ভেরিকোজ ভেইন (Varicose veins) হলো শিরার একটি রোগ যা সাধারণত পায়ে হতে দেখা যায়। এই রোগের ফলে পায়ের শিরা আঁকাবাঁকা অবস্থায় নীল হয়ে ফুলে থাকে। যারা দীর্ঘসময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তারা সহ গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভেরিকোজ ভেইন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ভেরিকোজ ভেইন প্রতিকারের জন্য ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এই অনুচ্ছেদে ভেরিকোজ ভেইন এর ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
ভেরিকোজ ভেইন এর ব্যায়াম
ব্যায়াম করার ফলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় যার ফলে ভেরিকোজ ভেইন এর লক্ষণ নিরাময় হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র ব্যায়াম করার মাধ্যমে ভেরিকোজ ভেইন একদম ভালো হয়ে যায় না। বরং অন্যান্য নিয়ম মেনে চলা তথা চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যায়াম সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেসব ব্যায়াম ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। (Jaliman, 2022)
হাঁটাহাঁটি (Walking)
সব বয়সের মানুষের জন্য নিরাপদ একটি ব্যায়াম হলো হাঁটাহাঁটি করা যা লো-ইমপ্যাক্ট (Low impact) ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ হাঁটাহাঁটি শরীরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে না বরং পায়ে রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ের জন্য প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আপনার ক্ষেত্রে ভালো লাগলে দিনের মধ্যে কয়েকবার হাঁটতে বের হতে পারেন। তবে শুরুর দিকে বেশি হাঁটাহাঁটি না করাই উত্তম। বরং ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে।
যাদের ভেরিকোজ ভেইন হয়নি তবে ঝুঁকি রয়েছে তাদের জন্য হাঁটাহাঁটি উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য দৈনিক কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটি করা উচিত। ভেরিকোজ ভেইন প্রতিরোধে হাঁটাহাঁটির ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
সাঁতার কাটা (Swimming)
লো-ইমপ্যাক্ট ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি দারুন ব্যায়াম হলো সাঁতার কাটা। নিয়মিত সাঁতার কাটার মাধ্যমে ভেরিকোজ ভেইন নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। সাঁতার কাটার জন্য সাঁতার জানা আবশ্যক এবং প্রথম দিকে খুব বেশি সময় সাঁতার না কেটে বরং ২০ থেকে ৩০ মিনিট যথেষ্ট।
সাঁতারকে কার্ডিও ব্যায়াম বলা হয় অর্থাৎ এটি হার্টের কার্যক্রম ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর হার্ট সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের কাজ (রক্ত পাম্প করার মাধ্যমে) করে থাকে।
সাইক্লিং (Cycling)
দীর্ঘসময় ধরে সাইক্লিং করা ভেরিকোজ ভেইনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার সাইক্লিং ভেরিকোজ ভেইন এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে মুল বিষয়টি হলো কতক্ষণ সময় ধরে সাইক্লিং করা হলো আর কত চাপ পায়ের উপর পড়ছে সেটা হলো বিবেচ্য বিষয়।
অতিরিক্ত চাপ নিয়ে অনেক্ষণ সময় ধরে সাইক্লিং করলে ভেরিকোজ ভেইন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে প্রতিদিন অল্প সময় (১০/১৫ মিনিট) স্টেশনারি বাইক ব্যবহার করে কম চাপে (রেজিস্ট্যান্স) সাইক্লিং করলে ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে। স্টেশনারি বাইকের ক্ষেত্রে খুব সহজেই চাপ কমানো যায়।
বাই সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমেও সাইক্লিং করে উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে সমতল রাস্তায় সাইক্লিং করতে হবে এবং সাইকেলে কোনো বস্তু বা ভার নেওয়া যাবে না। এছাড়াও বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে শূন্যে দুই হাঁটু ভাঁজ করে বাতাসে সাইক্লিং করা যেতে পারে যা এয়ার সাইক্লিং (Air cycling) নামে পরিচিত।
পা উঁচু করা
সমতল বিছানায় শুয়ে দুই পা সোজা করে রাখতে হবে। এক পা (হাঁটু ভাজ না করে) যতটা সম্ভব উঁচু করতে হবে এবং কিছুক্ষণ ধরে রাখতে হবে। পা নিচে নামিয়ে আবার অন্য পা একই পদ্ধতিতে উঁচু করে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। এভাবে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ বার বা যতবার ভালো লাগে করা যাবে। এই পদ্ধতিতে ব্যায়াম করার ফলে পায়ের পেশি শক্তিশালী হবে। এছাড়াও ভেরিকোজ ভেইন নিরাময় ও প্রতিরোধে সাহায্য করে।
দেয়ালে পা ঠেকিয়ে রাখা
বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা উপরের দিকে উঁচু করে বিছানার পাশে থাকা দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ এভাবে রাখলে পায়ের শিরা থেকে রক্ত গ্র্যাভিটির প্রভাবে নিচের দিকে তথা হার্টের দিকে প্রবাহিত হওয়ার হার বেড়ে যাবে।
খেয়াল রাখতে হবে যেন কোমড় বা ঘাড়ে ব্যথা না হয়। একটানা বেশি সময় ধরে এই ব্যায়াম করা যাবে না।
পা উঁচুতে রাখা
বিছানার পায়ের দিকটা মাথার তুলনায় উচু রাখতে হবে যেন গ্র্যাভিটির প্রভাবে রক্ত হার্টে ফিরে আসতে পারে। অনেকে পায়ের নিচে বালিশ ব্যবহার করে থাকেন যা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ বালিশ ব্যবহার করলে হাটু ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও রাতে ঘুমের মধ্যে বালিশ সরে যেতে পারে।
পায়ের দিকটায় উঁচু রেখে ঘুমানো ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে।
নিরাপত্তা
নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করার সময় কতিপয় নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
- ব্যায়ামের ফলে শরীরে যেন পানির ঘাটতি না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- খালি পায়ে রাস্তায় অথবা মাটিতে হাঁটাহাঁটি করা যাবে না। কারণ এতে আঘাত লাগা ও পরজীবীর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই জুতা পরে হাঁটতে হবে। জুতা যেন আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে যেন তা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির পক্ষে সুবিধাজনক হয়।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করে ক্লান্ত মনে হলে সপ্তাহে ১ – ২ দিন ব্যায়াম না করে বরং বিশ্রাম নিতে হবে।
- ব্যায়াম করার ফলে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ব্যায়াম বন্ধ রেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যে ব্যায়ামগুলো করা যাবে না
ব্যায়াম মানেই ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী হবে এমন নয়। বরং কিছু কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো ভেরিকোজ ভেইনের লক্ষণ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমনঃ (Maharana, 2023)
- ভারোত্তোলন ব্যায়াম
- জোরে দৌড়াদৌড়ি করা
- দীর্ঘসময় পর্যন্ত সাইক্লিং করা
যেসব ব্যায়াম (হাই-ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ) পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে সেগুলো করা যাবে না।
ভেরিকোজ ভেইন এর লক্ষণ নিরাময় এবং এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে ফিজিওথেরাপি বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপি গ্রহণের জন্য ফিজিওথেরাপিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে।
ব্যায়ামের পাশাপাশি অন্যান্য আরো যেসব নিয়ম মেনে চলতে হবে তা হলোঃ
- দিনের বেলায় বিশেষ ধরনের (Compression Stocking) মোজা পড়ে থাকতে হবে।
- একটানা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। মাঝেমধ্যে হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
- একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।
- ঢিলেঢালা প্যান্ট পড়তে হবে যেন রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত না ঘটে।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হতে হবে।
References
Jaliman, D. (2022, December 05). Best Exercises for Varicose Veins. Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/skin-problems-and-treatments/best-exercises-varicose-veins
Maharana, D. D. (2023, March 13). Varicose Veins – 6 Safe Exercises To Try Out. Retrieved from Pharm Easy: https://pharmeasy.in/blog/varicose-veins-6-safe-exercises-to-try-out/
Last Updated on November 12, 2023
Leave A Comment