শিশুদের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে মা বাবা বিচলিত হয়ে পড়েন যে তার সন্তানটি জন্মগত ভাবে অটিজম (Autism) কিনা। একটি শিশু জন্মের পর থেকে কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অটিজম হিসেবে ধারণা করা যেতে পারে এবং এই পর্যায়ে করণীয় কি সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রত্যেক সচেতন মা বাবার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আর তাই এই অনুচ্ছেদে আমরা কথা বলবো অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কি লক্ষণ দেখা দেয়, অটিজম কেন হয়, অটিজম নির্ণয়ের উপায় ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে। সেই সাথে অনুচ্ছেদের শেষের দিকে রয়েছে অটিজম প্রতিরোধে বিজ্ঞান্সম্মত কিছু টিপস।

অটিজম কেন হয়?

বর্তমান সময়ে অটিস্টিক  শিশু জন্ম নেওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে।‌ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৫৪ টির মধ্যে ১ টি শিশুর অটিজম হয়ে থাকে। (Joy, 2021) আরেকটি বিষ্ময়কর তথ্য হলো ছেলে বাচ্চার ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা মেয়ে বাচ্চার তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি। গবেষনায় দেখা গেছে যে সমস্ত মা বাবা একটি  অটিস্টিক শিশু  জন্ম দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী শিশুটিও অটিস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ১৯ শতাংশ। আর জমজ (Twins) বাচ্চার ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত। (Bhandari, 2021)

অটিজমের কারণ কি?

যদিও অটিজম কেন হয় সেই বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সুস্পষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাননি তবে কিছু কিছু বিষয়কে এর কারণ (Causes) হিসেবে দায়ী মনে করা হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • জিনগত সমস্যা (Genetics)
  • বায়ু দূষণ (Air pollution) এবং কীটনাশকের (Pesticides) প্রভাব
  • গর্ভকালীন সময়ে অযাচিত ওষুধের ব্যবহার (thalidomide, valproic acid)
  • শিশুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ যেমন tuberous sclerosis, fragile X syndrome ইত্যাদি
  • কম ওজন নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহণ করা (Low birth weight)
  • গর্ভকালীন পূর্ণাঙ্গ সময় শেষ হওয়ার আগেই বাচ্চা প্রসব করা
  • বাচ্চা প্রসবের সময় মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়া
  • গর্ভবতী মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও স্থূলতা (Obesity)
  • অধিক বয়সে গর্ভধারণ করা ইত্যাদি

 

সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে গর্ভধারণের আদর্শ সময় কোনটি তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

 

স্বাভাবিক বাচ্চারা যেভাবে কমিউনিকেট করে

একটি শিশু জন্মের পর থেকে বিভিন্ন ধাপ পার করে বড় হয়ে উঠে যার মধ্যকার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিশুরা কথা বলতে (Verbal communication) পারে না। তবে এই সময়ে অর্থাৎ জন্মের ২ মাস পর থেকেই শিশুরা চোখের ইশারায় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। যেমন: কেউ ডাকলে অথবা কোনো বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করলে শিশু বাচ্চাটি সেদিকে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। এছাড়াও প্রথম ১ বছরের মধ্যে আরো যে সমস্ত উপায়ে শিশুরা যোগাযোগ রক্ষা করে তা হলো-

  • মায়ের কথার শব্দ শুনতে পেলে সেদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে
  • শিশুর নাম ধরে ডাকলে সেদিকে তাকায়
  • শব্দ করলে অথবা হাত তালি দিলে শিশুরা হাসে এবং হাত পা নাড়াতে থাকে (Gesturing)

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যোগাযোগের পার্থক্য

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যোগাযোগের পার্থক্য

অটিজম (Autism) একটি মেডিকেল টার্ম যাকে পূর্ণাঙ্গরূপে Autism spectrum disorders বলা হয়। এটি একধরনের জন্মগত সমস্যা যেখানে মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্ষমতার ত্রুটির দরুন শিশুর আচরণের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।  বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে পার্থক্য টি দেখতে পাওয়া যায় তা হলো চোখের ইশারায় যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম না হওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত বাচ্চারা চোখের ইশারায় যোগাযোগ কম করে তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে অটিজম ডায়াগনসিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে। (Curley, 2019) তবে শুধুমাত্র এই লক্ষণটি দেখেই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই বরং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি আচরণ জনিত আরো কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অটিজম বাচ্চাদের আচরণের ধরণগুলো কী কী?

সাধারণত শিশুদের সাথে কথা বললে অথবা খেলনা দেখালে সেক্ষেত্রে শিশুটি হাত পা নাড়াচাড়া করতে থাকে। তবে অটিস্টিক শিশুদের বেলায় ভিন্ন ধরনের আচরণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এছাড়াও ৬ মাসের বেশি বয়সী সুস্থ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শিশুর নাম ধরে ডাকলে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু  অটিস্টিক বাচ্চার ক্ষেত্রে এটি দেখা যায় না। বরং তাদের ক্ষেত্রে আরো কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যেমন:

  • মুখের অভিব্যক্তি (Facial expressions) প্রকাশ পায় না
  • দেরিতে কথা বলতে শেখে
  • বাইরের উদ্দীপনায় সাড়া (Regression) না দেওয়া ইত্যাদি

অটিজমের লক্ষণগুলো কী কী?

  • বার‌‌ বার একই রকম ভাবে নড়াচড়া করতে থাকে (rocking or spinning)
  • ডাকলে অথবা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে কোনো সাড়া না দেওয়া
  • বার বার একই রকম শব্দ করতে থাকে (Echolalia)
  • সামান্য অবস্থান পরিবর্তনেও বিমর্ষ হয় বা কান্না শুরু করে ইত্যাদি

 

প্রকৃতপক্ষে লক্ষণ দেখে শিশু অটিস্টিক কিনা তা বুঝতে পারা খুবই কঠিন একটি বিষয়। কারণ অনেক সুস্থ বাচ্চার ক্ষেত্রেও এই সমস্ত লক্ষণাবলী দেখা যেতে পারে যা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়।‌ তবে এই ব্যাপারে একদম সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা রয়েছে যার মাধ্যমে অটিজম বিষয়ে ধারণা করা যেতে পারে। যেমন:

  • ২ মাস বয়সের পর থেকে চোখের ইশারায় যোগাযোগ না করা
  • ৯ মাস বয়সে নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া এবং রাগ, কষ্ট অথবা খুশিতে মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে না পারা
  • ১২ মাস বয়সে হাত পা নাড়িয়ে খেলাধুলা করার চেষ্টা না করা
  • ১৬ মাস বয়সে একটি শব্দ (Single words) উচ্চারণ করতে না‌ পারা
  • ২৪ মাস বয়সে দুই শব্দে (two-word phrases) কথা বলতে না পারা ইত্যাদি

অটিজম কিভাবে নির্ণয় করবেন?

অটিজম কিভাবে নির্ণয় করা হয় তা জানার পূর্বে লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। এই ব্যাপারে American Academy of Pediatrics এর নির্দেশনা হলো শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে সেক্ষেত্রে শিশুর বয়স ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। (Cherney, 2021) অটিজম নির্ণয়ের জন্য সাধারণত চিকিৎসকেরা মা বাবাকে শিশুর ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন যার মাধ্যমে চিকিৎসক শিশুর আচরণগত ইতিহাস জানতে পারেন। অতঃপর আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে শিশুর অটিজম আছে কিনা। যেমন:

  • DNA test
  • Behavioral evaluation
  • Visual and audio tests
  • Occupational therapy screening
  • Autism Diagnostic Observation Schedule, Second Edition (ADOS-2)
  • EEG (electroencephalogram)

অটিজম কিভাবে নির্ণয় করবেন?

স্পেশাল বাচ্চাদের জন্য কখন ইন্টারভেনশান শুরু করা উচিত? খুব দ্রুত শুরু করলেই কি ভালো?

যুক্তরাষ্ট্রের National Institute of Child Health and Human Development এর তথ্য অনুযায়ী স্পেশাল (অটিস্টিক) বাচ্চাদের জন্য যত শিঘ্র ইন্টারভেনশন শুরু করা যায় ততই ভালো। অর্থাৎ কম বয়সে ইন্টারভেনশন তথা চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুটির মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কিছুটা উন্নত হয় এবং সমাজের সাথে নিজেকে যতটুকু সম্ভব মানিয়ে চলতে পারে। (Joy, 2021)

তবে এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি নির্দেশনা হলো অবশ্যই শিশুটি অটিস্টিক কিনা সেই বিষয়ে আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কেননা অনেক শিশুদের ক্ষেত্রে কম বয়সে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা গেলেও পরবর্তীতে তা আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়। আর যদি এমন হয় যে শিশুকে অটিজম ভেবে আগে থেকেই ইন্টারভেনশন শুরু করা হলো অথচ পরে বোঝা গেলো যে শিশুটি প্রকৃতপক্ষে অটিজম ছিলো না।

সেক্ষেত্রে অযাচিত ইন্টারভেনশন শুরু করার ফলে শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। (Curley, 2019) আর তাই শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে যদি কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন তবে সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করাই উত্তম।

অটিস্টিক বাচ্চাদের চিকিৎসা

অটিস্টিক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একদম ভালো হয়ে যাওয়ার মতো (Curable treatment) কোনো কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তবে কতিপয় পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ও আচরণগত উন্নতি ঘটানো সম্ভব। যেমনঃ

Behavioral therapies

অটিজম শিশুদের জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকরী একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে শিশুকে আবেগ, অনুভূতি, আচরণ, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি বোঝানো এবং সেই সাথে কোন ধরনের কাজ ভালো আর কোন গুলো বর্জনীয় তা শেখানো হয়ে থাকে। এই থেরাপির মাধ্যমে মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা তথা কথা বলতেও শেখানো হয় তবে ভালো ভাবে কথা বলার জন্য সুনির্দিষ্ট ভাবে Speech therapy গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

Speech therapy

অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটি জটিলতা হলো ভালো ভাবে কথা বলতে বা বুঝতে না পারা আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য একজন দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা Speech therapy দেওয়া হয়ে থাকে। অটিজম ছাড়াও যে কোনো শিশুদের ক্ষেত্রে কথা বলতে অসুবিধা থাকলে এই থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে।

Education

অটিজম শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। সাধারণত এক্ষেত্রে একেকটি শিশুকে আলাদাভাবে শিক্ষা দান করা হয় যাতে করে সে সহজেই শিখতে পারে।

Physical therapy

বার বার একই রকম ভাবে নড়াচড়া করা, সারাক্ষণ দুলতে থাকা, হাত পায়ের ‌অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট (Physiotherapist) এর শরণাপন্ন হয়ে থেরাপি গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে সমস্যার তীব্রতা অনুযায়ী ধৈর্য ধারণ করে দীর্ঘমেয়াদী থেরাপি নিতে হবে।

Medication

কিছু কিছু ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে যা অটিজম সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন: Bumetanide ওষুধটি অটিজম শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও অস্বাভাবিক আচরণ দূর করতে সহায়তা করে। তবে এই ওষুধটি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়াও মানসিক সমস্যা সমাধানের আরেকটি ওষুধ রয়েছে (Risperdal) যা শিশুর অস্বাভাবিক আবেগ যেমন রাগ এবং নিজের শরীরে আঘাত করা লক্ষণে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অটিজম শিশুদের বেলায় ওষুধ সেবনের ফলে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হলো তা চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে। (Bhandari, 2021)

অটিস্টিক বাচ্চাদের হজম এবং ঘুমের সমস্যা সমাধানের উপায়

অনেক অটিজম শিশুদের বেলায় হজমের গন্ডগোল বা ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে হজম সহায়ক সহজপাচ্য খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, ভালো মানের আমিষ ও চর্বি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। সেই সাথে গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার বর্জন করতে হবে। কারণ দুধের মধ্যে কেসিন (casein) নামক যে প্রোটিন রয়েছে তা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য গম, আটা, ময়দা, বার্লি (barley) ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গ্লুটেন রয়েছে।

ঘুমের সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃদু প্রকৃতির ঘুমের ওষুধ (Sedative) খাওয়ানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং রাতের বেলায় ভালো ঘুম হবে।

অটিজম কেন সামাজিক সমস্যা?

অটিজম শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মতো বাইরের মানুষ ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না।‌  আর যার ফলে মানুষ তাদেরকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে। অনেকেই মনে করেন যে অটিজম শিশু হলো অভিশপ্ত কিন্তু এই ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। বরং সবারই উচিত অটিজম শিশুদের সাথে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। সেই সাথে যেকোনো পরিস্থিতিতে অটিজম শিশুদের দিকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে তবে তা করুণার দৃষ্টিতে নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসা থেকে।

কারণ এমনিতেই  অটিস্টিক শিশুরা হীনমন্যতায় ভোগে তারউপরে করুণা দেখানো হলে তাতে শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধি ব্যহত হয় ।

অটিস্টিক বাচ্চাদের হজম এবং ঘুমের সমস্যা সমাধানের উপায়

কীভাবে অটিজম একটি শিশুর সামাজিক দক্ষতাকে প্রভাবিত করে?

অটিজমের জটিলতা হিসেবে শিশুর সামাজিক দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যেমন:

  • স্কুলে যাওয়া এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না
  • কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়
  • একা একা স্বাধীনভাবে চলতে পারে না
  • পারিবারিক ভাবে বোঝা হয়ে থাকে
  • অন্য শিশুদের দ্বারা বিদ্রুপের (bullying) শিকার হয়ে থাকে

অটিজম প্রতিরোধের উপায়

অটিজম প্রতিরোধের কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেই তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করে থাকেন যে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের জন্য কিছু টিপস মেনে চলার মাধ্যমে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা যায়। (Bhandari, 2021) যেমনঃ

  • ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা জরুরি
  • গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতীত যত্রতত্র ওষুধ সেবন করা যাবে না। বিশেষত এন্টি বায়োটিক (Antibiotics) এবং খিঁচুনির ওষুধ (anti-seizure drugs) গ্রহনের ব্যপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
  • গ্লুটেন (Gluten) সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে হজমের সমস্যা (celiac disease) দেখা দিলে সেক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে
  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,‌ থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা ইত্যাদি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি
  • পুষ্টিকর খাবার, প্রিনেটাল ভিটামিন, সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে এবং সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
  • প্রসবের জন্য গর্ভবতীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তায় প্রসব করাতে হবে। মায়ের অবস্থা বিবেচনায় প্রয়োজনে সিজারিয়ান ডেলিভারি করানো লাগতে পারে

 

সুস্থ এবং স্বাভাবিক শিশু জন্মদানের জন্য গর্ভধারণের পূর্বে কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

 

উল্লেখ্য ১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ একটি গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছিলো যে MMR (measles, mumps, rubella) ভ্যাকসিন গ্রহণের সাথে অটিস্টিক সন্তান জন্ম দেওয়ার বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। পরবর্তীতে এই গবেষণার ভিত্তিতে আরো অনেক গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে এই তথ্যটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ভুল রয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে অটিস্টিক সন্তান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। (Bhandari, 2021) বরং গর্ভধারণের পূর্বে প্রস্তুতি হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষত গর্ভধারণের পূর্বে অবশ্যই রুবেলা (rubella) ভ্যাকসিন নিতে হবে।

 

অটিজম একটি সমস্যা হলেও যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে শিশু অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। সেই সাথে সামাজিক ভাবে অটিস্টিক শিশুদের ভালো দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসার জন্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা নিউরোসার্জন দেখানো যেতে পারে।

 

 

 

 

References

Bhandari, S. (2021, March 8). Can You Prevent Autism? From WebMD: https://www.webmd.com/brain/autism/can-you-prevent-autism

Bhandari, S. (2021, May 16). Slideshow: A Visual Guide to Autism. From WebMD: https://www.webmd.com/brain/autism/ss/slideshow-autism-overview

Cherney, K. (2021, November 1). Everything You Need to Know About Autism Spectrum Disorder (ASD). From Healthline: https://www.healthline.com/health/autism

Curley, C. (2019, July 21). Autism Symptoms That Can Show Up in Babies Before Their 1st Birthday. From Healthline: https://www.healthline.com/health-news/signs-of-autism-in-children-less-than-1-year-old

Joy, R. (2021, March 19). Signs of Autism in Babies: A Simple Guide to Developmental Differences. From Healthline: https://www.healthline.com/health/autism/signs-of-autism-in-babies

 

Last Updated on April 15, 2023