কিডনি সিস্ট (Kidney cysts) খুব জটিল প্রকৃতির কোনো রোগ নয় এবং এর জন্য তেমন কোনো চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। কিডনিতে সিস্ট হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কোনো কারণে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হলে তখন কিডনিতে সিস্ট ধরা পড়ে। চিকিৎসক এই পর্যায়ে রোগীকে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যার মাধ্যমে সিস্ট ভালো হয়ে যায়।
যেকোনো বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে কিডনি সিস্ট হতে পারে। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে কিডনি সিস্ট হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
কিডনি সিস্ট এর ১০টি ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও কিডনি সিস্ট এর কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে সেই বিষয়ে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
কিডনি সিস্ট এর ঘরোয়া চিকিৎসা
যেসব ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কিডনি সিস্ট নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Neem, n.d.)
১। পর্যাপ্ত পানি পান
কিডনির কার্যক্ষমতা ভালো রাখার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী একটি উপায় হলো প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। চা, কফি, শরবত, ফলের জুস ইত্যাদি খাওয়া শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে।
তবে অতিরিক্ত পরিমাণে চা ও কফি খাওয়া যাবে না। এছাড়াও কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
২। ধুমপান ও মদ্যপান বর্জন
ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে মদ্যপানের ফলে কিডনি সিস্টের জটিলতা বেড়ে যায়। তাই কিডনি সিস্ট রোগীদের জন্য ধুমপান ও মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ধুমপায়ী ব্যক্তিদের জন্য কিডনি সিস্টের জন্য হঠাৎ করে ধুমপান বন্ধ করা সম্ভব না হলেও যতটা সম্ভব কমিয়ে দিতে হবে। তবে মদ্যপানের অভ্যাস বর্জন করা জরুরী।
৩। অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনি সিস্ট ভালো হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই রান্না করার সময় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা যাবে না।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম লবণ খাওয়া যাবে। কিডনি সিস্ট রোগীর জন্য খেয়াল রাখতে হবে যেন দৈনিক ৬ গ্রামের চেয়েও অনেক কম লবণ খাওয়া হয়। খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ নেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করতে হবে।
এছাড়াও অতিরিক্ত লবণ সমৃদ্ধ খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। যেমনঃ চিপস, সস, ফাস্টফুড, কৌটাজাত খাবার ইত্যাদি।
৪। ভিটামিন ই
কিডনি সিস্ট সারানোর ক্ষেত্রে ভিটামিন ই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুর্যমূখী তেল, অলিভ অয়েল, সয়াবিন তেল, কাঠবাদাম, চীনাবাদাম, অ্যাভোকাডো, টমেটো, পাকা আম, মিষ্টিকুমড়া, পালংশাক, ব্রকলি, ডিম ইত্যাদি হলো ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট কিনতে পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।
৫। সাইট্রাস ফল
সাইট্রাস জাতীয় ফলগুলো কিডনি সিস্ট সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, আমলকী, আনারস, কিসমিস, টমেটো, গাজর, ব্রকলি, লেটুসপাতা, ডুমুর ফল, ডালিম ইত্যাদি হলো সাইট্রাস জাতীয় ফল। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এই জাতীয় ফল কিছু পরিমাণে থাকতে হবে।
৬। টমেটো
কিডনি সিস্টের জন্য খুব উপকারী একটি খাবার হলো টমেটো। রান্না করে খাওয়ার চেয়ে সালাদ হিসেবে খাওয়া বেশি উপকারী হবে। কারণ রান্না করার সময় আগুনের তাপে টমেটোর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যায়। তাই প্রতিদিন ১ থেকে ২টি টমেটো সালাদ হিসেবে খেতে পারলে ভালো।
৭। পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন
শরীরের ক্যালরি চাহিদার ১০ শতাংশ পর্যন্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত। কারণ প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে কিডনি সিস্ট রোগীর জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার কিছুটা কম পরিমাণে খেতে হবে। কারণ প্রোটিন জাতীয় খাবার মেটাবলিসমের সময় বর্জ্য (বাই-প্রোডাক্ট) উৎপাদন হয় যা অসুস্থ কিডনির জন্য ছেঁকে শরীর থেকে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে গরুর মাংস একদম পরিহার করা উচিত।
৮। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ
গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কিডনি সিস্ট নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। (Amankwah, 2023)
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য দৈনিক ক্যালরি চাহিদার তুলনায় কম খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ভাত, চিনি, বিস্কুট, কেক, ফাস্টফুড, ফ্যাট ইত্যাদি কম খেতে হবে। সেই সাথে ব্যায়াম করতে হবে।
৯। আঁশযুক্ত খাবার
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কিডনি সিস্ট রোগীদের জন্য উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি, যব, ওটস, ফলমূল ও শাকসবজি হলো ফাইবারের ভালো উৎস। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
ফাইবারের আরেকটি ভালো উৎস হলো ইসবগুলের ভুসি। প্রতিদিন সকালে অথবা রাতে এক গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি গুলিয়ে সাথে সাথে খাওয়া উপকারী হবে।
১০। ব্যায়াম
কিডনি সিস্ট রোগীদের জন্য ব্যায়াম করা উপকারী হবে। তবে ভারি প্রকৃতির ব্যায়াম করা যাবে না। অর্থাৎ যেসব ব্যায়াম করার সময় কোমর তথা কিডনির স্থানে টান/চাপ লাগে সেগুলো পরিহার করতে হবে। যেমনঃ ভারোত্তোলন, কোমর বাঁকিয়ে ব্যয়াম করা, জোরে দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি ইত্যাদি।
প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট মৃদু প্রকৃতির ব্যায়াম করতে হবে। যেমনঃ হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সিঁড়ি বেয়ে উঠা ইত্যাদি।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে?
কিডনি সিস্টের আকার অনেক বড় হয়ে গেলে অথবা সিস্ট সংখ্যায় খুব বেড়ে গেলে পেট ব্যথা, কোমড় ব্যথা ও জ্বর সহ প্রস্রাবের সাথে রক্ত নিঃসরণ হওয়া লক্ষণ দেখা যায়। এমতাবস্থায় একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের (নেফ্রোলজিস্ট) শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়াও যাদের কিডনি সিস্ট হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের জন্য ২৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি বছর অন্তত একবার করে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর মাধ্যমে কিডনিতে সিস্ট হয়েছে কিনা তা জানতে হবে।
কিডনি সিস্ট প্রতিরোধের শতভাগ কার্যকরী কোনো উপায় নেই। তবে যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের জটিলতা অনেক কমানো যায়।
References
Amankwah, D. (2023, May 16). Home Remedies for the Treatment of Kidney Cysts. Retrieved from Health Grades: https://www.healthgrades.com/right-care/kidneys-and-the-urinary-system/kidney-cyst-treatment-home-remedy#maintain-a-moderate-weight
Neem, M. (n.d.). 17 Best Home Remedies For Kidney Cysts. Retrieved from Home Remedies & Natural TReatments : https://www.homenaturalcures.com/kidney-cysts-home-remedies/
Last Updated on November 20, 2023
Leave A Comment