স্থুলতা হল শরীরের এমন একটি অবস্থা যখন শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয়। এ অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত বডি মাস ইনডেক্স (BMI) অনুযায়ী, যাদের BMI ২৫-২৯.৯ তাদের অতিরিক্ত ওজন আছে বলে ধরা হয় (Nuttall, 2015)। যা স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, ফলে আয়ু কমে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ওজন কমানো একটি লম্বা প্রকিয়া, তাই বেশিরভাগ লোকের পক্ষেই এতো ধৈর্য সম্ভব হয় না। সেসব মানুষের কথা মাথায় রেখে আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাত্র ৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়। এছাড়া আরও নানা জানা অজানা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে পুরো লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়

(জিএম ডায়েট-The GM diet)

জিএম ডায়েট, যা জেনারেল মোটরস ডায়েট নামেও পরিচিত, এটি এমন একটি ডায়েট পদ্ধতি যা এক সপ্তাহের মধ্যে ১৫ পাউন্ড (৬.৮ কেজি) পর্যন্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

বলা হয়ে থাকে যে এই ডায়েট পদ্ধতি জন হপকিন্স গবেষণা কেন্দ্রের ব্যাপক পরীক্ষা এবং মার্কিন কৃষি বিভাগ ও এফডিএ (FDA: Food and Drug Administration) এর সহায়তায় তৈরি করা হয়েছিল।

জি এম ডায়েট প্ল্যানকে মোট ৭ দিনে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিনের খাবারের আলাদা আলাদা তালিকা রয়েছে, যা আপনাকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

দ্রুত ওজন কমানোর উপায় এর একটি সফল পদ্ধতি এই জিএম ডায়েট। এটি একটি সহজ ও অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। যদিও এটি তাৎক্ষণিকভাবে ওজন কমায়, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

জিএম ডায়েট এর ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

জিএম ডায়েট চার্টে, কম ক্যালোরিযুক্ত খাবারের পাশাপাশি ফল, সবজি, বাদামী ভাত রাখা হয়েছে। জিএম ডায়েট অনুসরণকারীরা এই এক সপ্তাহের মধ্যে নিচে দেয়া খাবারগুলো ব্যতিত অন্য কোন খাবার গ্রহন করতে পারবে না।

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের গাইড

 

  • ১ম দিন
  1. কলা ৮-১০ টি
  2. এক কাপ তরমুজ
  3. ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি
  • ২য় দিন
  1. বড় সিদ্ধ আলু
  2. তেল ছাড়া রান্না করা শাকসবজি
  3. ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি
  • ৩য় দিন
  1. কলা বাদে সব ফল
  2. তেল ছাড়া রান্না করা শাকসবজি, আলু বাদে
  3. ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি
  • ৪র্থ দিন
  1. ৮ থেকে ১০ টি কলা
  2. ৩ থেকে ৪ গ্লাস দুধ
  3. ৮ থেকে ১২গ্লাস পানি
  • ৫ম দিন
  1. ৬ টি টমেটো
  2. এক কাপ ভাত
  3. ১২ থেকে ১৫ গ্লাস পানি
  • ৬ষ্ঠ দিন
  1. এক কাপ ভাত
  2. তেল ছাড়া রান্না করা শাকসবজি (আলু বাদে)
  3. ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি
  • ৭ম দিন
  1. এক কাপ ভাত
  2. যে কোনও শাকসবজি
  3. যেকোন ফলের রস

ওজন কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা/ কোন খাবার খেলে দ্রুত ওজন কমে?

৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়

১. গ্রিন টি: গ্রিন টি তে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন (Catechin), একধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে প্রচুর ক্যাফেইন (caffeine) থাকে। যদিও এক কাপ গ্রিন টিতে এক কাপ কফির (১০০-২০০ মিলিগ্রাম) তুলনায় অনেক কম পরিমাণে ক্যাফেইন (২৪-৪০ মিলিগ্রাম) থাকে, তবে দ্রুত ওজন কমাতে তা যথেষ্ট। (Gunnars, 2018)। ৭ দিনে ওজন কমানোর উপায় এর অন্যতম উপাদান এই গ্রিন টি।

২. পানি: পানির মাধ্যমে কিভাবে ওজন কমানো যায়! অবাক হচ্ছেন? দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। একটি গবেষণায় দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০-৫৯% মানুষ ওজন কমাতে পানি পান করে।

পানি বেশি বেশি পান করার ফলে অন্যান্য খাবারের প্রতি চাহিদা কিছুটা কমে। এছাড়াও, খাবার পানি পান করলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়, শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং বিপাক ক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর অন্যতম প্রধান কারণ

৩. মাশরুম: নিয়মিত মাশরুম খাবার মাধ্যমে আপনি আপনার অতিরিক্ত চর্বি কাটিয়ে উঠতে পারেন। গরু বা অন্য চর্বিযুক্ত মাংসের পরিবর্তে মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনি এতে খুব কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। এক কাপ (৭৫ গ্রাম) মাশরুমে ১৫ ক্যালোরি রয়েছে।

৪. অলিভ অয়েল: জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল হল একধরণের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (monounsaturated fatty acid) । মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে বেশি দিন ধরে জমা থাকতে পারে না, তাই অলিভ অয়েল থেকে ওজন বাড়ার ভয় নেই। এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি আপনার হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি এর নিয়মিত ব্যবহার দ্রুত চিকন হওয়ার একটি অন্যতম উপায়। তাই রান্নায় তেল হিসেবে সয়াবিন এর পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন আর দ্রুত স্বাস্থ্য কমিয়ে নিন।

৫. ব্রকলি: ওজন কমানোর উপায় হিসেবে ব্রকলি খুবই উপকারী। ১০০ গ্রাম ব্রকলিতে মাত্র ৩৪ ক্যালোরি রয়েছে। এক বাটি রান্না করা ব্রকলিতে ৫৫ থেকে ৬০ ক্যালোরি থাকতে পারে। (Sengupta, 2018) এছাড়াও এটি আপনার ভিটামিন সি এবং কে এর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। ব্রকলি ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী দুইটি জিনিসকে প্রতিহত করে। একটি হচ্ছে শারীরিক ক্ষুধা এবং অপরটি ঘন ঘন খাওয়ার ইচ্ছা। তাই আপনার ডায়েট প্ল্যানে ব্রকলি যোগ করার মাধ্যমে ওজন কমাতে পারেন সহজেই।

৬. চিয়া সিড: চিয়া সিড বা চিয়া বীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদের বীজ। এই অতি উপকারি বীজটির আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা। স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে পাওয়া যায় প্রায় সব দেশেই। এগুলিতে ফাইবার এবং প্রোটিনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এগুলি হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং যার জন্য ক্ষুধা কম লাগে।

জিএম ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • যদিও জিএম ডায়েট একটি দ্রুত ওজন কমানোর উপায়। এ পদ্ধতিতে ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি তবে প্রোটিন, কার্বস এবং ফ্যাট কম থাকে। এ কারণে আপনার শরীর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না।
  • যেহেতু আপনি একটি দীর্ঘ সময় ধরে ভাত, মাংস, ডাল ইত্যাদি নিয়মিত খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। তাই হঠাৎ করে নতুন ডায়েট অনুসরন করার কারণে বদ হজম হতে পারে। শরীর হজমের জন্য বেশি বেশি পানি ব্যবহার করবে, তাই পানিশূন্যতাও (Dehydration) হতে পারে।
  • এছাড়া দূর্বলতা, মাথা ব্যাথা, ক্ষুধামন্দা সহ ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

জিএম ডায়েটের সামগ্রিক উপকারিতা এবং অপকারিতা

উপকারিতা

  •   জিএম ডায়েট আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে উৎসাহী করে। এই ডায়েটের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ফলমূল খাওয়া। বেশি ফলমূল এবং শাকসবজি খেলে দ্রুত ওজন কমে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।
  • এই ডায়েটে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যার মাধ্যমে শরীরের ফাইবার যুক্ত খাবারের চাহিদা মেটে।
  • এটি আপনাকে হাইড্রেটেড থাকতে সহায়তা করে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা আপনার দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
  •  এতে কোনও প্রক্রিয়াজাত খাবার নেই। বেশিরভাগ লোকেরা কম চিনি এবং কম কার্বোহাড্রেট খাবার খাওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হয় এবং জিএম ডায়েটে আপনি কোনও উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার পাবেন না। এটি সোডিয়াম, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট মুক্ত একটি পরিপূর্ন খাদ্য তালিকা।

অপকারিতা

  • কোন কোন সময় জিএম ডায়েট বিপদেরও কারণ হতে পারে। প্রতি সপ্তাহে ১-২ পাউন্ড (০.৫-০.৯ কেজি) ওজন কমানো একটি স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি। কিন্তু জিএম ডায়েটের ফলে প্রতি সপ্তাহে ১০-১৭ পাউন্ড (৪.৫-৭.৭ কেজি) পর্যন্ত ওজন হ্রাস পেতে পারে। (Tylor, 2021)
  • জিএম ডায়েটে ওজন হ্রাস হয় সাময়িক। জিএম ডায়েট প্ল্যান হল একধরণের ডায়েট যা আপনাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যে কোনও ধরণের স্বল্পমেয়াদী ডায়েটের সমস্যা হল, এটি একবার বন্ধ করে দেওয়ার পরে আবার আগের ওজ্নে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • যদিও এটি আপনাকে একটি আদর্শ খাবার তালিকা অনুসরণ করতে বলে। কিন্তু এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায় না। আর পর্যাপ্ত ক্যালরি ছাড়া শরীর দূর্বল হয়ে পরে।
  • কোন গবেষণাই পুরোপুরিভাবে জিএম ডায়েট সমর্থন করে না।

৭ দিনে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে জিএম ডায়েট কতটুকু স্বাস্থ্যকর?

সবার জন্য জিএম ডায়েট চিকন হওয়ার উপায় হিসেবে মোটেও স্বাস্থ্যকর উপায় না। শুধুমাত্র যাদের ওজন অতিরিক্ত পরিমাণ বেশি তাদের জন্য এই ডায়েট তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হয়ত সাময়িকভাবে আপনার ওজন কমে যাবে। কিন্তু ৭ দিন পর আপনি যখন এটি বন্ধ করে দিয়ে আগের রুটিনে চলে যাবেন, তখন আপনার স্বাস্থ্য আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

লম্বা সময়ের জন্য এটি মোটেও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি নয়। কারণ এটি বেশি দিন ধরে অনুসরণ করলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

আপনার কি জিএম ডায়েট করা উচিত?

অনেকেই দ্রুত চর্বি কমানোর উপায় হিসাবে বিভিন্ন দ্রুত সমাধান খুঁজে থাকেন। কিন্তু শুধুমাত্র একসপ্তাহের রুটিনে স্থায়ী ভাবে তা সম্ভব নয়। যদিও জিএম ডায়েট ওজন কমানোর উপায় হিসেবে দারুন কার্যকরী।

জিএম ডায়েট আপনাকে চিনি-মিষ্টিযুক্ত খাবার থেকে দূরে রাখে এবং ফলমূল, শাকসবজি খেতে উৎসাহী করে। কিন্তু এটি গবেষণার দ্বারা পরিক্ষিত নয় এবং এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে এবং এটি স্থায়ীভাবে ওজন হ্রাস করতে পারে না।

তাই এর চেয়ে ভাল কোন স্বাস্থ্যকর উপার খুঁজে বের করুন। যেই পদ্ধতিকে পুষ্টিবিদরাও পুরোপুরি সমর্থন করেন ।

জিএম ডায়েট কি পরিবর্তন করা যায়?

আপনি নিজের পছন্দ মত কিছু জিনিস যোগ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট এর সাথে যেন আপনার যোগ করা অন্যান্য পদ্ধতি সাংঘর্ষিক না হয়।

  • ডায়েট চার্ট এর সাথে চাইলে কিছু বাদাম যোগ করতে পারেন।
  • মাংসের পরিবর্তে কটেজ পনির (এক ধরনের দুগ্ধজাত খাবার) খেতে পারেন।
  • গরুর দুধের পরিবর্তে সোয়া দুধ খেতে পারেন। সোয়াবিনের নির্যাস থেকে তৈরি এ দুধ বাজারে চিনিসহ, চিনি ব্যতীত, চকোলেট ও ভ্যানিলা ফ্লেভারযুক্ত নানাভাবেই পাওয়া যায়।

জিএম ডায়েট

অনেকেই জিএম ডায়েট কে কিটো ডায়েটের সাথে তুলানা করে। যদিও কিটো ডায়েট এবং জিএম ডায়েটে আকাশ – পাতাল তফাৎ। কিটোডায়েটে কার্বোহাড্রেটের উপর চাপ কমিয়ে ফ্যাট এবং প্রোটিন যুক্ত খাবারের উপর বেশি জোর দেয়। কিন্তু কিটোডায়েট আপনাকে কখনোই বলবে না বেশি বেশি পানি আর ফলের রস খাও। দুই পদ্ধতিরই রয়েছে আলাদা আলাদা ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট।

এছাড়াও কিটোডায়েট একটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি, অপর দিকে জিএম ডায়েট ৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়।

৭ দিনে ওজন কমানোর উপায় (মিলিটারি ডায়েট-The military diet)

এটা  বর্তমান বিশ্বের খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতি মাত্র ৭ দিনে সর্বোচ্চ ৪.৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে সক্ষম

Military diet কে ৩ দিনের ডায়েটও বলা হয়।

মিলিটারি ডায়েট এর মাধ্যমে কিভাবে ওজন কমানো যায়?

৩ দিনের মিলিটারি ডায়েটটি ৭ দিনের সময়কালে আসলে ২ টি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম ৩ দিন খুবই কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতে হবে, প্রতিদিন গড়ে ১১০০-১৪০০ ক্যালরি গ্রহন করতে হবে। (Leech, 2017) তবে বয়স ও ওজনভেদে কিছু পরিবর্তন করা যেতে পারে।

বাকি ৪ দিন আপনার ডায়েট মেনুতে আরও কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার যোগ করা হবে কিন্তু কম ক্যালরি যুক্ত খাবার তখনও চালিয়ে যেতে হবে।

 

১ম দিন

মোট ১৪০০ ক্যালরি

সকাল

  • এক টুকরো পাউরুটি সাথে পিনাট বাদাম
  • আঙ্গুর
  • ১ কাপ কফি বা চা (ঐচ্ছিক)

দুপুরের খাবার

  • এক টুকরা টোষ্ট
  • এক কাপ মাছ
  • ১ কাপ কফি বা চা (ঐচ্ছিক)

রাতের খাবার

  • মাংস ৮৫ গ্রাম সাথে কিছু শিম
  • অর্ধেক আপেল

২য় দিন

মোট ১২০০ ক্যালরি

সকাল

  • এক টুকরো টোষ্ট
  • একটি সিদ্ধ ডিম
  • কলা (অর্ধেক
  • ১ কাপ কফি বা চা (ঐচ্ছিক)

দুপুরের খাবার

  • ১টি সিদ্ধ ডিম।
  • ১ কাপ কটেজ পনির।
  • ১ কাপ কফি বা চা (ঐচ্ছিক)

রাতের খাবার

  • আধা কাপ গাজর
  • আধা কাপ ব্রকলি
  • অর্ধেক কলা

৩য় দিন

মোট ১১০০ ক্যালরি

সকাল

  • এক কাপ পনির
  • একটি আপেল

দুপুরের খাবার

  • একটি টোষ্ট
  • একটি ডিম

রাতের খাবার

  • এক কাপ মাছ
  • অর্ধেক কলা

বাকি ৪ দিন

সর্বোচ্চ ১৫০০ ক্যালরি গ্রহন করতে পারবেন। সাথে অন্যান্য খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া তেমন কোন বিধি নিষেধ বাকি ৪ দিনের জন্য নেই।

মিলিটারি ডায়েট কতটুকু নিরাপদ

মিলিটারি ডায়েট এবং জিএম ডায়েটের মধ্যে তুলনা

মিলিটারি ডায়েট অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপায় কিংবা অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় যেটাই বলি না কেন, এর জন্য অত্যন্ত নিরাপদ একটি পদ্ধতি। তবে এটি আপনি টানা মাসের পর মাস অনুসরণ করলে পুষ্টিহীনতায় ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই ডায়েটটি করা মোটামুটি সহজ। এটি দীর্ঘমেয়াদী অভ্যাস পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে না এবং কেবল অল্প সময়ের মধ্যেই ভাল ফলাফল দেয়।

মিলিটারি ডায়েট এবং জিএম ডায়েটের মধ্যে তুলনা

  • মিলিটারি ডায়েট

  1. এটি আপনাকে এক সপ্তাহের মধ্যে মোট ১০ পাউন্ড বা ৪.৫ কেজি ওজন কমাতে সহায়তা করে
  2. মুলত তিন দিন সাথে অতিরিক্ত ৪ দিন
  3. স্বল্পমেয়াদী ওজন কমানোর জন্য এটি নিরাপদ।
  • জিএম ডায়েট।

  1. এটি আপনাকে এক সপ্তাহের মধ্যে মোট ১৫ পাউন্ড বা ৬.৮ কেজি ওজন কমাতে সহায়তা করে
  2. মূলত ৭ দিন
  3. জিএম ডায়েটও স্বল্পমেয়াদী ওজন হ্রাস এর জন্য ডিজাইন করা

মিলিটারি ডায়েট এবং জিএম ডায়েটের উভয়েরই কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। তবে দুটি পদ্ধতিই ৭ দিনে মেদ কমানোর উপায় এর ভাল পদ্ধতি।

আপনি যেকোন একটি পদ্ধতিই অনুসরণ করতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য একজন পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ নিয়ে নিবেন।

৭ দিনে মেদ কমানোর উপায়

আপনি যদি জিএম বা মিলিটারি ডায়েট এর মত এতো কঠিন পদ্ধতিতে না যেতে চান তাহলে এই টিপসগুলো মেনে চলুন। এটি কোন ডায়েট প্ল্যান নয়, তবে ওজন কমানোর জন্য কিছু সাধারন টিপস।

  • প্রচুর পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার খান।
  • মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন
  • উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খান (মাছ, মাংস, ডিম)
  • চিনি জাতীয় খাবার কম খান
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করা খাবার গ্রহন করুন
  • কোমল পানীয় পান করবেন না
  • চর্বি যুক্ত মাছ খেতে পারেন এতে কোন ক্ষতি নেই
  • প্রতিদিন ১-২ কাপ গ্রিন টি পান করুন

দ্রুত ওজন কমানোর উপায় (সহজ ৩ টি উপায়)

  • বার বার ক্ষুধা লাগলেই ভাত না খেয়ে ১-২ টা বিস্কুট এর সাথে পানি পান করুন
  • আস্তে আস্তে খাওয়ার অভ্যাস করুন, এতে ওজন হ্রাসকারী হরমোন বেশি করে ক্ষরণ হয়।
  • খাবার আগে পানি পান করুন। এতে করে ক্ষুধা কিছুটা নিবারণ হবে এবং কম পরিমাণ খেতে সাহায্য করবে।

নিজেকে আকর্ষণীয় রাখতে কে না চায়। সৌন্দর্যের পথে বড় বাঁধা শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞরা সব সময় আস্তে আস্তে ওজন কমানোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তবে নিয়ম মাফিক ভাবে কিছু পদ্ধতি মেনে চললে অল্প সময়েও শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। ৭ দিনে ওজন কমানোর উপায় জানা থাকলে আপনি সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবেন।

আমরা আমাদের লেখায় কিভাবে মাত্র ৭দিনে অতিরিক্ত ওজন,মেদ চর্বি কমানো যায় এবং চিকন হওয়ার বিভিন্ন বিষয়গুলো বিস্তারিত ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের লেখাটি পরে আপনাদের কেমন লাগল কিংবা যদি কোন পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আমরা তা সাদরে গ্রহন করব।

 

 

 

References

 

 

Last Updated on May 6, 2023