মিলিটারি ডায়েট (The military diet) নাম শুনে আর্মি বা সৈনিকদের জন্য নির্দেশিত ডায়েট মনে হলেও আসলে তা নয়। বরং বিশেষ এই ডায়েট টি বর্তমানে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে মাত্র ৩ দিনে ১০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো যায় বলে।
এই অনুচ্ছেদে আমরা কথা বলবো আপনার জন্য মিলিটারি ডায়েট করা উচিত হবে কিনা এবং ওজন কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করা কতটা যৌক্তিক সেই বিষয়ে। সেই সাথে অনুচ্ছেদের শেষের দিকে রয়েছে ওজন কমানোর খাবার তালিকা।
Table of Contents
৭ দিনে মেদ কমানোর উপায়
মিলিটারি ডায়েট ৩ দিনের ডায়েট হিসেবে প্রচলিত হলেও এটি মূলত ৭ দিনের একটি ডায়েট প্ল্যান। কিভাবে এই ডায়েট প্ল্যানটি ওজন কমাতে পারে এবং তা কতটা স্থায়ী হবে সেই বিষয়ে অনেকের মনেই নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে। তো চলুন মিলিটারি ডায়েটের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে কথা বলা যাক।
মিলিটারি ডায়েট হলো একধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ডায়েট (Intermittent fasting diets) যা তুলনামূলক সহজ এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত পালন করা যায়। কারণ ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর ধরন হলো একটানা ডায়েট কন্ট্রোল করতে হয় না। মাঝে মধ্যে বিরতি নেওয়া যায় যা এটিকে সবার জন্য সহজ ও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
মিলিটারি ডায়েটের ২ টি পর্যায় রয়েছে যার প্রথম ৩ দিনে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে পরবর্তী ৪ দিনে খুব বেশি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় না। ৩+৪ মিলিয়ে মোট ৭ দিনের এই ডায়েট প্ল্যানটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ পাউন্ড বা ৪.৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। শরীরের ওজন এবং ডায়েট চার্ট যথাযথ ভাবে পালন করা হয়েছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে ওজন কমার পরিমাণের ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। (Lang, 2021)
মিলিটারি ডায়েটের ক্ষেত্রে প্রথম তিন দিনে মাত্র ১১০০ থেকে ১৪০০ ক্যালরি পর্যন্ত গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর পরবর্তী ৪ দিনের জন্য ১৫০০ ক্যালরি পর্যন্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে থাকে। মিলিটারি ডায়েটের মাধ্যমে কম পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করা হয় যা শরীরের মেদ কমানোর মূল মন্ত্র। সেই সাথে প্রথম তিন দিনের প্রত্যেক বেলার জন্য আলাদা আলাদা খাবার গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এই বিশেষত্ব পূর্ণ খাদ্য তালিকা মেদ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও যারা নিরামিষাশী (vegetarian) অর্থাৎ প্রাণিজ আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন না তাদের জন্য মিলিটারি ডায়েট প্লানে রয়েছে বিশেষ খাবার তালিকা।
মাত্র এক সপ্তাহের একটি মিলিটারি ডায়েট করে দীর্ঘমেয়াদী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বপ্ন দেখা অযৌক্তিক। কারণ একবার ডায়েট করে ওজন কমানো গেলে পরবর্তীতে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ এবং সেই সাথে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা হয় তবে আবারও শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। আর তাই মিলিটারি ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমানোর পরবর্তীতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
উল্লেখ্য যাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা ওজন রয়েছে তাদের জন্য মিলিটারি ডায়েট প্ল্যানটি ১ মাস পর্যন্ত পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ অনেকের শরীরে BMI (body mass index) অনুযায়ী অনেক বেশি পরিমাণে ওজন রয়েছে যা এক সপ্তাহ ডায়েটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। আর তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজন মাফিক ১ মাস বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত মিলিটারি ডায়েট করার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তবে দীর্ঘদিন যাবত এই ডায়েট করার পূর্বে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
৭ দিনে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে মিলিটারি ডায়েট
শরীরের মেদ কমানো মানেই হলো ওজন কমে যাওয়া। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তা থেকে ক্যালরি পেয়ে থাকি যা দ্বারা শরীরের সব ধরনের কার্যকলাপ চলে। প্রতিদিনের খাবার থেকে প্রাপ্ত ক্যালরি কাজকর্মের মাধ্যমে ফুরানো সম্ভব না হলে অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে থাকলে তা চর্বি বা মেদ আকারে জমা হতে থাকে। মিলিটারি ডায়েটের মাধ্যমে কম পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করা হয়ে থাকে যা শরীরে মেদ জমতে দেয় না। উপরন্তু কম ক্যালরি গ্রহণের ফলে শরীরের ক্যালরি চাহিদা মেটাতে জমাকৃত ফ্যাট বা মেদ পুড়ে ক্যালরি উৎপন্ন হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় মেদ কমে যায় এবং সেই সাথে শরীরের ওজন কমতে থাকে।
মিলিটারি ডায়েটের সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা হলো প্রথম ৩ দিন ডায়েট করার পর পরবর্তী ৪ দিনে ক্যালরির পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো যায়। এই সময়ে যে পরিমাণ (১৫০০) ক্যালরি গ্রহণ করা হয় তাতে ব্যায়াম করা যাবে। আর ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের ওজন কমানো প্রক্রিয়াটি আরও বেশি দ্রুততর হতে থাকে।
উল্লেখ্য ১৪০০ ক্যালরির বেশি গ্রহণ করা না হলে ব্যায়াম করা যাবে না। তাতে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এমনকি তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাই অধিকাংশ ডায়েটের সাথেই ব্যায়াম করা যায় না কারণ প্রায় সব ধরনের ডায়েটের ক্ষেত্রেই খুবই কম ক্যালরি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। মিলিটারি ডায়েটের প্রথম তিন দিনে কম ক্যালরি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হলেও পরবর্তী ৪ দিনে ব্যায়াম করার জন্য যথেষ্ট ক্যালরি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
মিলিটারি ডায়েটের অসুবিধা
মেদ কমানোর উপায় হিসেবে মিলিটারি ডায়েটের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে যা জানার মাধ্যমে এই ডায়েটটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা বুঝতে সক্ষম হবেন। মিলিটারি ডায়েটের উল্লেখযোগ্য দুইটি অসুবিধা হলো:
১। কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হয় যার ফলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান যেমন ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেলস এর ঘাটতি হয়ে থাকে যার ফলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যঘাত ঘটে। এছাড়াও কম ক্যালরি গ্রহণের দরুন দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ হতে পারে।
২। মিলিটারি ডায়েট চার্টে যে সমস্ত খাবার গুলো রয়েছে তাতে অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বিদ্যমান। আর এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
ওজন কমানোর ঔষধ
ওজন কমানোর জন্য যেমন নানাবিধ ডায়েট প্ল্যান রয়েছে তেমনি আবিস্কার হয়েছে বিভিন্ন ওষুধ। বহুল প্রচলিত এবং কার্যকরী ওষুধ সমূহ এই পর্যায়ে তুলে ধরা হলো। (Gunnars, 2017)
Garcinia cambogia
এই ওষুধটি ক্ষুধা বোধ কমায় এবং শরীরে চর্বি জমতে বাঁধার সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে শরীরের ওজন কমে যায়। তবে এই ওষুধটির কার্যকরিতা খুবই কম কারণ এটি কয়েক সপ্তাহে মাত্র ১ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে পারে। এছাড়াও এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হজমে সমস্যা দেখা দেয়।
Hydroxycut
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওষুধ হলো Hydroxycut যা একটানা তিনমাস ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯.৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমে যায়। তবে এই ওষুধ ব্যবহারের অসুবিধা হিসেবে দেখা যায় দুর্বলতা, বিষন্নতা, খিটখিটে মেজাজ, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া।
Orlistat
এই ওষুধটি অন্ত্রের মাধ্যমে চর্বি জাতীয় খাবার শোষণের ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে। আর চর্বি জাতীয় খাবার থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায় যা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। তবে চর্বি শোষণে বাঁধার সৃষ্টি করার দরুন এই ওষুধটি খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন এ, ডি, ই, কে ইত্যাদির ঘাটতি দেখা দেয়।
Glucomannan
এটি ক্ষুধা বোধ কমায় যা কম খাবার খেতে সহায়তা করে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওজন কমতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে Glucomannan একটানা পাঁচ সপ্তাহ গ্রহণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪.৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমে যায়।
Synephrine
এটি ক্ষুধা কমায় এবং শরীরে জমে থাকা চর্বি পুড়ে ক্যালরি উৎপন্ন করে যার ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে যায়। এই ওষুধটি নিয়ে খুবই কম গবেষণা হয়েছে এবং এটি হার্টের (Heart) উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
ওজন কমানোর ওষুধের তালিকায় আরও রয়েছে Contrave, Phentermine, Qsymia, Forskolin ইত্যাদি। সমস্ত ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
উল্লেখ্য শরীরের নানাবিধ রোগের কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে। যেখানে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবং সেই সাথে রোগের কারণে বেড়ে যাওয়া ওজন কমে যায়। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে কমন যে রোগটির কারণে শরীরের ওজন বেড়ে যায় তা হল হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism)।
হাইপোথাইরয়েডিজম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন
খুব তাড়াতাড়ি চিকন হওয়ার উপায় (সার্জারি)
ডায়েট প্লান অথবা ওষুধ খাওয়া যেটাই হোক না কেনো সেক্ষেত্রে তা থেকে ফল পেতে ৭ দিন, ১ মাস অথবা তারও বেশি সময় লেগে থাকে। তবে এর চেয়েও কম সময়ে অর্থাৎ সবচেয়ে কম সময়ে চিকন হওয়ার উপায় বলতে বোঝায় সার্জারি করা। সাধারণত রোগ বা বড় ধরনের অসুস্থতার সাথে সার্জারি বিষয়টি সম্পর্কিত বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বর্তমান সময়ে শরীরের মেদ কমানো বা চিকন হওয়ার উপায় হিসেবেও কিছু সার্জারি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেমন:
লাইপোসাকশন (Liposuction)
এটি এমন একধরনের সার্জারি যার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করা যায়। অত্যাধুনিক এই চিকিৎসা ব্যবস্থাটি নিরাপদ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত এবং ব্যথাহীন তবে কিছুটা ব্যয়বহুল। এরপরও অনেক মানুষ খুব দ্রুত শরীরের অতিরিক্ত মেদ বা ওজন কমানোর উপায় হিসেবে এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করছেন যা বাংলাদেশের কিছু প্রাইভেট হাসপাতালে হয়ে থাকে।
বারিয়াট্রিক সার্জারি (Bariatric surgery)
এটিও একধরনের সার্জারি তবে এর মাধ্যমে সাথে সাথেই শরীরের ওজন কমে না। এই পদ্ধতিতে পাকস্থলীর কিছু অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয় যার ফলে কম পরিমাণে খাবার খেলেই পেট ভরে যায়। আর ক্রমাগত কম পরিমাণে খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সাধারণত খুব বেশি জরুরি না হলে অথবা শরীরের ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে না গেলে সার্জারিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ সার্জারি মানেই একটি জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আর তাই সহজে শরীরের ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে বেছে নিতে হবে যে কোনো একটি ডায়েট প্ল্যান। হতে পারে সেটা মিলিটারি ডায়েট অথবা জিএম ডায়েট বা কিউকাম্বার ডায়েট।
মিলিটারি ডায়েটের খাবার তালিকা
মিলিটারি ডায়েটের জন্য যে সমস্ত খাবার গুলো প্রয়োজন হবে তার একটি তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো:
- চা ও কফি
- আঙুর বা কমলা
- কলা
- আপেল
- মাখন (peanut butter)
- ডিম
- টুনা মাছ
- হট ডগ (Hot dogs)
- মাংস
- শিমের বিচি
- ব্রকলি
- গাজর
- বিস্কুট (saltine crackers)
- পনির (cottage cheese)
- ভ্যানিলা আইসক্রিম ইত্যাদি
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট (The Military Diet)
কি কি খাবার প্রয়োজন হয় তা জানলেই শেষ নয় বরং কোন দিনের কোন বেলায় কি খাবার খেতে হবে সেই বিষয়ে জানা জরুরি। মিলিটারি ডায়েটের প্রথম তিন দিনের ডায়েট চার্ট নিচে দেওয়া হলো। (Crichton-Stuart, 2020)
প্রথম ৩ দিনের ডায়েট চার্ট
প্রথম দিন (সর্বমোট ১৪০০ ক্যালরি)
সকাল:
- একটি টোস্ট বিস্কুট
- কয়েকটি আঙুর অথবা অর্ধেক কমলা
- ২ টেবিল চামচ মাখন (চিনি ও লবণ ছাড়া)
- ১ কাপ চা অথবা কফি
দুপুর:
- ১ কাপ টুনা মাছ
- একটি টোস্ট বিস্কুট
- ১ কাপ চা অথবা কফি
রাত:
- ৮৫ গ্রাম মাংস
- ১ কাপ শিমের বিচি
- অর্ধেক কলা
- একটি আপেল
- একবাটি ভ্যানিলা আইসক্রিম
দ্বিতীয় দিন (সর্বমোট ১২০০ ক্যালরি)
সকাল:
- একটি ডিম
- একটি টোস্ট বিস্কুট
- অর্ধেক কলা
দুপুর:
- একটি ডিম
- এক কাপ পরিমাণ পনির
- ৫ টি বিস্কুট
রাত:
- ২ টি হট ডগ
- ১ কাপ ব্রকলি
- ১ টি গাজর
- অর্ধেক কলা
- আধা কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম
তৃতীয় দিন (সর্বমোট ১১০০ ক্যালরি)
সকাল:
- পাঁচটি বিস্কুট
- এক কাপ পনির
- একটি আপেল
দুপুর:
- একটি ডিম
- একটি টোস্ট বিস্কুট
রাত:
- এক কাপ টুনা মাছ
- অর্ধেক কলা
- এক কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম
মিলিটারি ডায়েটের ক্ষেত্রে দিনে তিনবেলা খাওয়ার মাঝে আর কোনো নাস্তা (snacks) গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে ক্ষুধা বোধ কমাতে পানি পান করা যেতে পারে। কারণ পানিতে কোনো ক্যালরি নেই তবে পানি খাওয়ার মাধ্যমে কিছুটা ক্লান্তি বোধ কমতে পারে। সেই সাথে চা অথবা কফি পানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন (Caffeine) ক্ষুধা বোধ দূর করে এবং সেই সাথে শরীরের ওজন কমাতেও সহায়তা করে থাকে।
পরবর্তী ৪ দিনের ডায়েট চার্ট
মিলিটারি ডায়েটের পরবর্তী ৪ দিনের জন্য যে কোনো ধরনের খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে ক্যালরি হিসেবে তা যেনো ১৫০০ ক্যালরির বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উল্লেখ্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে চর্বি জাতীয় খাবারে এবং তুলনামূলক কম ক্যালরি রয়েছে ফলমূল ও শাকসবজিতে।
নিরামিষাশীদের ক্ষেত্রে কিভাবে ওজন কমানো যায় (The Military Diet)
মিলিটারি ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে একজন নিরামিষাশী ব্যক্তির জন্য আলাদা ডায়েট চার্ট রয়েছে যা নিচে তুলে ধরা হলো। (Crichton-Stuart, 2020)
প্রথম ৩ দিনের ডায়েট চার্ট
প্রথম দিন
সকাল:
- অর্ধেক কমলা
- একটি টোস্ট বিস্কুট
- ২ টেবিল চামচ মাখন (peanut butter)
- ১ কাপ চা অথবা কফি
দুপুর:
- অর্ধেক অ্যাভোকাডো
- ১ বাটি সবজি
- ১ টি আটার রুটি
- ১ কাপ চা অথবা কফি
রাত:
- ১ কাপ শিমের বিচি
- অর্ধেক কলা
- একটি আপেল
- ১ বাটি আইসক্রিম (dairy free)
দ্বিতীয় দিন
সকাল:
- ১ কাপ শিমের বিচি
- একটি রুটি
- অর্ধেক কলা
দুপুর:
- ১ বাটি সবজি
- অর্ধেক অ্যাভোকাডো
- পাঁচটি বিস্কুট (saltine crackers)
- কাঠবাদাম
রাত:
- ২ টি হট ডগ (vegetarian hot dog)
- ১ টি গাজর
- ১ কাপ ব্রকলি
- অর্ধেক কলা
- ১ কাপ আইসক্রিম
তৃতীয় দিন
সকাল:
- একটি আপেল
- পাঁচটি বিস্কুট
- পানির (cheddar cheese)
দুপুর:
- এক বাটি সবজি
- ১ টি রুটি
- অর্ধেক অ্যাভোকাডো
রাত:
- ১ কাপ ডাল বা মটরশুটি
- অর্ধেক কলা
- ১ কাপ আইসক্রিম
চর্বি কমানোর উপায় হিসেবে ব্যায়াম
চর্বি যেমন মানুষের শরীরে একদিনে জমা হয় না তেমনি ভাবে দ্রুত চর্বি কমানো হলে তাতে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বিশেষত মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, কিডনির ওপর চাপ পড়া সহ নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। আর তাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী শরীরের ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখাই সবচেয়ে ভালো বলে বিবেচিত। (MATTHEWS, 2021)
নিয়মিত ব্যায়াম করা হলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হয় না এবং কোনো মেদ জমে না। বিশেষত যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন না অর্থাৎ অফিসে বসে কাজ করেন অথবা ঘরে শুয়ে বসে সময় কাটান তাদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। প্রত্যেক দিন নূন্যতম ৩০ মিনিট সময় ধরে ব্যায়াম করতে হবে। সবচেয়ে সহজ একটি ব্যায়াম হলো হাঁটা (walking) যার মাধ্যমে অনেক ক্যালরি ক্ষয় হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। এছাড়াও সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা অথবা জিমে (Gym) গিয়েও ব্যায়াম করা যেতে পারে।
ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন
মেদ কমানোর উপায় হিসেবে মিলিটারি ডায়েট বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সুবিধা ও অসুবিধা বিবেচনা করে আপনার জন্য এই ডায়েট প্ল্যানটি উত্তম হবে বলে মনে হলে শুরু করে দিতে পারেন শীঘ্রই। তবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সহায়তা পেতে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
References
Crichton-Stuart, C. (2020, January 6). What is the military diet and does it work? Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/323952#meal-plan-and-shopping-list
Gunnars, K. (2017, January 21). 12 Popular Weight Loss Pills and Supplements Reviewed. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/12-weight-loss-pills-reviewed
Lang, A. (2021, December 3). The Military Diet: All You Need to Know. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/the-military-diet-101#meal-plan
MATTHEWS, M. (2021, September 23). The Military Diet Says You Can Lose up to 10 Pounds in 1 Week. Retrieved from Mens Health: https://www.menshealth.com/weight-loss/a22119045/3-day-military-diet-plan/
Last Updated on November 1, 2023
Leave A Comment