দুধ, আইসক্রিম ও কলার সংমিশ্রণে বানানা মিল্কশেক (Banana milkshake) তৈরি করা যায় যা খেতে খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। তবে বানানা মিল্কশেক অনেক ক্যালরি সরবরাহ করে যার ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও যাদের ক্ষেত্রে দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয় (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি) তাদের জন্য মিল্কশেক না খায়াই ভালো।
সবার জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর একটি রেসিপি হতে পারে কলার দুধ। এই শব্দটির সাথে সম্ভবত বেশিরভাগ মানুষই পরিচিত নয়। সমস্যা নেই, এই অনুচ্ছেদে আমরা আপনাদের কলার দুধ এবং এর পুষ্টিগুণের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। এছাড়াও কলার দুধের স্বাস্থ্য উপকারিতা, বানানোর নিয়ম এবং খাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা জানতে এই অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
কলার দুধ কি?
কলার দুধ বলতে কলা ও পানি ব্লেন্ডারের সহায়তায় জুসের মতো তৈরি করা বোঝায়। এতে দুধ যোগ করার প্রয়োজন হয়না এবং খেতে কলার মতো (দুধের মতো নয়) হলেও এটিকে কলার দুধ নামকরণ করা হয়েছে।
আমেরিকান স্বাস্থ্য বিষয়ক মিডিয়া ‘হেলথলাইন’ এর ওয়েবসাইটে ‘কলার দুধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আমরা চাইলে এটিকে কলার জুস বলতে পারি।
কলার দুধ কিভাবে তৈরি করবেন?
কলার দুধ বা জুস তৈরি করার জন্য উপকরণ হিসেবে লাগবে একটি পাকা কলা ও এক কাপ (২৪০ মিলিলিটার পরিমাণ) বিশুদ্ধ পানি। কলা ছোট ছোট টুকরায় কেটে নিতে পারলে ভালো। এবার ব্লেন্ডারে পানি ও কলা এক মিনিট ব্লেন্ড করতে হবে।
গরমের দিনে কলার জুস তৈরিতে বরফ কুচি বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হলে খেতে মজা লাগবে। কলার জুসের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য চিনি বা মধু যোগ করা উচিত হবে না। কারণ এতে ক্যালরি বেড়ে যাবে।
যাদের বাদাম খেলে এলার্জি হয় না এমন ব্যক্তিদের জন্য কলার জুসে বাদাম যোগ করা যেতে পারে। বাদাম একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা দীর্ঘসময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
কলার দুধ খাওয়ার নিয়ম
দিনের যেকোনো সময় কলার দুধ বা জুস খাওয়া যেতে পারে। তবে একবার জুস বানানোর পর দীর্ঘসময় পর্যন্ত রেখে দেওয়া যাবে না।
ওটসের সাথে কলার জুস মিশিয়ে দারুন একটি ব্রেকফাস্ট (সকালের খাবার) হতে পারে যা খেতে খুব মজাদার ও স্বাস্থ্যকর হবে। এছাড়াও উত্তপ্ত দুপুরের ক্লান্তি দূর করার জন্য কলার জুস খাওয়া উপকারী হবে।
কলার দুধের পুষ্টি
১টি মাঝারি (১০০ গ্রাম) সাইজের কলা ও এক কাপ (২৪০ মিলিলিটার পরিমাণ) পানি দিয়ে তৈরি কলার দুধ বা জুসের পুষ্টি উপাদান নিচে তুলে ধরা হলো। (Streit, 2021)
- ১০৫ ক্যালরি
- ১.৩ গ্রাম প্রোটিন
- ১ গ্রামের কম ফ্যাট
- ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ৩.১ গ্রাম ফাইবার
- ১৪ গ্রাম সুগার
এছাড়াও কলার জুস থেকে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি সহ প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
কলার দুধ বা জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী
কলাতে বিদ্যমান ফাইবার পরিপাকতন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে।
নিয়মিত কলা বা কলার জুস খাওয়ার অভ্যাস কোলন ক্যান্সার (Colon cancer) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। (Bjarnadottir, 2023)
হার্টের জন্য উপকারী
কলা পটাশিয়াম ও এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাবার যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এছাড়াও নিয়মিত কলার জুস খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগের (হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক) ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
স্বাস্থ্যকর পানীয়
কলার জুসের বিশেষ উপযোগিতা হলো পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পর কলার জুস খাওয়ার ফলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
এছাড়াও কোমল পানীয় পানের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যকর কলার জুস খাওয়া উপকারী হবে।
যাদের জন্য উপযোগী
- শিশু বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা কলা খেতে না চাইলে কলার জুস বানিয়ে পরিবেশন করা যেতে পারে।
- যারা নিরামিষ আহার করেন (দুধ সহ সবধরনের প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার বর্জন করেন) তাদের জন্য কলার দুধ দারুণ একটি খাবার হতে পারে।
- গরুর দুধ খেলে যাদের এলার্জি হয় বা ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্ট ব্যাক্তিদের জন্য কলার দুধ একদম নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কলার জুসের অপকারিতা
কলার জুস বেশি খাওয়া যাবে না। কারণ এতে উপকারের পরিবর্তে অপকার হতে পারে।
কিডনি রোগের আক্রান্ত ব্যক্তি
যাদের কিডনিতে সমস্যা (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) রয়েছে তাদের জন্য পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। অর্থাৎ কলার জুস খাওয়া যাবে না বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কম খেতে হবে।
ডায়াবেটিস
পাকা কলাতে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বেশি খাওয়া হলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য পরিমিত পরিমাণে পাকা কলা বা কলার জুস খেতে হবে।
ক্যালরি
ক্ষুধা নিবারণের জন্য কলার জুস খেয়ে দীর্ঘসময় কোনো খাবার খাওয়া না হলে অথবা খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস কলার জুস পান করে অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া হলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকা্রী হবে। তবে যদি কলার জুস অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এমনিতেই ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যাবে যা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দুধ ও কলা
দুধ ও কলা মিশিয়ে খাওয়ার অতিরঞ্জিত উপকারিতা সম্পর্কে অনলাইনে বিভিন্ন লেখা দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে দুধ ও কলা একসাথে মেশানো হলে বিশেষ কোনো পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ দুধ ও কলা আলাদা খেলে যে পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে দুধ ও কলা মেশানোর ফলেও একই অনুপাতে পুষ্টি পাওয়া যায়।
যাদের দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয় না এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি নেই তাদের জন্য পানির পরিবর্তে দুধ দিয়ে কলার জুস তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষ করে যারা কঠোর পরিশ্রম করেন তাদের জন্য অনেক বেশি ক্যালরি দরকার হয়। এমন ব্যক্তিদের জন্য দুধ দিয়ে তৈরি কলার জুস খাওয়া অনেক উপকারী হবে।
References
Bjarnadottir, A. (2023, July 07). 11 Evidence-Based Health Benefits of Bananas. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/11-proven-benefits-of-bananas
Streit, L. (2021, April 08). What Is Banana Milk? Nutrition, Benefits, and How to Make It. Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/nutrition/banana-milk
Last Updated on December 23, 2023
Leave A Comment