ছোট বাচ্চা যথাযথভাবে লালন পালন করা একজন মায়ের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। শিশুর সুস্থতা এবং সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য খাবার, ঘুম এবং যত্ন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এই কাজে একজন মা হিসেবে সঠিক পরিচর্যা বিষয়ক জ্ঞান থাকা জরুরী।
বিশেষত বয়স বৃদ্ধির সাথে শিশুর পরিবর্তন হওয়া এবং পরিবর্তনের কোনটি স্বাভাবিক আর কোনটির জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। এই অনুচ্ছেদে দুই মাস বয়সী শিশু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
১. বয়োবৃদ্ধি বিকাশ
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশুর শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে যার মধ্যে অন্যতম হলো ওজন বেড়ে যাওয়া। একজন ছেলে বাচ্চার জন্য দুই মাস বয়সে শরীরের স্বাভাবিক ওজন হলো ৫.৫ কেজি এবং মেয়েদের জন্য ৫.১ কেজি। এটি একটি গড় হিসেব এবং আপনার বাচ্চার ক্ষেত্রে এর চেয়ে সামান্য কম অথবা বেশি হতে পারে। (Lewis, 2020)
দুই মাস বয়সী শিশুর শরীরের উচ্চতার স্বাভাবিক মাত্রা হলো ছেলে বাচ্চার জন্য ২৩ ইঞ্চি এবং মেয়েদের জন্য ২২.৫ ইঞ্চি। এটিও একটি গড় হিসেব এবং বাচ্চা ভেদে এই হিসেবের তারতম্য দেখা যেতে পারে।
২. মাইলস্টোনগুলি
দুই মাস বয়সে শিশুর কি ধরনের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে সেই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র চারটি মাইলস্টোন বর্ণনা করেছেন যা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ (Centers for Disease Control and Prevention, 2022)
Social/Emotional
- কথা বললে অথবা বিছানা থেকে তুলে কোলে নিলে শান্ত হয়ে যাবে
- শিশুর দিকে এগিয়ে গেলে খুশি হয়
- মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে
- কথা বললে অথবা হাসলে সাথে সাথে শিশুরাও হাসতে থাকে
Language/Communication
- কান্না ছাড়াও বিভিন্ন শব্দ করে
- উচ্চ স্বরে কথা বললে শিশুর মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়
Cognitive
- খেলনার দিকে তাকিয়ে থাকে
- বাচ্চাকে রেখে দূরে সরে গেলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
Movement/Physical Development
- হাত ও পা স্বাচ্ছন্দ্যে নাড়ায়
- মাথা নাড়ায় অথবা উঁচু করে
৩. ঘুম
দুই মাস বয়সী শিশুরা সাধারণত দিনে (২৪ ঘন্টায়) ১৪ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটায়। তবে বাচ্চা ভেদে সময়ের কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
১৪ থেকে ১৭ ঘন্টা একনাগাড়ে ঘুমায় এমন নয়, বরং সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৮ ঘন্টা একটানা ঘুমাতে পারে আর তা হলো রাতের বেলায়।
শিশুর ভালো ঘুমের জন্য ঘরের তাপমাত্রা, আলো এবং বিছানা আরামদায়ক হওয়া জরুরী। সেই সাথে ঘরের মধ্যে উচ্চ স্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত যেন শব্দের কারণে শিশুর ঘুম ভেঙ্গে না যায়।
৪. একটি সাধারণ দিন
দুই মাস বয়সী শিশুর একটি সাধারণ দিনের রুটিন (খাবার গ্রহণ, দিনে ঘুমানো, প্রস্রাব, পায়খানা ইত্যাদি) কেমন হবে সেই বিষয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
- মায়ের বুকের দুধ পান করা শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি ২ থেকে ৪ ঘন্টা পর পর তথা দিনে (২৪ ঘন্টায়) ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বার পর্যন্ত দুধ খেয়ে থাকে। ফর্মুলা মিল্ক খায় এমন শিশুদের জন্য প্রতি ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর পর ১২০ থেকে ১৫০ মিলিলিটার পরিমাণ দুধ খাওয়াতে হবে।
- দুই মাস বয়সী শিশু দিনের বেলায় তিন থেকে চার বার ঘুমাতে পারে। তবে কোনো কোনো বাচ্চার ক্ষেত্রে আরো বেশি বার স্বল্পকালীন ঘুমের অভ্যাস দেখা যায়।
- মায়ের বুকের দুধ পান করে এমন শিশু দিনে ৩-৪ বার পায়খানা করে। তবে যারা ফর্মুলা মিল্ক পান করে তাদের ক্ষেত্রে দিনে ২ বার পায়খানা হয়ে থাকে।
- প্রতি দুই ঘন্টা পর পর অর্থাৎ দিনে ১২ বার প্রস্রাব হয়। সর্বনিম্ন ৬ বারের কম প্রস্রাব হলে বুঝতে হবে যে শিশু ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না।
৫. সাধারণ অসুস্থতা
দুই মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব রোগ খুব কমন হয়ে থাকে তা হলোঃ
সাধারণ ঠান্ডা
শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি শক্তিশালী থাকে না। যার ফলে সহজেই ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই এবং জটিল পরিস্থিতি (শ্বাসকষ্ট) দেখা না দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বরং হালকা গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ খাবার লবণ মিশিয়ে স্যালাইন ড্রপ তৈরি করে ব্যবহারের মাধ্যমে সুফল পাওয়া যাবে।
ব্যবহারের নিয়ম হলো শিশুকে চিৎ করে শুইয়ে ১ মিনিট পর পর কয়েকবার নাকের ভেতর একফোঁটা করে ড্রপ দেওয়া। এই সময়ে শিশুর মাথা একটু উঁচু রাখতে হবে।
ডায়াপার র্যাশ (Diaper Rash)
দীর্ঘসময় পর্যন্ত ভেজা ডায়াপার শিশুকে পড়িয়ে রাখার ফলে শিশুর পাছায় র্যাশ হয় যাকে ডায়াপার র্যাশ বলা হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ঘন ঘন ডায়াপার পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়াও সবসময় ডায়াপার পড়িয়ে না রেখে বরং মাঝে মধ্যে ডায়াপার ছাড়া রাখতে হবে।
মুখে ও জিহ্বায় সাদা প্রলেপ
ছোট শিশুদের মুখে ও জিহ্বার উপরিভাগে সাদা দুধের মতো প্রলেপ দেখা যায় যা একধরণের ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এই সমস্যার ফলে শিশু ঠিকমতো খেতে চায় না। সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায় তবে কখনো কখনো এন্টিফাংগাল ক্রিম ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যান্য
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা (যেমনঃ ব্রণ হওয়া, র্যাশ, চুলকানি, শুষ্কতা ইত্যাদি) হতে পারে। আবার পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমা সহ বমি হওয়া, ঠিক মতো খাবার খেতে না চাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। জ্বরে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে একটি কমন ঘটনা।
শিশুর যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপনাআপনি সমস্যা ভালো হয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৬. স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা
শিশুদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা (Vaccine) নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। যথাযথ সময়ে শিশুর জন্য টিকা গ্রহণ করতে হবে। অবহেলা করে কখনো যেন টিকা নেওয়া বাদ না পড়ে সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ টিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
বিছানা, আসবাবপত্র, পোশাক, খেলনা ইত্যাদি যেন শিশুর জন্য ক্ষতিকর না হয় অর্থাৎ কোনোকিছুতে যেন শিশু আঘাত না পায় সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। একজন সচেতন মা হিসেবে শিশুর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকতে হবে।
References
Centers for Disease Control and Prevention. (2022, December 08). Important Milestones: Your Baby By Two Months. Retrieved from CDC: https://www.cdc.gov/ncbddd/actearly/milestones/milestones-2mo.html#
Lewis, R. (2020, August 10). All About Your 2-Month-Old Baby. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/baby/2-month-old-baby
Last Updated on November 1, 2023
Leave A Comment