ভেরিকোজ ভেইন (Varicose veins) হলো রক্তনালীর একটি রোগ যার ফলে পায়ের শিরা আঁকাবাঁকা অবস্থায় নীল হয়ে ফুলে যেতে দেখা যায়। এটি জটিল প্রকৃতির কোনো রোগ নয় আর তাই এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। কতিপয় নিয়ম অনুসরণ করার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় যার মধ্যকার একটি হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা।
এই অনুচ্ছেদে ভেরিকোজ ভেইন রোগীদের জন্য উপকারী ১০টি খাবার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও কোন খাবারগুলো বর্জন করতে হবে সেই বিষয়ে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
ভেরিকোজ ভেইন রোগীর খাবার
ভেরিকোজ ভেইন রোগীদের জন্য যেসব খাবার খাওয়া উপকারী হবে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Maharana, 2021)
১। বীটরুট (Beetroot)
পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার হলো বীটরুট যার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত বীটরুট খাওয়ার ফলে ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও বীটরুট খাওয়া পায়ের রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখার মাধ্যমে ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে।
বীটরুটের উপকারিতা এর কারণ হলো লাল বর্ণ অর্থাৎ Betacyanin নামক একটি উপাদানের প্রভাবে বীটরুট লাল বর্ণের হয়ে থাকে। আর এই উপাদানটির উপস্থিতির কারণে বীটরুট এমন উপকারী হয়ে থাকে।
খাবার তালিকায় মাঝেমধ্যে বীটরুট রাখা যেতে পারে যা সালাদ হিসেবে অথবা জুস বানিয়ে খাওয়া যায়। বীটরুট খেলে প্রস্রাবের বর্ণ কিছুটা লাল হয়ে যায়। তবে তাতে কোনো সমস্যা হবে না।
২। আপেল
পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় সেরা একটি খাবার হলো আপেল যা প্রতিদিন খাওয়া যাবে। আপেলে বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট (Antioxidant) শিরার কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেলের প্রদাহ নাশক গুণাবলী ভেরিকোজ ভেইনের লক্ষণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
৩। আঙ্গুর
প্রায় সবার কাছেই পছন্দের একটি খাবার হলো আঙ্গুর যা প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ। নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়ার অভ্যাস ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে। সবুজ বর্ণের আঙ্গুরের তুলনায় লাল ও কালো আঙ্গুরে বেশি এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।
৪। বাদাম
বাদাম কে বলা হয় সুপার ফুড অর্থাৎ এটি অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার। বাদামে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে এবং ভেরিকোজ ভেইন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৫। আদা
আদার প্রদাহ নাশক গুণাবলী রয়েছে যা ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রান্নার কাজে আদা ব্যবহার করার পাশাপাশি চায়ের সাথে যোগ করে অথবা অল্প পরিমাণ আদা সরাসরি মুখে নিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হলে উপকার পাওয়া যাবে।
৬। হলুদ
হলুদে থাকা কারকিউমিনের প্রদাহ নাশক গুণাবলী ভেরিকোজ ভেইন নিরাময় করতে সাহায্য করে। রান্নার কাজে হলুদ ব্যবহারের পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ হলুদের গুঁড়া এক গ্লাস পানিতে গুলিয়ে খাওয়া উপকারী হবে।
তবে গর্ভবতী নারীদের জন্য এভাবে হলুদ খাওয়ার ব্যাপারে গাইনী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
৭। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার ভেরিকোজ ভেইন নিরাময় ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মাছ হলো ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো একটি উৎস। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও ডিম, দুধ, চিয়া সীড, কালোজিরা, তিসি, বাদাম, শিমের বিচি ও শাকসবজি থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। (mlibbey, 2018)
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
৮। অ্যাভোকাডো (Avocado)
অ্যাভোকাডো বিদেশী ফল হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে পাওয়া যাচ্ছে এবং সালাদ হিসেবে খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। পুষ্টিগুণ (ভিটামিন, মিনারেলস ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড) সম্পন্ন অ্যাভোকাডো খাওয়া ভেরিকোজ ভেইন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৯। শাকসবজি
ভেরিকোজ ভেইন নিরাময় ও প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি রাখতে হবে। শুধুমাত্র একধরনের শাকসবজি না খেয়ে বরং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খেতে হবে।
১০। সাইট্রাস ফুড (Citrus food)
সাইট্রাস গোত্রীয় ফল খাওয়া ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। লেবু, কমলা, আঙ্গুর, মাল্টা, আমলকী ইত্যাদি হলো সাইট্রাস ফুড যা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা উচিত।
ভেরিকোজ ভেইন রোগীর যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত রোগীদের জন্য কতিপয় খাবার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই জাতীয় খাবারগুলো যতটা সম্ভব কম খেতে হবে অথবা একদম বর্জন করতে পারলে ভালো।
- সরল শর্করা জাতীয় খাবার গুলো যতটা সম্ভব কম পরিমাণে খেতে হবে। যেমনঃ সাদা ভাত ও ময়দার তৈরি খাবার (পাউরুটি ও বিস্কুট)। এর পরিবর্তে বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস ইত্যাদি খাওয়া উপকারী হবে।
- একজন মানুষের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ গ্রাম লবণ খেতে হবে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত রোগীর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই খাবার তৈরির সময় বেশি মাত্রায় লবণ ব্যবহার করা যাবে না অর্থাৎ অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- চিপস ও ফাস্টফুড বর্জন করতে হবে। এছাড়াও কৌটাজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম পরিমাণে খেতে হবে।
- লাল মাংস যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
- ধুমপান ও মদ্যপান করা যাবে না।
শুধুমাত্র খাবার সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলো মেনে চললে হবে না বরং ভেরিকোজ ভেইন নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
- দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে বা বসে না থেকে মাঝেমধ্যে হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
- পায়ে বিশেষ ধরনের মোজা (Compression stocking) পড়তে হবে যা পায়ে রক্ত সঞ্চালনের জন্য সুবিধাজনক হবে।
- পায়ের দিকটা শরীরের তুলনায় উঁচুতে রেখে রাতে ঘুমাতে হবে।
- টাইট প্যান্ট ও উঁচু হিলের জুতা পরিধান করা যাবে না।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করতে হবে।
তীব্র প্রকৃতির ভেরিকোজ ভেইন এর ক্ষেত্রে খাবার ও ঘরোয়া টিপসের উপর ভরসা না করে বরং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ভেরিকোজ ভেইন এর ডাক্তার হলো ভাস্কুলার সার্জন যারা সাধারণত সার্জারির মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করে থাকেন।
References
Maharana, D. D. (2021, March 13). Food Items To Include In Your Diet If You Have Varicose Veins. Retrieved from Pharm Easy: https://pharmeasy.in/blog/food-items-to-include-in-your-diet-if-you-have-varicose-veins/
mlibbey. (2018, May 11). 10 Best foods for varicose veins remedy. Retrieved from Bellamh Vein Center: https://veinmontana.com/10-best-foods-for-varicose-veins-remedy/
Last Updated on November 19, 2023
Leave A Comment