সারা বিশ্বে চা খুব জনপ্রিয় একটি পানীয় হিসেবে পরিচিত। চায়ের অনেকগুলো ধরন রয়েছে যার মধ্যে দার্জিলিং চা (Darjeeling Tea) হলো অন্যতম।
দার্জিলিং চায়ের বিশেষত্ব হলো মধুময় গন্ধ ও অতুলনীয় স্বাদ। সারা বিশ্বের সকল চা প্রেমী মানুষদের কাছে দার্জিলিং চা মানেই এক অন্যরকম অনুভুতি। আর তাই অন্যান্য চায়ের তুলনায় দার্জিলিং চা অনেক বেশি দামে কিনতেও মানুষজন আপত্তি করে না।
এই অনুচ্ছেদে দার্জিলিং চায়ের পুষ্টিগুণ, ক্যাফেইনের পরিমাণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
দার্জিলিং চা কি?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় খুব ভালো মানের চা উৎপাদন হয়ে থাকে যাকে দার্জিলিং চা বলা হয়। সারা বিশ্বজুড়ে দার্জিলিং চায়ের বেশ কদর রয়েছে। এটি চায়ের শ্যাম্পেন (Champagne of tea) নামেও পরিচিত।
১৮৪১ সালে ব্রিটিশদের হাত ধরে ভারতে দার্জিলিং চায়ের চাষ শুরু হয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দার্জিলিং চা অন্যান্য চায়ের তুলনায় স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৮৭ টি চা বাগানে দার্জিলিং চায়ের চাষ করা হয়। ভারতের চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৭ মিলিয়ন কিলোগ্রাম দার্জিলিং চা উৎপাদন হয়েছে। (Wikipedia, 2023)
বিভিন্ন সুপার শপ ও অনলাইন শপে দার্জিলিং চা কিনতে পাওয়া যায়।
দার্জিলিং চা এবং ব্ল্যাক টি কি একই?
চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস (Camellia sinensis) যা থেকে সকল ধরনের চা তৈরি করা হয়। চা গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের চা হয়ে থাকে। যেমনঃ ব্ল্যাক, গ্রিন, হোয়াইট, ওলোং ও ম্যাচা টি।
দার্জিলিং চা প্রধানত ব্ল্যাক টি হিসেবে তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য ধরনের চা একদম তৈরি করা যায়না বা হয়না তা নয়।
সাধারণ ব্ল্যাক টি এবং দার্জিলিং ব্ল্যাক টি একই প্রকৃতির। তবে চায়ের স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় দার্জিলিং চা তুলনামূলকভাবে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
দার্জিলিং চায়ে কি ক্যাফেইন বিদ্যমান?
সকল ধরনের চায়ে ক্যাফেইন (Caffeine) বিদ্যমান এবং দার্জিলিং চা এর ব্যতিক্রম নয়। চায়ের ধরনভেদে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম-বেশি হয়ে থাকে।
দার্জিলিং ম্যাচা টির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে। প্রতি ১ কাপ (২৪০ মিলিলিটার) ম্যাচা টি থেকে ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে দার্জিলিং গ্রিন টি হলো সবচেয়ে কম ক্যাফেইন সমৃদ্ধ যার প্রতি ১ কাপে ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন রয়েছে। ওলোং ও হোয়াইট টিতে রয়েছে যথাক্রমে ৩৪ ও ২৮ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। (Chamberlain, n.d.)
দার্জিলিং ব্ল্যাক টি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত যার প্রতি ১ কাপে ৪২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন রয়েছে। সাধারণ ব্ল্যাক টির তুলনায় স্বাদে ও গন্ধে দার্জিলিং ব্ল্যাক টি আলাদা হলেও ক্যাফেইনের অনুপাতে কোনো পার্থক্য নেই।
কফি (Coffee) হলো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন সমৃদ্ধ একটি পানীয়। কফির ধরনভেদে প্রতি ১ কাপ (২৪০ মিলিলিটার) কফিতে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে।
কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করা নিরাপদ। চা ও কফি মিলিয়ে দিনে ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা ও শিশুদের জন্য আরো কম মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করতে হবে।
গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্যাফেইনের নিরাপদ মাত্রা হলো দৈনিক ২০০ মিলিগ্রাম, স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ৩০০ মিলিগ্রাম এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০ মিলিগ্রাম। অপ্রাপ্তবয়স্ক বলতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের বোঝানো হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়।
পুষ্টিগুণ
চায়ের নিজস্ব কোনো ক্যালরি নেই এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো (কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার) অনুপস্থিত। তবে চায়ে চিনি মেশানো হলে সেই চিনিতে থাকা ক্যালরি চায়ের হিসেবে যোগ হবে।
উল্লেখ্য ১ চা চামচ চিনিতে প্রায় ১৬ ক্যালরি থাকে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
চায়ের নিজস্ব পুষ্টিগুণ বলতে এতে থাকা ক্যাফেইন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানকে বোঝানো হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। (Snyder, 2021)
হার্টের জন্য উপকারী
দার্জিলিং চা প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগগুলো থেকে বাঁচতে দার্জিলিং চা সহায়তা করতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
দার্জিলিং চায়ের এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
চায়ের এন্টি-অক্সিডেন্ট স্নায়ুতন্ত্র বিশেষ করে মস্তিষ্কের কোষ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং আলজেইমার্স ও পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। চা পান করার ফলে কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায় এবং মন ভালো রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
কাজের ফাঁকে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের সাথে চা পান করা হলে ক্ষুধা নিবারণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে যা ওজন কমানোর পক্ষে সুবিধাজনক। এছাড়াও কোমল পানীয়ের (উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন হয়ে থাকে) পরিবর্তে চা পানের অভ্যাস ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উপকারী হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিয়মিত চা পানের অভ্যাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী ভূমিকা পালন করে।
দার্জিলিং চা তৈরির নিয়ম
দার্জিলিং চা টি ব্যাগ ও পাতা (Loose tea) হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। চা বানানোর জন্য এক কাপ পরিমাণ গরম পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ পরিমাণ পাতা অথবা একটি টি ব্যাগ ব্যবহার করাই যথেষ্ট হবে।
চায়ে পরিমাণমতো চিনি বা মধু যোগ করা যেতে পারে। তবে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চায়ে চিনি বা মধু মেশানো উচিত হবে না। চায়ে লেবু ও আদা যোগ করা যেতে পারে।
এক কাপ চা তৈরিতে তুলনামূলক বেশি পরিমাণে চা পাতা বা একাধিক টি ব্যাগ ব্যবহার করা হলে ক্যাফেইনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও যত বেশি সময় চা পাতা বা টি ব্যাগ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হবে চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ তত বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত পরিমাণে চা পান করা যাবে না। কারণ এতে হজমের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ও বিষন্নতা দেখা দিতে পারে। যাদের রাতে সহজে ঘুম পায় না তাদের জন্য সন্ধ্যার পর চা পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
References
Chamberlain, M. (n.d.). Does Darjeeling Tea Have Caffeine? How Much, Why, and Which Type. Retrieved from Tea How: https://teahow.com/does-darjeeling-tea-have-caffeine-how-much-why-and-which-type/
Snyder, C. (2021, September 08). Is Darjeeling Tea Good for You? Uses, Benefits, and Downsides. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/darjeeling-tea
Wikipedia. (2023, July 8). Darjeeling tea. Retrieved from Wikipedia: https://en.m.wikipedia.org/wiki/Darjeeling_tea
Last Updated on December 23, 2023
Leave A Comment