এজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) একটি এন্টি-বায়োটিক ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এজিথ্রোমাইসিন সরাসরি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার মাধ্যমে ইনফেকশন দূর করে থাকে। তবে ভাইরাস জনিত ইনফেকশনের চিকিৎসায় এজিথ্রোমাইসিন ওষুধটি কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না।
এজিথ্রোমাইসিন কি কি রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে, ওষুধ সেবন করার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য এই ওষুধ সেবন করা নিরাপদ হবে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এজিথ্রোমাইসিন ওষুধের দাম সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
এজিথ্রোমাইসিন কোন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়?
শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন জনিত কারণে যেসব রোগ হয়ে থাকে সেগুলোর চিকিৎসার জন্য এজিথ্রোমাইসিন ওষুধটি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ (Villines, 2019)
- সাইনুসাইটিস (Sinusitis)
- নিউমোনিয়া (Pneumonia)
- COPD (Chronic obstructive pulmonary diseases)
- ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- টনসিলাইটিস (Tonsillitis)
- কানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- প্রস্রাব নালীতে ইনফেকশন
- পুরুষের যৌনাঙ্গের ক্ষত
- জরায়ুর ইনফেকশন ইত্যাদি
এজিথ্রোমাইসিন খাওয়ার নিয়ম
- রোগীর বয়স, রোগের ধরন ও লক্ষণের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধের ডোজ বা মাত্রার কম বেশি হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ২৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে ২ বার অথবা ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে একবার সেবন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। কতদিন পর্যন্ত সেবন করতে হবে তা ইনফেকশনের প্রকৃতি বা তীব্রতার উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত ৫ বা ১০ দিন সেবন করতে হয়। (National Health Service, UK, 2022)
আপনার জন্য কোন মাত্রায় কতদিন পর্যন্ত ওষুধ সেবন করতে হবে তা চিকিৎসক ঠিক করে দিবেন। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে ওষুধ খেতে হবে। এছাড়াও রোগের লক্ষণ একটু কমে গেলেই চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতীত ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। বরং এন্টি-বায়োটিক ওষুধের ডোজ সম্পন্ন করা জরুরী।
এজিথ্রোমাইসিন হলো প্রেসক্রিপশন মেডিসিনের অন্তর্ভুক্ত একটি ওষুধ যা কখনোই চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতীত সেবন করা যাবে না।
- ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ওষুধ সরাসরি পানি দিয়ে গিলে খেতে হবে। খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে অথবা খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে এজিথ্রোমাইসিন সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি পরিমাণে ওষুধ সেবন করা যাবে না।
- প্রতিদিন একই সময়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। দিনে দুইবার ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে প্রতিবার ওষুধ সেবনের মধ্যবর্তী সময়ের দূরত্ব একই হতে হবে। অর্থাৎ দিনে দুইবারের জন্য ১২ ঘন্টা পর পর ওষুধ খেতে হবে।
- কখনো ওষুধ খেতে ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে তখন ওষুধ খেতে হবে। তবে পরবর্তী ওষুধ খাওয়ার সময়ের কাছাকাছি সময়ে মনে হলে মিস হওয়া ওষুধ খাওয়া যাবে না।
এন্টি-বায়োটিক ওষুধ সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে এন্টি-বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে যা একটি গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলে যথাযথ নিয়ম মেনে এজিথ্রোমাইসিন খেতে হবে।
এজিথ্রোমাইসিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অন্য সব ওষুধের মতো এজিথ্রোমাইসিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সবচেয়ে কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো হলোঃ
- বমি বমিভাব
- বমি হওয়া
- মাথাব্যথা
- ক্লান্তি বোধ
- পেটে ব্যথা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- ডায়রিয়া ইত্যাদি
এছাড়াও আরো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে সেগুলো খুব বিরল ক্ষেত্রে হতে দেখা যায়। যেমনঃ
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- কানে কম শোনা
- পেটে বা পিঠে তীব্র ব্যথা
- মলের সাথে রক্ত যাওয়া
- ত্বকের শুষ্কতা ইত্যাদি
এজিথ্রোমাইসিন সেবনের ফলে এলার্জিক রিয়াকশন দেখা দিলে ওষুধ সেবন বন্ধ রেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এলার্জিক রিয়াকশনের লক্ষণ হলো ত্বকে র্যাশ হয় ও ফুলে যায়, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া ইত্যাদি।
সতর্কতা
এজিথ্রোমাইসিন ওষুধটি প্রায় সব মানুষের জন্য সেবন করা নিরাপদ। তবে কতিপয় ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ
- বয়স্ক ব্যক্তি
- লিভার বা কিডনি রোগে আক্রান্ত
- Myasthenia gravis নামক রোগ
- হার্টের সমস্যা ইত্যাদি
এছাড়াও যাদের এজিথ্রোমাইসিন সেবনের ফলে এলার্জিক রিয়াকশন দেখা দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের জন্য এজিথ্রোমাইসিনের পরিবর্তে অন্য কোনো এন্টি-বায়েটিক সেবন করতে হব।
গবেষণা কি বলে?
২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এজিথ্রোমাইসিন সেবন করেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঝুঁকি কিছুটা বেশি রয়েছে। এছাড়াও এজিথ্রোমাইসিন সেবনের ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমতাবস্থায় লক্ষণ হিসেবে ত্বক হলুদ বর্ণের হয়ে যাওয়া ও প্রস্রাবের রং পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ের কোনো গবেষণায় এজিথ্রোমাইসিনের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তাই এটি একটি নিরাপদ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ওষুধের ডোজ বা সেবনের নিয়ম মেনে চলা জরুরী।
এজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ওষুধের পারস্পরিক ক্রিয়াগুলি কি কি?
কিছু কিছু রোগের ওষুধ চলাকালীন সময়ে এজিথ্রোমাইসিন সেবন করার ফলে শরীরের ক্ষতি হওয়া বা ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জাতীয় ক্ষেত্রগুলো হলোঃ
- এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ
- মাইগ্রেন নিরাময়ের ওষুধ
- রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকানোর ওষুধ
- অটোইমিউন ডিজিজের ওষুধ
- হার্টের রোগের ওষুধ
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ
- এইডস রোগের ওষুধ ইত্যাদি
নিয়মিত কোনো ওষুধ সেবন করতে হয় এমন রোগীদের জন্য চিকিৎসককে ওষুধের ব্যাপারে অবগত করতে হবে। এছাড়াও এজিথ্রোমাইসিন সেবন করার সময় কোনো হারবাল ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে কিনা সেই ব্যাপারে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
এজিথ্রোমাইসিন এর দাম
কোম্পানি ভেদে এজিথ্রোমাইসিন ওষুধের দাম কিছুটা কম বেশি হয়ে থাকে। ২৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যায় এবং ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের দাম প্রতি পিস ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সিরাপ জাতীয় ওষুধের প্যাকেটের গায়ে দাম লেখা থাকে।
এজিথ্রোমাইসিন বনাম অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক
এজিথ্রোমাইসিনের মতো একই গোত্রের এন্টি-বায়োটিক হলো Erythromycin ও Clarithromycin যা একই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ওষুধের মাত্রা ভিন্নতর হয়ে থাকে।
এছাড়াও পেনিসিলিন জাতীয় এন্টি-বায়োটিক হলো Amoxicillin যা এজিথ্রোমাইসিনের পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। আরো শক্তিশালী এন্টি-বায়োটিক হিসেবে Cefixime রয়েছে। কার জন্য কোন এন্টি-বায়োটিক উপযুক্ত হবে তা রোগের ধরন ও লক্ষণের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারণ করে থাকেন।
এজিথ্রোমাইসিন গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
গর্ভাবতী নারীদের জন্য এজিথ্রোমাইসিন নিরাপদ ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন হলে তার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী এজিথ্রোমাইসিন সেবন করা যাবে এবং এতে গর্ভস্থ সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না।
স্তন্যদানকারী মা এজিথ্রোমাইসিন সেবন করলে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে কিছুটা প্রবাহিত হতে পারে। তবে এতে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য এজিথ্রোমাইসিন সেবন করা নিরাপদ হবে। তবে ওষুধ সেবন করার পর যদি শিশুর ক্ষেত্রে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমনঃ
- শিশুর খাবারের প্রতি তীব্র অনীহা
- জিহ্বায় সাদা প্রলেপ
- পেটে ব্যথা ইত্যাদি
এজিথ্রোমাইসিন ওষুধটি নারী ও পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার (ফার্টিলিটি) ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। যেসব নারী জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে এজিথ্রোমাইসিন খাওয়া হলে পিলের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এজিথ্রোমাইসিন খুব নিরাপদ ও কার্যকরী একটি এন্টি-বায়োটিক ওষুধ যা সেবনের সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে রোগ লক্ষণ কমতে শুরু হয়। তবে ৩ দিনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা না গেলে অথবা ওষুধ সেবনের ফলে কোনো জটিল সমস্যার সৃষ্টি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
References
National Health Service, UK. (2022, January 20). How and when to take azithromycin. Retrieved from NHS: https://www.nhs.uk/medicines/azithromycin/how-and-when-to-take-azithromycin/
Villines, Z. (2019, July 12). What to know about azithromycin. Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/325721
Last Updated on November 19, 2023
Leave A Comment