উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) কে নীরব ঘাতক ব্যাধি বলা হয় কারণ এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। উপরন্তু উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি রয়েছে যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকার জন্য যেমন নিয়মিত ওষুধ সেবন করা জরুরি তেমনিভাবে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সঠিক সময় মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে সেই বিষয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকরী উপায় সমূহ এবং শীতকালে কিভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেই ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন (blood pressure) কি?

প্রথমেই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া জরুরি। মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি কোষে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য হৃদপিন্ড (Heart) অনবরত রক্ত পাম্প করে চলেছে। রক্ত চলাচলের সময় রক্ত নালীর গাত্রে যে চাপের সৃষ্টি হয় তাকেই রক্তচাপ (Blood Pressure) বলা হয়। রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদচাপ (120/80 mmHg) এর নিচে থাকলে তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হবে।

রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বিশেষত ১৩০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি হলে তাকে প্রাথমিক পর্যায়ের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। এই পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না তবে ক্ষেত্রবিশেষে মাথা ব্যথা (Headache) হতে পারে বিশেষত মাথার পেছনের দিকের অংশে তীব্র ব্যথা হয়। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন ও ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

তবে রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদচাপ ছাড়িয়ে যায় তখন তা দ্বিতীয় স্তরের উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।‌ এই পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি?

Treatment of hypertension

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন:

  • প্রেশার মাপা
  • ECG (Electrocardiogram)
  • Lipid profile (Cholesterol screening)
  • রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমত চিকিৎসক গণ নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন যা এই অনুচ্ছেদের শেষের দিকে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসার উপকরণ হিসেবে যে সমস্ত গ্রুপের ওষুধ গুলো নির্দেশিত হয়ে থাকে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • আলফা ও বিটা ব্লকার ওষুধ
  • ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার ওষুধ
  • Diuretics (thiazides, chlorthalidone, indapamide etc.)
  • ACE inhibitors (ACE – angiotensin converting enzyme)
  • Angiotensin II receptor blockers

কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন ধরনের ওষুধ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ও নিরাপদ হবে তা একজন চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে থাকে। সাধারণত একজন চিকিৎসক প্রাথমিক পর্যায়ে কম মাত্রায় ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন তবে ক্ষেত্র বিশেষে একাধিক গ্রুপের ওষুধ একসাথে সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে।

ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সময় মেনে চলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সময় মেনে চলা কেন গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো মানুষের শরীর একটি সুনির্দিষ্ট ছন্দ অনুযায়ী চলে যা বিজ্ঞানীরা দেহ ঘড়ি (Biological clock) নামে আখ্যায়িত করেছেন। (Simon, 2013) আর তাছাড়া ওষুধের মাত্রা (Dose) ঠিক রাখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে ওষুধ সেবন করা জরুরি।

এছাড়াও প্রত্যেকটি ওষুধ একটি সুনির্দিষ্ট সময় ধরে শরীরের মধ্যে কাজ করে থাকে আর তখন পুনরায় ঐ ওষুধ সেবন করা হলে তা ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রা হিসেবে যোগ হয়ে শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি ভাবে ওষুধের ধরন ও রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধ সেবনের সময় বিষয়ে বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন: অধিকাংশ এসিডিটির ওষুধ খালি পেটে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে আবার প্যারাসিটামল ও এন্টি-বায়োটিক সহ অন্যান্য প্রায় সকল ওষুধ ভরা পেটে সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

রোগ ভেদে পার্থক্য যেমন অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার ওষুধ শুধুমাত্র রাতের বেলা সেবনে কার্যকরী হয়, তেমনি ভাবে জন্মনিরোধক বড়ি (Especially for emergency contraceptive pill) সকালে খেলে তা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের বেলাতেও সময় সম্পর্কিত গবেষণালব্ধ কিছু বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো।

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের সময় কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের AARP (American Association of Retired Persons) এর তথ্য অনুযায়ী রক্তচাপ একটি বিশেষ ছন্দ (Daily rhythm) মেনে চলে। অর্থাৎ দিনের বেলায় রক্তচাপ বেশি থাকে কিন্তু রাতের বেলায় তুলনামূলক কম থাকে। শরীরের স্বাভাবিক ছন্দের ত্রুটির দরুন রাতের বেলায় রক্তচাপ কমে না গেলে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় non-dipping blood pressure বলা হয়। সাধারণত ৫৫ বছর বয়সের বেশি মানুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের প্রফেসর মাইকেল স্মোলেনস্কি (Michael Smolensky) এর মতে দিনের সব সময়েই সব ওষুধ ভালো কাজ করতে সক্ষম হয় না। বরং একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ সেবন করা হলে তা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে। (Simon, 2013) অধিকাংশ মানুষ প্রায় সব ধরনের ওষুধ সকাল বেলায় সেবন করতে পছন্দ করেন কারণ সকাল বেলায় ওষুধ খাওয়ার কথা মনে থাকে ভালো। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সমস্ত ওষুধ শুধুমাত্র দিনে একবার সেবন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে তার অধিকাংশ ওষুধই রাতের বেলায় সেবন করা উত্তম। (Simon, 2013)

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় ওষুধ সেবনের জন্য সঠিক সময় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। বিশেষত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত কারণ সঠিক সময়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা না হলে উচ্চ রক্তচাপ অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাছাড়া সঠিক সময়ে ওষুধ সেবন করা হলে তা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে এবং সেই সাথে তুলনামূলক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

উল্লেখ্য উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে যেমন সময় গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ভাবে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারেও বিশেষ নির্দেশনা প্রয়োজন। কখনোই নিজে থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বন্ধ করা বা পরিবর্তন করা যাবে না বরং সমস্যা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগীর প্রেসার মাপা সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি চিকিৎসক মনে করেন যে ওষুধ বন্ধ রাখলে ক্ষতি হবে না তাহলেই শুধুমাত্র ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে। অন্যথায় নিজে থেকে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিলে তা হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কোন সময় সেবন করা বেশি কার্যকর?

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের সময় কেন গুরুত্বপূর্ণ

এই পর্যায়ে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে তাহলে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের জন্য সঠিক সময় কোনটি? এই ব্যাপারে ইউরোপীয় হার্ট জার্নালে বলা হয়েছে যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ রাতের বেলায় সেবন করা উত্তম। কারণ স্প্যানিশ এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত মানুষ দিনের বেলায় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন তাদের তুলনায় যারা রাতের বেলায় ওষুধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকল বা স্ট্রোকের মাধ্যমে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেক কমে যায়। (Simon, 2013)

এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে সমস্ত মানুষদের ক্ষেত্রে non dipping blood pressure রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে রাতের বেলায় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে রাতের বেলায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। আর তাই এক্ষেত্রে রাতের বেলায় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা হলে তা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। সাধারণত রাতের বেলায় সেবনের জন্য ACE inhibitors অথবা angiotensin II receptor blockers গ্রুপের ওষুধ নির্দেশিত হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য যাদের ক্ষেত্রে দুই বেলা ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সকালে ও রাতে ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে রাতে ওষুধ সেবন করা ভালো মানেই কিন্তু সকালে সেবন করা ক্ষতিকর তা বোঝায় না।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কোলেস্টেরল (Cholesterol) যা উচ্চ রক্তচাপের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। আর তাই প্রায় ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সাথে সাথে চিকিৎসক গণ কোলেস্টেরলের ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন (British Heart Foundation) এর তথ্য মতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের মতোই কোলেস্টেরলের ওষুধ রাতে সেবন করা উত্তম। কারণ কোলেস্টেরল উৎপন্ন হয় লিভারে এবং তা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে রাতের বেলায় এবং কম হয় দিনের বেলায় বিশেষত সকালের দিকে। (Simon, 2013)

তবে এর বাইরে ব্যতিক্রম হিসেবে কারো কারো ক্ষেত্রে ওষুধ সেবন করার সময় ভিন্নতর হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগ ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত সময়ে ওষুধ সেবন করা সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকরী হবে।

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

প্রায় সবধরনের ওষুধের ক্ষেত্রেই উপকারিতার পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় যা মৃদু থেকে মারাত্বক ক্ষতিকর প্রকৃতির হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সমূহের বেলায় যে সমস্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো। (Stuart, 2021)

  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি
  • মাথাব্যথা ও ঝিমুনি (Dizziness)
  • বুকজ্বালা (Heartburn)
  • কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া
  • অনিদ্রা (Insomnia)
  • মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতা
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
  • কাশি‌ ও অ্যাজমার লক্ষণ দেখা দেয়
  • রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় (Anemia)
  • ইরেকটাইল ডিসফাংশন ইত্যাদি

গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনের পূর্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। কারণ কিছু কিছু গ্রুপের ওষুধ রয়েছে (ACE inhibitors or angiotensin II receptor blockers) যা গর্ভাবস্থায় সেবন করা হলে তা গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমতাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ সমূহ সেবন করা নিরাপদ হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে Diuretics এবং বিটা ব্লকার ওষুধ সেবন না করাই উত্তম। (Stuart, 2021) 

উল্লেখ্য উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যেমন পুরুষত্বহীনতা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন সৃষ্টি হতে পারে তেমনি ভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিজেই ইরেকটাইল ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে। ইরেকটাইল ডিসফাংশন স্বাভাবিক যৌন জীবনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জটিলতর একটি সমস্যা।

আর তাই ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

উচ্চ রক্তচাপ কন্ট্রোল করার জন্য আর কি কি করা যেতে পারে?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সেবনের পাশাপাশি আর কি কি করা যেতে পারে সেই বিষয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। (Hecht, 2021)

১। গবেষণায় দেখা গেছে কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন এর নির্দেশনা মতে মৃদু থেকে মাঝারি প্রকৃতির ব্যায়াম দৈনিক ৪০ মিনিট সময় ধরে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত করা উচিত। এমন ধরনের ব্যায়ামের উদাহরণ হলো হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়ি বেয়ে উঠা, বাগান করা ইত্যাদি

২। শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।‌ গবেষণায় বলছে অতিরিক্ত ওজন কমানোর ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়

৩। চিনি ও শর্করা (refined carbs) জাতীয় খাবার কম খেলে তা শরীরের ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই খাবারে চিনি ও শর্করার পরিমাণ কমাতে হবে

৪। অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ (NaCl) খাওয়া যাবে না কারণ লবণের মধ্যে থাকা সোডিয়াম (Na) রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সাথে প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করতে হবে কারণ তাতে বেশি পরিমাণে লবণ থাকে

৫। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খাওয়া উপকারি হতে পারে। তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পটাশিয়াম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। উল্লেখ্য কলা, মিষ্টি আলু, টমেটো, অ্যাভোকাডো, পালং শাক, কমলা লেবু ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে

৬। প্রোটিন হিসেবে বেশি বেশি মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে

৭। গরুর মাংস, মুরগির চামড়া, কলিজা, ডিমের কুসুম তথা সব ধরনের স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্র্যান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমানো উচিত

৮। চা ও কফি পানের অভ্যাস কমাতে হবে এবং সেই সাথে ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত

৯। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে মেডিটেশন বা Yoga সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে

১০। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো জরুরি।

ঘুমের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকার এবং অতিদ্রা দূরীকরমে ৫টি টিপসজানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন

শীতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কি?

গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে (Winter season) রক্তচাপ বেড়ে যায় আর তাই শীতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থাপনা। সেই বিষয়ে জানার পূর্বে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে শীতকালে কেনো রক্তচাপ বেড়ে যায়? শীতকালে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে আর যার ফলে শরীরের রক্তনালী (Blood vessels) সমূহ সংকুচিত হয়ে পড়ে যা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও শীতকালে মানুষের কাজকর্মের প্রতি অনীহা দেখা যায় এবং সেই সাথে লবণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায় যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। (Maher, 2018)

শীতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ কি কি করণীয় রয়েছে সেই বিষয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

  • শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে অবহেলা না করে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম পোশাক পরিধান করতে হবে। বিশেষত বয়স্কদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে কারণ ব্যায়াম শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এবং সেই সাথে রক্তনালী সমূহের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে
  • মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে ‌কারণ মদ্যপানের ফলে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়

এছাড়াও শীতকালীন কিছু কিছু শাকসবজি রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। যেমন: গাজর, মূলা, পালং শাক ইত্যাদি। এই সমস্ত খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম (Potassium) সহ অন্যান্য আরো কিছু উপাদান রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। (Maher, 2018)

উচ্চ রক্তচাপ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় অযোগ্য একটি রোগ যা সারাজীবন ধরে চলতে থাকে। তবে আশার কথা হলো এই যে সঠিক সময়ে ওষুধ সেবন এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়েই সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা যায়। তবে তার জন্য নিজেকে হতে হবে সচেতন আর থাকতে হবে নিয়ম মেনে চলার তৎপরতা। এবং সেই সাথে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই সুনির্দিষ্ট বিধিমালা মেনে চলা জরুরি।

 

 

 

References

Hecht, M. (2021, October 25). 17 Effective Ways to Lower Your Blood Pressure. Retrieved from Healthline: healthline.com/health/high-blood-pressure-hypertension/lower-it-fast#take-prescription-medication

 

Maher, T. (2018, November 22). How to Control High Blood Pressure in winter? Retrieved from KRISHI JAGRAN: krishijagran.com/health-lifestyle/how-to-control-high-blood-pressure-in-winter/?amp=1

 

Simon, N. (2013, December). Timing When to Take Your Daily Medications. Retrieved from AARP: aarp.org/health/drugs-supplements/info-12-2013/timing-of-daily-medications-key.html#quest1

 

Stuart, A. (07, March 2021). Side Effects of High Blood Pressure Medications. Retrieved from WebMD: webmd.com/hypertension-high-blood-pressure/guide/side-effects-high-blood-pressure-medications

Last Updated on May 31, 2023