এনাল ফিশারে (Anal fissure) আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে সংকোচ বোধ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাথমিক পর্যায়ের এনাল ফিশারে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ/চিকিৎসা গ্রহণ না করার ফলে দীর্ঘমেয়াদী এনাল ফিশার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। (Jahnny, 2022) এই অনুচ্ছেদে এনাল ফিশারের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এনাল ফিশার বা গেজ রোগ কি

এনাল শব্দটি দ্বারা পায়ুপথকে বোঝানো হয়ে থাকে আর ফিশার মানে হলো ফেটে যাওয়া বা চিড়ে যাওয়া। পায়খানার রাস্তা অতিরিক্ত চাপের ফলে ফেটে গেলে তাকে এনাল ফিশার বা সহজ বাংলায় গেজ বলা হয়ে থাকে। এই রোগের প্রধান কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য বা শক্ত পায়খানা হওয়া। এছাড়াও অন্যান্য কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া
  • পায়ুপথে যৌনসঙ্গম করা
  • নরমাল ডেলিভারি হওয়া
  • ইনফ্লামেটরি বায়েল ডিজিজ
  • সিফিলিস, টিবি, এইডস ইত্যাদি

এনাল ফিশার যেকোনো বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে হতে পারে এবং নারী পুরুষ উভয়কে সমানভাবে আক্রান্ত করে থাকে। তবে মধ্যবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অধিক হারে হতে দেখা যায়। যা হোক, এই রোগের দুইটি পর্যায় রয়েছে। যথাঃ

একিউট বা প্রাথমিক পর্যায়ঃ সর্বোচ্চ ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী সমস্যা হলে তা একিউট এনাল ফিশার হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে একিউট সমস্যার ক্ষেত্রে খুব তীব্র ব্যথা হয়।

ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদীঃ ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সমস্যা স্থায়ী হলে তাকে ক্রনিক এনাল ফিশার হিসেবে গন্য করা হয়। ক্রনিক পর্যায়ের ব্যথার তীব্রতা তুলনামূলক কম হয়ে থাকে তবে এটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে রাখে।

এনাল ফিশার বা গেজ রোগের লক্ষণ

এনাল ফিশার হয়েছে কিনা তা বোঝার প্রাথমিক উপায় হলো লক্ষণ দেখে বিবেচনা করা। এনাল‌ ফিশারের ক্ষেত্রে যে সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলোঃ

  • পায়খানা করার সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া
  • পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যথা স্থায়ী হওয়া
  • টয়লেট পেপারে (টিস্যু) লাল রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায় তবে রক্তের পরিমাণ কম থাকে
  • পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়া ও চুলকানি থাকতে পারে

এনাল ফিশার  বা গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

লক্ষণ দেখে এনাল ফিশার হয়েছে বলে মনে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে কতিপয় ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এনাল ফিশার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। যেমনঃ

১। এনাল‌ ফিশারের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কোনো বিকল্প নেই। আর এই জন্য করণীয় বিষয়গুলো হলো-

  • প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার বিশেষ করে শাকসবজি ও ফলমূল বেশি বেশি করে খেতে হবে
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে
  • কখনো পায়খানার বেগ চেপে রাখা যাবে না
  • মাংস ও চর্বি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করে চলতে হবে
  • প্রয়োজনে‌ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে

২। এনাল ফিশারের‌ ব্যথা কমানোর সহজ ও কার্যকরী ঘরোয়া উপায় হলো গরম পানির সেঁক (Sitz bath) নেওয়া।‌ একটি গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে কোমড় ডুবিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলে ব্যথা কমে যাবে।

৩। ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ৫০০ মিগ্রা দিনে ৩/৪ বার খাওয়া যেতে পারে। তবে আইবুপ্রোফেন গ্রুপের ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া যাবে না। কারণ, তাতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪। মলত্যাগের পূর্বে গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহার করা অথবা পায়খানার রাস্তায় পেট্রোলিয়াম জেলি লাগানো যেতে পারে।‌ এতে করে মলদ্বার পিচ্ছিল হয়ে সহজে ব্যথাহীন ভাবে মলত্যাগ হবে।‌ এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যেন মলত্যাগের সময় খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করা না হয়।

এনাল ফিশার বা গেজ রোগের চিকিৎসা

ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে সমাধান না‌ হলে সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যদি দেখেন সমস্যা খুব বেশি গুরুতর‌ নয় তাহলে এনাল ফিশার এর মলম ব্যবহার এবং ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেই সাথে পায়খানা যেন শক্ত না হয় সেইজন্য মল নরম করে এমন ঔষধ (Laxatives) প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তবে দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে সার্জারি করানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে।‌ আশার কথা হলো এই যে, বাংলাদেশে এনাল ফিশারের উন্নত মানের সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে।

এনাল‌ ফিসার খুব যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তাই, এই রোগটি যেন না হয় সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই রোগের কারণ গুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।‌ বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি ইতিমধ্যেই এনাল ফিশার হয়ে থাকে তবে সংকোচ ও দ্বিধা দূর করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

References

Jahnny, B. (2022, November 14). Anal Fissures. Retrieved from NAtional Library of medicine: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK526063/#:~:text=Anal%20fissures%20are%20common%20in,(more%20than%20six%20weeks)

Last Updated on November 1, 2023