Table of Contents
চুল কত দ্রুত বৃদ্ধি পায়?
মানুষের মাথায় প্রায় ১ লক্ষের মতো হেয়ার ফলিকল থাকে যেখান থেকে চুল গজায়। চুল প্রতিদিন গড়ে ০.৩৫ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি পায় যা মাসের হিসাবে ০.৫ ইঞ্চি এবং ১ বছরে ৬ ইঞ্চির মতো। চুল কত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে তা নির্ভর করে বয়স, লিঙ্গ, জিনগত প্রভাব, হরমোন, খাদ্যাভাস, জীবন যাপন পদ্ধতি, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং শরীরে কোনো রোগ রয়েছে কিনা তার উপর। এই প্রভাবক গুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে পরিবর্তন যোগ্য যা অনুসরণ দ্রুত চুল গজাতে সহায়তা করে। এই অনুচ্ছেদে দ্রুত চুল গজানোর ও মজবুত করার ১৩ টি ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চুল বৃদ্ধির পর্যায়
হেয়ার ফলিকল থেকে চুল গজানো এবং শরীরের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে পড়া পর্যন্ত ৪ টি পর্যায় রয়েছে। যথাঃ (Roland, 2020)
এনাজেন (Anagen)
এই পর্যায়ে হেয়ার ফলিকল থেকে চুলের বৃদ্ধি শুরু হয়। এটি সবচেয়ে লম্বা পর্যায় যা ৩ থেকে ৫ বছর এমনকি সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথার প্রায় ৯০ শতাংশ চুল এনাজেন পর্যায়ে থাকে যখন চুলের বৃদ্ধি ঘটে।
ক্যাটাজেন (Catagen)
এনাজেন পর্যায়ের পরে শুরু হয় ক্যাটাজেন পর্যায় যার স্থায়ীত্বকাল ১০ দিনের মতো। এই পর্যায়ে ফলিকল সংকুচিত হতে থাকে এবং চুলের বৃদ্ধি মন্থর হয়ে যায়। মাথার সব চুলের মাত্র ৫ শতাংশ এই পর্যায়ে থাকে।
টেলোজেন (Telogen)
ক্যাটাজেনের পরবর্তী পর্যায়ের নাম হলো টেলোজেন যার স্থায়ীত্বকাল প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথার চুলের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এই পর্যায়ে থাকে যখন চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় তবে চুল পড়ে যায় না।
এক্সোজেন (Exogen)
এক্সোজেন হলো সর্বশেষ পর্যায় যখন স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চুল পড়ে যেতে থাকে এবং হেয়ার ফলিকল থেকে নতুন চুল গজানো শুরু হয়। একজন মানুষের মাথা থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়ে যেতে পারে যা এক্সোজেন পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
কিভাবে আপনার চুল মজবুত রাখতে পারেন?
এনাজেন পর্যায় যত দীর্ঘস্থায়ী হবে চুলের বৃদ্ধি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে। এই পর্যায় শেষ হয়ে গেলে চুলের বৃদ্ধি যেমন কমে যায় তেমনিভাবে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চুল পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এনাজেন পর্যায়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে অর্থাৎ চুল বৃদ্ধি করতে ও মজবুত রাখতে নিম্নলিখিত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ফলো করতে পারেন। যেমনঃ (Cronkleton, 2022)
খাদ্য ও পুষ্টি
চুল ভালো রাখতে চাইলে শরীর সুস্থ রাখা জরুরী অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো চুল সুন্দর ও মজবুতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, সবুজ শাকসবজি, শিমের বিচি, বাদাম ইত্যাদি খাবার গুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখুন।
ম্যাসাজ (Massage)
চুলের যত্নে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করা বেশ উপকারী হতে পারে। কারণ, ম্যাসাজের ফলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং যার মাধ্যমে চুলের গোড়ায় বেশি পুষ্টি পাওয়ার সুযোগ হয়ে থাকে। প্রতিদিন অন্তত একবার ৪/৫ মিনিট সময় নিয়ে মাথা ম্যাসাজ করুন।
ধুমপান বর্জন করতে হবে
ধুমপান করা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনিভাবে চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়। যারা ধূমপান করেন তাদের চুল পাতলা হয়ে যায় এবং সহজেই চুল পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। আপনার যদি ধুমপানের অভ্যাস থাকে তবে তা বর্জন করার চেষ্টা করুন।
শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার
প্রতিদিন শ্যাম্পু নয় বরং সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। কন্ডিশনার চুলকে মসৃণ করে এবং চুলপড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চুলের আগা কেটে ফেলা
চুলের অগ্রভাগের সামান্য অংশ কেটে দিলে তাতে সাময়িক ভাবে চুলের দৈর্ঘ্য কমে গেল বলে মনে হলেও এটি কিন্তু চুলের বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চুল আঁচড়ানো
নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে। এতে করে চুল মসৃণ থাকবে, চুলে জট বেঁধে যাবে না এবং চুলের গোড়ায় রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। তবে ভেজা চুল আঁচড়ানো যাবে না কারণ ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে। আর এই সময়ে চুল আঁচড়ানো হলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এলোভেরা
ত্বক ও চুলের যত্নে নিরাপদ ও কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে এলোভেরার জুড়ি মেলা ভার। মাথায় এলোভেরা ব্যবহার করার ফলে খুশকি দূর হয়, চুল পড়া কমে যায় এবং চুলের মসৃণতা বৃদ্ধি পায়। এলোভেরা পাতা থেকে সরাসরি জেল সংগ্রহ করে সপ্তাহে ২/৩ দিন মাথায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার এলোভেরা জেল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারে করার মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।
নারিকেল তেল
নারিকেল তেল হলো সবচেয়ে সহজলভ্য প্রসাধনী যা চুলের যত্নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নারিকেল তেলে রয়েছে লরিক এসিড নামক ফ্যাটি এসিড যা চুল মজবুত করতে সাহায্য করে। আপনার পছন্দমতো গোসলের আগে অথবা পরে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
পেঁয়াজের রস
মাথায় পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা মথার চুল পড়ে যাওয়া প্রতিকারের জন্য এবং হেয়ার ফলিকল থেকে চুলের বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ থেকে রস বের করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং ১৫ মিনিট পরে মাথা শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রস
মাথার ত্বকে লেবুর রস ব্যবহার করা হলে মাথার ত্বক ভালো রাখে, চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। লেবু চিপে রস বের করে সরাসরি মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং ১৫ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমে হেয়ার ফলিকলের জন্য উপকারী প্রোটিন সহ বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। মাথায় ডিমের কুসুম ব্যবহার করা হলে তা চুল গজাতে সহায়তা করে। ২/৩ টি ডিমের সাদা অংশ বাদ দিয়ে শুধু কুসুম নিয়ে তার সাথে সামান্য গরম করে নেওয়া ৩/৪ টেবিল চামচ নারিকেল তেল যোগ করে ভালোভাবে মেশানোর পর মাথায় লাগিয়ে রাখতে হবে। ১০/১৫ মিনিট পর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট
চুলের যত্নে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট বেশ জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। কারণ, এই পদ্ধতি চুল বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করে। হট অয়েল ট্রিটমেন্ট এর জন্য নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডো অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে ওভেনে গরম করে নিতে হবে। শরীরের জন্য সহনশীল এমন গরম অবস্থায় মাথার তালু ও চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলুন।
চুলে যেন আঘাত না লাগে
রাবার দিয়ে খুব শক্ত করে চুল বেঁধে রাখা যাবে না। হিট (Heat) দিয়ে যেসব চুলের স্টাইল করা হয় সেসব যতটা সম্ভব বর্জন করতে হবে। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা উত্তম। চুলে ঘর্ষণ কমানোর জন্য সিল্কের তৈরি বালিশের কভার ব্যবহার করতে পারেন।
কি চুল বৃদ্ধিতে প্রভাবিত করতে পারে?
চুলের বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন কতিপয় বিষয় হলোঃ
- জিনগত প্রভাব বা পারিবারিক ইতিহাস যা পরিবর্তন করা যায় না
- শরীরে হরমোনের পরিবর্তন
- পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি
- কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- মানসিক চাপ
- দ্রুত ওজন কমানো
- চুলে আঘাত লাগা
- কতিপয় রোগের প্রভাব ইত্যাদি
এছাড়াও আরোও কিছু কারণ রয়েছে চুল না বৃদ্ধি পাওয়ার এবং এর বেশ কিছু সমাধানও রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় এবং এর পরে চুল বৃদ্ধি
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে হরমোন জনিত নানাবিধ পরিবর্তন হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন হরমোন এনাজেন পর্যায়ের উপর প্রভাব ফেলে এবং এর ফলাফল হিসেবে দ্রুত গতিতে চুল বৃদ্ধি পায়। আবার সন্তান জন্ম হওয়ার পর এনাজেন পর্যায় শেষ হয়ে পরবর্তী পর্যায়গুলো অর্থাৎ ক্যাটাজেন, টেলোজেন ও সর্বশেষ এক্সোফেন পর্যায়ে পৌঁছায়। আর তাই দেখা যায় যে, সন্তান জন্মের পরে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক হারে চুল পড়ে যাচ্ছে। গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময় চুল পড়া সহ শরীরের যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্বে একজন গাইনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
চুলের বৃদ্ধি সম্পর্কে কখন ডাক্তার দেখাবেন?
ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে আশানুরূপ ফল পাওয়া না গেলে অথবা অস্বাভাবিক হারে চুল পড়তে থাকলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও শরীরের অন্য কোনো রোগের কারণে চুল পড়ছে বলে মনে হলে সেক্ষেত্রে চুলের আগে সেই রোগের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরী। কেননা, কারণ দূর করা না হলে শুধু চুলের যত্ন করা চুল পড়া রোধ ও চুলের বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না।
References
Cronkleton, E. (2022, October 31). 10 Natural Hair Treatment Tips for Hair Growth. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/regrow-hair-naturally
Roland, J. (2020, September 25). What Are the Four Stages of Hair Growth? Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/stages-of-hair-growth
Last Updated on November 5, 2023
 
			
					 
									 
	 
	 
	 
	 
	
Leave A Comment