জন্ডিস (Jaundice) খুব কমন একটি রোগ। কম বেশি সবাই এই রোগটির সাথে পরিচিত। তবে এই রোগের ব্যাপারে আমাদের দেশে নানাবিধ ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে, আবার কারো কারো মনে রয়েছে বিভিন্ন কৌতুহলী প্রশ্ন।
এই অনুচ্ছেদে জন্ডিসের কারণ, প্রকারভেদ, জন্ডিসের লক্ষণ, টেস্ট, জন্ডিসের চিকিৎসা, জটিলতা, প্রতিরোধের উপায়, জন্ডিস রোগীর খাদ্য তালিকা সহ শিশুদের জন্ডিস বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে জন্ডিস সম্পর্কিত নানাবিধ কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
জন্ডিস কি?
জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরের ত্বক, চোখ, মিউকাস মেমব্রেন (Mucus membrane) হলুদ হয়ে যাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় জন্ডিস বলে। জন্ডিসের ক্ষেত্রে শরীরের মধ্যে ‘বিলিরুবিন’ (Bilirubin) নামক হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। চামড়া ফ্যাকাসে দেখায় বলে এই রোগটিকে আগেকার দিনে পাণ্ডুরোগও বলা হতো।
জন্ডিস কেন হয়?
লিভারের (Liver) রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। বিভিন্ন কারণে লিভার রোগাক্রান্ত হতে পারে। যেমনঃ
- ভাইরাল হেপাটাইটিসঃ লিভারের প্রদাহের জন্য হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস দায়ী যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস
- মদ্যপানের অভ্যাস
- অতিরিক্ত Paracetamol সেবন
- পিত্তথলিতে পাথর (gallstone)
- পিত্তনালীতে পাথর বা টিউমার
- গিলবার্ট’স সিন্ড্রোম (Gilbert syndrome)
- ডুবিন-জনসন সিন্ড্রোম (Dubin Johnson syndrome) ইত্যাদি বহুবিধ কারণে লিভার রোগাক্রান্ত হতে পারে এবং তা জন্ডিস হিসেবে প্রকাশ পায়।
জন্ডিস কত দিনের মধ্যে এই রোগটি প্রকাশ পায়?
অধিকাংশ জন্ডিস-ই ‘হেপাটাইটিস ভাইরাস’ দ্বারা হয়ে থাকে। আর তাই কতদিনের মধ্যে জন্ডিস প্রকাশ পাবে তা নির্ভর করে কোন ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে তার সুপ্তকাল (Incubation period) এর উপর। যেমনঃ (Roland, 2019)
হেপাটাইটিস-এ: এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ১৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে জন্ডিস প্রকাশ পেতে পারে।
হেপাটাইটিস-বি: এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ৪৫ থেকে ১৬০ দিনের মধ্যে এই রোগ প্রকাশ পেতে পারে।
হেপাটাইটিস-সি: এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ১৪ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে জন্ডিস প্রকাশ পেতে পারে।
হেপাটাইটিস-ডি: এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ৩ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যে এই রোগ প্রকাশ পেতে পারে।
হেপাটাইটিস-ই: এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ২ থেকে ৯ সপ্তাহের মধ্যে এই রোগ প্রকাশ পেতে পারে।
জন্ডিসের কী ধরনের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায়?
খাবারের প্রতি অনীহা বা সামান্য বমি বমি ভাব দেখা দিলে অনেকেই মনে করেন যে জন্ডিস হয়েছে। কিন্তু এই সমস্যা গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জন্ডিস ছাড়া এসিডিটি অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের দরুন হয়ে থাকে। যা হোক, কি কি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে পারবেন যে আপনার জন্ডিস হয়েছে? জন্ডিসের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। যেমনঃ
- চোখের সাদা অংশ
- জিহ্বার নিচের দিক
- বাম হাতের তালু (ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া হয় বলে এমনিতেও হলুদ বর্ণের মনে হতে পারে)
- সর্বোপরি সারা শরীরের ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি
জন্ডিসের লক্ষণ
হলুদ বর্ণ ধারণ করা ছাড়াও সময়ের সাথে সাথে জন্ডিসের ক্ষেত্রে আরো কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে নাও পারেন তবে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা লিভারের রোগ বিশেষজ্ঞ (Hepatologist) চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। লক্ষণ গুলো হলোঃ
- প্রস্রাবের রঙ হলুদ
- পায়খানা বা মল ফ্যাকাসে
- বমি বমি ভাব অথবা বমি
- পেটে ব্যথা (abdominal pain)
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ
- চুলকানি হতে পারে (itchiness)
- প্রচন্ড জ্বর থাকতে পারে
- পেটে ও পায়ে পানি আসতে পারে
- ওজন কমতে থাকে ইত্যাদি
জন্ডিস হলে করনীয় কি?
জন্ডিস হলে আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহণের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিশেষত গ্রামের অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের ধারণা যে, জন্ডিসের জন্য ভেষজ বা কবিরাজি চিকিৎসাই সেরা। বস্তুত এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা বরং লিভারের সমস্যা জটিলতর হলে সেক্ষেত্রে কবিরাজ বা ভেষজের উপর ভরসা করে থাকলে তা একসময়ে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আর তাই জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখানো উচিত এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিস নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় ও তার কারণ বের করতে হবে। অতঃপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জন্ডিস টেস্ট নাম
সাধারণত S. Bilirubin নামক টেস্টটি জন্ডিস টেস্ট নামে পরিচিত। এই পরীক্ষাটি করার জন্য নমুনা হিসেবে রক্ত সংগ্রহ করে তাতে বিলিরুবিন (Bilirubin) এর মাত্রা দেখা হয়। এটি খুব সাধারণ একটি টেস্ট যা সব হাসপাতালেই করা যায় এবং তা খুবই কম খরচ সম্পন্ন। আপনার যদি কখনো কোনো শারীরিক সমস্যা বা লক্ষণ দেখে মনে হয় যে জন্ডিস হয়েছে তবে কুসংস্কারের মধ্যে না পড়ে বরং সহজ এই পরীক্ষাটি করিয়ে নিজেই বুঝতে পারবেন।
জন্ডিস টেস্ট রিপোর্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ (NIH of US) এর তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ হতে হবে ১ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর নিচে। সাধারণত এই মাত্রা সামান্য বেশি হলে সমস্যা হিসেবে ধরা হয় না, তবে যদি সর্বোচ্চ ৩ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার অতিক্রম করে তখন তা জন্ডিস হিসেবে বিবেচিত হবে। (Gillott, 2022)
নবজাতকের জন্ডিস
নবজাতক শিশুদের বেলায় রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হলে তা জন্ডিস হিসেবে ধরা হয়। তবে নবজাতকের জন্ডিস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফিজিওলজিক্যাল (Physiotherapist) কারণে হয়ে থাকে যা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ডিস এর হার কেমন এবং এতে ভয়াবহতা কতটুকু?
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও জন্মের পর শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে। জন্ডিস আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৫০ শতাংশের বেলায় ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক জন্ডিস হয়ে থাকে। এই ধরনের জন্ডিস সাধারণত শিশুর জন্মের ২ সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। তবে যদি ২ সপ্তাহ বয়সের পরেও জন্ডিস সেরে না যায় এবং বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে একে প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস বলে। প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস খুবই মারাত্মক হতে পারে আর তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যদি কোনো নবজাতক শিশুর গুরুতর জন্ডিস হয় তখন মস্তিষ্কে বিলিরুবিন প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে। যার ফলে “Acute Bilirubin Encephalopathy” হতে পারে। এছাড়াও কদাচিৎ ক্ষেত্রে “Kernicterus” (মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যাওয়া) নামক ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
জন্ডিস বুঝতে কী কী পরীক্ষা করা হয়?
বিলিরুবিন টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র জন্ডিস হয়েছে কিনা এটা বোঝা সম্ভব। তবে এর পরের ধাপে জন্ডিসের কারণ নির্ণয়ের জন্য আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন পড়ে। যেমনঃ
- প্রোথ্রম্বিন টাইম (Prothrombin time)
- লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা। যেমন: SGPT, SGOT, Cholesterol test ইত্যাদি
- প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine R/E)
- হেপাটাইটিস এ, বি এবং সি ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা।
- পেটের Ultrasonography, CT scan অথবা MRI করানো
- ERCP (Endoscopic retrograde cholangiopancreatography)
- লিভার বায়োপসি (Liver biopsy)
জন্ডিসের চিকিৎসা কী?
সাধারণত জন্ডিসের জন্য তেমন কোনো ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না। কারণ কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে যেখানে জন্ডিসের ধরন, মাত্রা ও রোগীর বয়সের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্নতর হয়ে থাকে। যেমনঃ
- ভাইরাস ঘটিত জন্ডিস হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সেবন করতে হবে।
- এই সময়ে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন বা ঘুমের ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
- শরীরে চুলকানি থাকলে কুসুম গরম পানিতে গোসল এবং এন্টিহিস্টামিন (antihistamines) গ্রুপের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
- নবজাতক শিশুদের ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের ক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য লাইট থেরাপি দিলেই ঠিক হয়ে যায়।
- তবে নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের মাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা
- রোগীকে পুরোপুরিভাবে বিশ্রামে থাকতে হবে।
- সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো হার্বাল বা ভেষজ উপাদান গ্রহণ করা যাবে না
- নবজাতক শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীর জন্য এমন খাবার খেতে হবে যা সহজেই হজম হয়। পক্ষান্তরে হজমের জন্য লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এমন খাবার বর্জন করতে হবে। বিশেষত ফাস্টফুড, গরু ও খাসির মাংস, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট, কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ মাছ ইত্যাদি।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট কোন গুলো তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
জন্ডিস হলে কী খাবেন?
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। যেমনঃ লেবু, কমলা, পেঁপে, মাল্টা, আঙ্গুর ও স্ট্রবেরি।
- গ্লুকোজ, আঁখের রস, আনারস, টমেটো, গাজর, আপেল, তরমুজ ইত্যাদি।
- বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বিশেষত ব্রকলি, ফুলকপি ও পালংশাক।
- এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যেমন কাঠবাদাম, চিনা বাদাম, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি। তবে তা খুব বেশি পরিমাণে নয় বরং স্বাভাবিক মাত্রায় খেতে হবে।
জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। সচেতনতার মাধ্যমে জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। চলুন জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে নেই-
- সবসময়য় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং জীবাণুমুক্ত খাবার ও পানি পান করতে হবে।
- রাস্তাঘাটে খোলা পানি, ফলের জুস, সরবত ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সময়মতো হেপাটাইটিস এ এবং বি এর প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হবে।
- মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
- ধুমপান সহ সব ধরনের নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড, ইঞ্জেকশান, সুই ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
- শরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই রক্ত দাতার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং টেস্ট করে নিতে হবে।
জন্ডিস এ কি কি জটিলতা হতে পারে?
জন্ডিসের জটিলতা রোগের ধরন, মাত্রা ও রোগীর বয়সের ওপর নির্ভর করে। জন্ডিসের ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে-
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে:
- রক্তক্ষরণ
- লিভার বা যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
- কিডনি ডেমেজ হয়ে যাওয়া
- পেট ফুলে যেতে পারে
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- তীব্র পেটে ব্যথা হতে পারে
শিশুদের ক্ষেত্রে:
- নীরসতা বা হাঁটাচলা করে কষ্টকর হয়ে পড়ে
- ঘাড়ের পেছনে ও পিঠে ব্যথা
- জ্বর ও বমি হতে পারে
- খুব জোরে চিৎকার করে এবং কান্নাকাটি করার প্রবণতা বেড়ে যায়
- মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যেতে পারে
কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
জন্ডিস নিয়ে অনেকের মনেই নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে। আর তাই এই পর্যায়ে জন্ডিস সম্পর্কিত ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর তুলে ধরা হলোঃ
১। জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে?
জন্ডিস হলে ডিম না খাওয়াই ভালো তবে খেলেও ভাজি না করে বরং সিদ্ধ করে খেতে হবে। এর কারণ হলো ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে যা হজম ও বিপাকের জন্য লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
২। বুকে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়ার সাথে জন্ডিসের কোন সম্পর্ক আছে কি না?
বুক জ্বালাপোড়া (Heartburn) সাধারণত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিডিটির ফলে হয়ে থাকে। জন্ডিসের ক্ষেত্রেও হজমের সমস্যা সহ বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। তবে শুরুতেই জন্ডিস না ভেবে বরং এসিডিটির কথা বিবেচনায় ওষুধ সেবন করা উচিত।
৩। জন্ডিস কত দিনে ভালো হয়?
সাধারণত জন্ডিস ১ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে লিভারের জটিল রোগ বা সমস্যার দরুন জন্ডিস হলে সেক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে।
৪। কি কি উপায়ে জন্ডিস ছড়াতে পারে?
হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস লিভার প্রদাহ করে যা জন্ডিস রোগের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসগুলো বিভিন্ন উপায়ে ছড়াতে পারে। যেমনঃ
- রক্তের মাধ্যমে
- দূষিত পানির মাধ্যমে
- দূষিত খাবারের মাধ্যমে
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে
- দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে
৫। কোন অঞ্চলে জন্ডিস এর প্রকোপ বেশি থাকে?
পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে ভাইরাল হেপাটাইটিস দ্বারা হওয়া জন্ডিস এর প্রকোপ বেশী।
৬। জন্ডিস সাধারণত কত ধরনের হতে পারে এবং কোন ধরনের জন্ডিস বেশি মারাত্মক এবং কমন?
জন্ডিস সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমনঃ
- প্রি-হেপাটিক: রক্তের লোহিত কণিকা কোনো কারণে বেশী ভাঙ্গলে এই ধরনের জন্ডিস হয়। যেমন- হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি।
- হেপাটিক: লিভারের প্রদাহ বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে হেপাটিক জন্ডিস হয়। যেমন- ভাইরাল হেপাটাইটিস, লিভার ক্যান্সার, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি।
- iii. পোস্ট হেপাটিক: পিত্ত লিভারে তৈরি হবার পর লিভার থেকে বের হবার রাস্তায় কোনো সমস্যা থাকলে এই ধরনের জন্ডিস হয়। যেমন- পিত্তনালিতে পাথর, পিত্তনালির ক্যান্সার ইত্যাদি।
৭। জন্ডিসে আক্রান্ত মায়ের দুধপান
জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন মা কি তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন? হ্যাঁ, খাওয়াতে পারবেন। কারণ জন্ডিস কোনো ছোঁয়াচে প্রকৃতির রোগ নয় এবং তা বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে ছড়ায় না।
জন্ডিস অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আর তাই এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি। আর সুস্থ অবস্থায় জন্ডিস প্রতিরোধের উপায় গুলো মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।
References
Gillott, C. (2022, 2 23). Everything you need to know about jaundice. Retrieved from medical news today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/165749#bilirubin-levels
Roland, J. (2019, 2 1). What Is the Incubation Period for Hepatitis C? Retrieved from HealthLine: https://www.healthline.com/health/hepatitis-c-incubation-period#Incubation-period
Last Updated on April 12, 2023
Leave A Comment