আজকাল প্রায় সব মানুষই কমবেশি সৌন্দর্য সচেতন। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের দাগহীন, মসৃণ, সুন্দর চেহারা দেখাই সবার কাছে কাম্য। এছাড়াও, বাইরে আর দশজনের সামনে নিজেকে কতটা ভালভাবে উপস্থাপন করা যায় সেটা নিয়েও চিন্তা থাকে প্রচুর। কিন্তু, দাগহীন, সুন্দর, টানটান চেহারাতেও অনেক সময় উঁকি দেয় অবাঞ্ছিত কিছু লোম। বিশেষ করে ঠোঁটের উপরের অংশে, কখনো থুতনিতেও। যা বাঁধা হয়ে দাড়ায় চেহারার বাহ্যিক সৌন্দর্যে। মেকআপ করেও ঢাকা যায় না সবসময় বিব্রতকর এসব লোম। হেয়ার রিমোভাল ক্রিম ব্যবহার, ক্যামিকাল ফেসিয়াল, থ্রেডিং, লেজার কত কিছুরই না আশ্রয় নেন মানুষ এই অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে। সপ্তাহ না যেতেই আবার লোম তো বের হয়ে যায়ই, দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্ষতিরও কারণ হয় এসব প্রক্রিয়া।
সুখবর হচ্ছে, এই অবাঞ্চিত লোম কিন্তু দূর করা যায় কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেও। ত্বকের জন্য যা নিরাপদও। আজকে আলোচনা করবো এমনই কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে।
Table of Contents
মুখের লোম দূর করার উপায়
১. হলুদ ও দুধের ব্যবহার
এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মুখের লোম দূর করার জন্য, একটি বাটিতে এক টেবিল চামচ দুধ ও এক টেবিল চামচ হলুদ গুড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার আঙ্গুল ব্যবহার করে মিশ্রণটির প্রলেপ মুখের অবাঞ্ছিত লোমযুক্ত যায়গাগুলোতে সমানভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ২০ মিনিট, প্রলেপটি পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। প্রলেপ শুকিয়ে আসার পর ভেজা আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে ঘষে প্রলেপটি পরিষ্কার করতে হবে।
লোম যেদিকে বাড়ন্ত, তার ঠিক উল্টোদিকে চক্রাকারে ঘষতে হবে। প্রলেপ উঠে আসলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে ত্বক।
যে কোন উপকরণ ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নেয়া জরুরী। অর্থাৎ, ব্যবহৃত উপাদানগুলি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত কিনা বুঝতে অল্প পরিমাণ মিশ্রণ আগে ত্বকের কোথাও লাগিয়ে দেখতে হবে, কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না। ত্বক লাল হয়ে গেলে, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হলে সেইসব উপকরণের ব্যবহার ত্বকে না করাই ভালো।
২. জেলাটিনের ব্যবহার
বাজার থেকে কেনা পিল অফ মাস্ক কিংবা হেয়ার রিমোভাল মাস্কের পরিবর্তে জেলাটিন ব্যবহার করে ঘরে সহজেই বানানো যেতে পারে ফেইস মাস্ক। এর জন্য আপনাকে এক টেবিল চামচ ফ্লেভার ও রংবিহীন জেলাটিন পাউডারের সাথে মেশাতে হবে দেড় টেবিল চামচ দুধ ও কয়েক ফোটা এসেনশিয়াল অয়েল। এরপর মিশ্রণটিকে ১০ থেকে ১২ সেকেন্ডের জন্য মাইক্রোওয়েভে গরম করতে হবে। এতে জেলাটিন দুধের সাথে গলে মিশে যাবে পুরোপুরি। ত্বকের চামড়ায় সহ্য হয় এমন হালকা কুসুম গরম তাপমাত্রায় আসার পর মিশ্রণটি এবার ত্বকের অবাঞ্চিত লোমযুক্ত যায়গায় সমানভাবে লাগিয়ে দিতে হবে।
প্রলেপটি ঠাণ্ডা হয়ে পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে, হাত দিয়ে একটু একটু করে টেনে তুলে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রেও লোম যেদিকে বাড়ন্ত, ঠিক তার উল্টো দিকেই টানতে হবে প্রলেপটি। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে মুখ।
৩. মধুর ব্যবহার
মুখের অবাঞ্ছিত লোম তুলতে মধুর ব্যবহারও অনেকটা কার্যকরী। ওয়াক্সিং এর মতো অতটা প্রখর নয় বলে ত্বকে অস্বস্তি বোধের ঝুঁকিও কম। এই পদ্ধতিতে লোম দূর করতে এক টেবিল চামচ মধুর সাথে আধা টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশাতে হবে। এই মিশ্রণটা এরপর মুখের লোমযুক্ত যায়গায় লাগিয়ে রেখে দিতে হবে অন্তত ২০ মিনিট সময়।
২০ মিনিট পর পরিষ্কার নরম কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে, ত্বকে আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। মধু-লেবুর প্রলেপ ত্বক থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলে, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. চিমটা বা টুইজার ব্যবহার
ঘরে বসেই গোঁড়া থেকে লোম টেনে তোলার জন্য বাজারে পাওয়া যায় ধাতব চিমটা বা টুইজার। অন্য যে কোন পদ্ধতি থেকে এই পদ্ধতি ব্যবহারে লোমহীন থাকা যায় বেশি সময় ধরে। তবে গোঁড়া থেকে টেনে তোলার কারনে ব্যাথাও হতে পারে কিছুটা। একসাথে বেশি লোম চিমটায় না আটকিয়ে একটা একটা করে লোম তুললে, ব্যাথা পাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে কিছুটা।
এছাড়াও এই প্রক্রিয়া করার আগে গরম ভাপ নিয়ে নিলে, লোমকূপ প্রশস্ত হয়ে যাবে। এতে লোম উঠে আসবে ব্যাথাহীন ভাবে সহজেই। আর প্রক্রিয়া শেষে মুখে বরফ ঘষে নিতে হবে। প্রতিবার ব্যবহারের পর ব্যবহৃত চিমটা বা টুইজার ভালো করে জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার যায়গায় রাখতে হবে।
(Cobb, 2022)
৫. চিনির ব্যবহার
অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে ওয়াক্সিং হচ্ছে সবচেয়ে পরিচিত পদ্ধতি। আর পার্লারের মতো ওয়াক্সিং ঘরে বসেই করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন চিনির তৈরি ওয়াক্স। ঘরোয়া এই ওয়াক্সটি তৈরি করতে আপনার লাগবে এক কাপ চিনি, ১/৪ কাপ লেবুর রস, ১/৪ কাপ পানি।
এই ৩ টি উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি প্যানে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। ১০ মিনিট পর মিশ্রণটির রং বদলানো শুরু হলে, মিশ্রণটি চুলা থেকে নামিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য একটি পাত্রে রাখতে হবে। যেন ত্বক পুড়ে না যায়। মিশ্রণটি যখন মধু থেকেও কিছুটা ঘন ও ত্বকে ব্যবহার করার মতো তাপমাত্রায় আসবে, তখনই এটি ত্বকে দেয়ার জন্য তৈরি।
ওয়াক্স করার একদিন আগে ত্বকে স্ক্রাব ব্যবহার করলে, মৃত কোষ ও ময়লা দূর হয়ে যাবে। এতে আঠালো ওয়াক্স সহজেই লোমগুলোকে শক্ত করে আটকাতে পারবে।
এরপর এই মিশ্রণটি পরিষ্কার আঙ্গুল দিয়ে তুলে লোমযুক্ত ত্বকে সমানভাবে লাগাতে হবে। হালকা জমাট বেধে আসলেই কিছুক্ষনের মধ্যেই হাত দিয়ে অল্প অল্প করে টেনে তুলতে হবে। খুব বেশি দেরী করা যাবে না। নয়তো মিশ্রণটি ত্বকে শক্ত হয়ে বসে গেলে, টেনে তোলার সময় ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর মিশ্রণটি ত্বকে লাগানো ও তুলে ফেলা উভয় কাজই করতে হবে, লোম যেদিকে বাড়ছে তার উল্টো দিক থেকে।
চিনির ওয়াক্স ব্যবহারের পরবর্তী ২৪ ঘন্টা ত্বকে কোন ময়েশ্চারাইজার না লাগানোই ভালো। নয়তো ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হওয়া ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনের আশঙ্কা থাকে। আর ব্যাকটেরিয়ার পছন্দের খাবারই হচ্ছে মিষ্টি! (Saguin 2022)
বাধ্য হয়েই অনেকে বারবার যান পার্লারে, করিয়ে আসেন অস্থায়ীভাবে লোম দূরীকরণের ব্যায়বহুল প্রক্রিয়া। সাথে বাসায় নিয়ে আসেন নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আজকের আলোচনা করা পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে আশা করি আপনাদের অনেকেরই এই অযাচিত ব্যয় ও কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। যেহেতু সবার ত্বক একরকম নয়, সব উপাদানও সব ধরণের ত্বকে মানানসই নয়। তাই, কোন একটি পদ্ধতি আপনার ত্বকে মানানসই মনে না হলে, সহজেই ব্যবহার করতে পারেন আরেকটি পদ্ধতি। কারণ, সব উপাদান তো রয়েছে আপনার ঘরেই!
References
Richter C. (2022, October 31) How to Remove Hair from Your Upper Lip Naturally, Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/how-to-remove-hair-from-upper-lip-naturally
Saguin J.(2022, July 7) Learn How to Make Sugar Wax With This Easy DIY Recipe, Retrieved from Good Housekeeping: https://www.goodhousekeeping.com/beauty/anti-aging/a39896807/how-to-make-sugar-wax/
Last Updated on October 3, 2023
Leave A Comment