন কিডনি রোগী যিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে থাকেন তার পরবর্তী ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্তও। তবে এর জন্য প্রয়োজন নিয়ম মেনে ডায়ালাইলিস করানো। কারণ নিয়মমাফিক ডায়ালাইসিস করানো না হলে তা বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে দেয়। (Yetman, 2021)
উল্লেখ্য কিডনি ফেইলিউর এর যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে জটিলতা হিসেবে দেখা যেতে পারে নানাবিধ সমস্যা। যেমন: রক্তস্বল্পতা (Anemia), হার্টের রোগ, হার্ট ফেইলিউর, কিডনিতে পাথর, বাত (Gout), বিষন্নতা ইত্যাদি। সেই সাথে সর্বশেষ পরিণতি হিসেবে হতে পারে অকাল মৃত্যু যা কারোরই কাম্য নয়।
ডায়াবেটিস এবং কিডনি ফেইলিউর
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজ এর তথ্য অনুযায়ী ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ রোগীদের ক্ষেত্রে কিডনি সমস্যা রয়েছে। অর্থাৎ টাইপ-১ এবং টাইপ-২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিসের সাথেই কিডনি ফেইলিউর এর বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। ডায়াবেটিস জনিত কিডনির সমস্যাকে মেডিকেলের ভাষায় Diabetic nephropathy বলা হয়।
অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার তথা ডায়াবেটিস কিডনিকে অকেজো করে দেয় আর তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়াবেটিসের ওষুধ অথবা ইনসুলিন গ্রহণের মাধ্যমে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এর পাশাপাশি একজন পুষ্টিবিদের (Dietitian) পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise) করা দীর্ঘজীবন লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
কিডনি ফেইলিউর এবং এলকোহল
এলকোহল (Alcohol) বা মদ্যপানের অভ্যাস যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি ভাবে তা কিডনির জন্যেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং কিডনি ফেইলিউর এর জটিলতা বৃদ্ধি করে। মদ্যপানের অভ্যাস কিডনির ছাঁকন প্রক্রিয়ায় (filtering) বিঘ্ন ঘটায় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি বের করে দেয়। এতে করে শরীরে পানির ঘাটতি হয় এবং কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে (Function of the cells) ব্যঘাত ঘটে। এছাড়াও এলকোহল সেবনের ফলে রক্ত চাপ (Blood Pressure) বেড়ে যায় আর উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ উভয়ই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আর তাই মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা অতিসত্বর পরিত্যাগ করা জরুরি।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কোমল পানীয় (Carbonated beverages) বা সফট ড্রিংকস যা বর্তমানে অধিক হারে পান করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিশেষত তা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই কোমল পানীয় পানের অভ্যাস বর্জন করা উচিত।
কিডনি ফেইলিউর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
কিডনি ফেইলিউর প্রতিরোধ করতে তথা কিডনি ভালো রাখার জন্য করণীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS of UK) এর দেওয়া নির্দেশনা সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো। (NHS, 2019)
- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- ধুমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে (Stop smoking)
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবারের মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি ও লবণের পরিমাণ কম থাকা উচিত
- মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা জরুরি
- দৈনিক ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় মৃদু প্রকৃতির ব্যায়াম করা উচিত
- যত্রতত্র ব্যথা নাশক ওষুধ যেমন: NSAID (non steroidal anti-inflammatory drugs), Aspirin, Ibuprofen ইত্যাদি সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে
- চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতীত এন্টি বায়োটিক ওষুধ সেবন করা যাবে না
উল্লেখ্য পানি পান করার ব্যাপারে অনেকের মধ্যেই একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন: যত বেশি পানি পান করা যাবে কিডনি তত ভালো থাকবে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। পানি পান করা কিডনি ও শরীরের জন্য উপকারী তবে তা অবশ্যই পরিমাণ মতো।
কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি পান করা হলে তা পরিশোধনের জন্য কিডনির উপর অধিক চাপ পড়ে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে পানি পান করা হলে তা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা হলে তা যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়।
কিডনি ফেইলিউর একটি জটিলতর সমস্যা তবে এই রোগের জন্য রয়েছে কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা। এমনকি আমাদের দেশেও এই রোগের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে তবে ঘাটতি রয়েছে কিডনি রোগ বিষয়ক সঠিক ও সচেতনতার যা একটি বড়ো সমস্যা। কিডনি রোগ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিবছর মার্চ মাসের ২য় বৃহস্পতিবার “বিশ্ব কিডনি দিবস” পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যক্তিগত ভাবে কিডনি রোগ বিষয়ে আমাদের সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত।
References
National Kidney Foundation. (2021, September 23). Estimated Glomerular Filtration Rate (eGFR). Retrieved from National Kidney Foundation: https://www.kidney.org/atoz/content/gfr
NHS. (2019, August 29). Chronic kidney disease – Prevention. Retrieved from National Health Service: https://www.nhs.uk/conditions/kidney-disease/prevention/
Yetman, D. (2021, November 22). Everything You Need to Know About Kidney Failure. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/kidney-failure
Last Updated on April 15, 2023
Leave A Comment