মধু প্রাচীনকাল থেকেই অত্যন্ত মুল্যবান একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।‌ শুধু মিষ্টি খাবার হিসেবে নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ উপকারিতা বয়ে আনে মধু। আর তাই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই অনুচ্ছেদে মধুর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও খাঁটি মধু চেনার সহজ উপায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মধু খাওয়ার উপকারিতা

মধুর স্বাদ চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি যার প্রধান উপকরণ হলো ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ। প্রতি ১ টেবিল চামচ পরিমাণ (২১ গ্রাম) মধু থেকে ৬৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও মধুতে শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান (এনজাইম, পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড, জৈব এসিড, এমিনো এসিড) এবং খনিজ পদার্থ যেমনঃ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্লোরিন সহ সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি রয়েছে। নিয়মিত মধু খাওয়ার ফলে যে সব উপকারিতা পাওয়া যাবে তা হলোঃ (Goldman, 2022)

১। মধুতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরে ফ্রি রেডিক্যালস এর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

২। মধুতে রয়েছে এন্টি ফাংগাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী যা শরীরে ফাংগাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৩। মধুতে থাকা পলিফেনল, মনোফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড ও ভিটামিন সি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৪। ডায়রিয়া নিরাময়ে এবং আলসারের জন্য মধু খুব উপকারী খাবার হতে পারে। এছাড়াও মানুষের অন্ত্রে (Intestine) বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য মধু পুষ্টি জোগান দেওয়ার মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম ভালো রাখে।

৫। গলা ব্যথা ও কাশির যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য গরম পানি অথবা চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া উপকারী হতে পারে।

৬। অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিসের জটিলতা কমাতে মধু সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৭। মধুতে থাকা পলিফেনল মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।

৮। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মধুতে রয়েছে এন্টি ক্যান্সার (Anticancer) গুণাবলী যা শরীরে ক্যান্সার আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ত্বক, লিভার, ফুসফুস, প্রস্টেট গ্রন্থি, মূত্রথলি, হাড়, মুখগহ্বরের ক্যান্সার সহ মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধে মধুর কার্যকারীতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো অধিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। (Samarghandian, 2017)

৯। ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, মধুতে ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংসকারী ক্ষমতা রয়েছে। ক্ষতস্থানে বাহ্যিকভাবে মধু লাগানো হলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষত শুকাতে সহায়তা করে। তবে মধুর এমন কার্যকারীতা পরীক্ষা করতে ল্যাবরেটরিতে শতভাগ বিশুদ্ধ মধু ব্যবহার করা হয়েছে। মধুর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া খুব কঠিন। আর তাই ক্ষতস্থানে (বিশেষ করে গভীর ক্ষত বা ইনফেকশন) মধু লাগানোর পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।‌ (Goldman, 2022)

 Honey

মধু খাওয়ার নিয়ম

চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়া উপকারী তবে দৈনিক ১ টেবিল চামচ বা তার চেয়ে খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত হবে না। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে মধু খেলে বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে মধু খেতে হবে। এছাড়াও ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মধু খাওয়ানোর ব্যাপারে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

খাঁটি মধু চেনার উপায়

খাঁটি মধু চেনা খুব কঠিন কারণ প্রচলিত যতগুলো পদ্ধতি রয়েছে তার কোনোটাই শতভাগ কার্যকরী এমন নয়। মধু পরীক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতিটি হলোঃ এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু ঢেলে দিলে তা যদি খুব সহজেই পানিতে না মিশে নিচে গিয়ে জমা হয় তবে সেটিকে খাঁটি মধু হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এছাড়াও ভালো মানের ব্র্যান্ড দেখে মধু কিনলে গুণগত মানের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। উল্লেখ্য, কাঁচের পাত্রে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষণ করলে মধুর গুণাগুণ সবচেয়ে ভালো থাকে।

মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

মধুতে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ রয়েছে যা শরীরে শক্তির যোগান দেয়। অন্যদিকে, কালোজিরাতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদান। নিয়মিত কালোজিরা ও মধু‌ খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য উপকারী, বিশেষ করে শরীরে শক্তি যোগাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তবে অনেকেই মনে করেন যে, মধু অথবা কালোজিরা সহ মধু খেলে পুরুষের যৌন শক্তি খুব বৃদ্ধি পায়। যেহেতু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার সেহেতু যৌন শক্তি বাড়াতে সহায়তা করবে। তবে বিষয়টিকে যতটা অতিরঞ্জিত ভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে তেমনটা ভেবে কখনো অতিরিক্ত পরিমাণে না‌ খেয়ে বরং পরিমিত মাত্রায় খেতে পারেন।

অনুচ্ছেদ থেকে মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পারলেন। পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার হিসেবে নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তবে তা যেন অতিরিক্ত পরিমাণে না হয়। এছাড়াও, কারো ক্ষেত্রে মধু খেলে এলার্জিক রিয়েকশন দেখা দিলে তাদের জন্য মধু না খাওয়া উত্তম।

 

References

Goldman, R. (2022, 2 28). 8 Raw Honey Benefits for Health. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/food-nutrition/top-raw-honey-benefits

Samarghandian, P. S. (2017, Apr-Jun). Honey and Health: A Review of Recent Clinical Research. Retrieved from Pubmed Central: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5424551/

 

 

Last Updated on May 24, 2023