সর্দি-কাশি বা সাধারণ ঠান্ডা (Common Cold) খুব কমন একটি সমস্যা যা প্রায় সব মানুষের ক্ষেত্রেই কমবেশি হতে দেখা যায়। ১৯৭০ সালে নোবেল বিজয়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানী Linus Pauling তার একটি বইয়ে সর্দি-কাশির প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন সি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করেন
পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে আরো অনেক গবেষণা হয়েছে এবং সর্বসাকুল্যে ভিটামিন সি ঠান্ডার ক্ষেত্রে আসলেই কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানা গেছে সেই বিষয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি খুব সহজলভ্য একটি ভিটামিন যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। ভিটামিন সি এর অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
এই ভিটামিনের ধরন হলো এটি পানিতে দ্রবণীয় অর্থাৎ শরীরে সংরক্ষিত থাকে না। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভিটামিন সি থাকা আবশ্যক।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদা হলো ৯০ মিলিগ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ৭৫ মিলিগ্রাম। তবে গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য তুলনামূলক বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয়। আবার বাচ্চাদের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক কম মাত্রায় প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন সি কীভাবে সর্দি-কাশির তীব্রতা বা প্রকোপ কমায়?
চিকিৎসা বিজ্ঞানী Linus Pauling এর দাবি অনুযায়ী প্রতিদিন ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হলে তা ঠান্ডা-কাশির আক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। কিন্তু তার নির্দেশিত মাত্রা হলো দিনে ১৮০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদার তুলনায় অনেক গুণ বেশী।
সেই সময়টায় অন্য আর কোনো গবেষণায় চিকিৎসা বিজ্ঞানী Linus Pauling এর দাবি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়নি। বরং এতো বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা অযৌক্তিক মনে করা হয়ে থাকে।
২০১৩ সালে বিভিন্ন পেশা ও বয়সের ১১ হাজারের বেশি মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে, দৈনিক চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি (দিনে ২০০ মিলিগ্রাম) পরিমাণে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেও তা ঠান্ডার সংক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। (Gunnars, 2018)
তবে ভিটামিন সি ঠান্ডার লক্ষণ নিরাময় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভিটামিন সি ঠান্ডা প্রতিকারে সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে পড়ে যার ফলে সহজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঠান্ডা হলো ভাইরাস ঘটিত একটি রোগ যা আমাদের দেশে খুবই কমন দেখা যায়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখার মাধ্যমে ঠান্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ব্যাপারে শক্তিশালী কোনো যুক্তি বা গবেষণার ফলাফল না থাকলেও খাবার গ্রহণের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।
অর্থাৎ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, জাম্বুরা, আমলকী, আনারস, পেঁপে, জাম, কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতা, পাকা আম, লিচু, পেয়ারা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, ব্রকলি, টমেটো সহ প্রায় সবধরনের শাকসবজি।
আগুনের তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কাঁচা খেতে পারলে ভালো। ফলমূল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় কিন্তু শাকসবজি রান্না করে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে কিছু কিছু শাকসবজি রয়েছে যেগুলো সালাদ হিসেবে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। যেমনঃ কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতা ও টমেটো।
ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট
শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা মেটানোর জন্য ফলমূল ও শাকসবজি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে না পারলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে যা নিচে উল্লেখিত নামে আমাদের দেশে কিনতে পাওয়া যায়।
- Ascobex®
- Ascorin®
- C-Rich®
- C-Lemon®
- C-Vitera®
- Ceevit®
- Nutrivit-C®
- Vasco®
- Vita-C®
ভিটামিন সি ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় যা মুখে নিয়ে চুষে খেতে হয়। প্রতি পিস ভিটামিন সি ট্যাবলেটের দাম মাত্র ২ টাকা।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রামের ১টি ট্যাবলেট খেতে হবে। তবে যাদের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের জন্য অহেতুক ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত হবে না।
অন্যান্য খাবার এবং টিপস যা ঠান্ডায় সাহায্য করতে পারে
ঠান্ডা সাধারণত ভাইরাস জনিত কারণে হয়ে থাকে। ভাইরাস ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজন এন্টি-ভাইরাল ওষুধ যা পাওয়া যায় না। আবার ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক (Antibiotic) কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। তাই বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যা ঠান্ডা সারাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমনঃ (Felson, 2022)
- ঠান্ডার লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে গরম স্যুপ খাওয়া উপকারী হবে।
- গ্রিন টি পান করা উপকারী হবে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। চায়ের সাথে যদি আদা যোগ করা হয় তাহলে উপকারিতা অনেক গুণে বেড়ে যাবে। তবে চায়ে চিনি মেশানো যাবে না।
- প্রোবায়োটিকস সমৃদ্ধ খাবার ইয়োগার্ট খাওয়া উপকারী হবে। তবে অধিক পরিমাণে চিনি রয়েছে এমন ইয়োগার্ট খাওয়া উচিত নয়।
- কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়ার মাধ্যমে উপকারিতা পাওয়া যাবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
খাবারের পাশাপাশি কতিপয় নিয়ম মেনে চলতে হবে।
- যতটা সম্ভব বিশ্রামে থাকতে হবে
- ধুমপান ও মদ্যপান করা যাবে না
- নাকে সর্দি জমে বন্ধ হয়ে থাকলে কুসুম গরম পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে সেই পানিতে ১টি ন্যাকড়া ভিজিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে
- গলা ব্যথা থাকলে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে হবে
- এলার্জিক বস্তু ও খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে ঠান্ডা প্রতিকারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার মাধ্যমে বিশেষ কোনো উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করে বরং প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
References
Felson, S. (2022, August 16). What to Eat — and Avoid — When You Have a Cold. Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/cold-and-flu/ss/slideshow-foods-cold
Gunnars, K. (2018, April 24). Vitamin C for Colds — Does It Actually Work? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/does-vitamin-c-help-with-colds
Last Updated on November 21, 2023
I was suggested this web site by my cousin. I’m not sure whether this post is written by him as no one else know such detailed about my trouble. You are incredible! Thanks!