পেটের ভেতর পাতার মতো দেখতে অঙ্গটির নাম হলো প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়। প্যানক্রিয়াস থেকে খাবার হজমে সহায়ক বিভিন্ন এনজাইম নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্যানক্রিয়াসের প্রদাহজনিত একটি রোগ হলো প্যানক্রিয়াটাইটিস যা ২ ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ একিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস ও ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস।
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াস থেকে এনজাইম নিঃসরণ কমে যায় যার ফলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে।
প্যানক্রিয়াটাইটিসের সাপ্লিমেন্ট কি, কখন বুঝবেন যে আপনার জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত এবং সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের নিয়ম সম্পর্কে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
প্যানক্রিয়াটাইটিসের সাপ্লিমেন্ট কি?
প্যানক্রিয়াস থেকে তিন ধরনের এনজাইম নিঃসরণ হয় যা প্রোটিন, শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। (White, 2018)
- প্রোটিন জাতীয় খাবার হজমের জন্য প্রোটেজ (Protease) নামক এনজাইম নিঃসরণ হয়।
- শর্করা জাতীয় খাবার হজমের জন্য এমাইলেজ (Amylase) নামক এনজাইম নিঃসরণ হয়।
- ফ্যাট জাতীয় খাবার হজমের জন্য যে এনজাইম নিঃসরণ হয় তাকে লাইপেজ (Lipase) বলা হয়।
প্যানক্রিয়াটাইটিস সাপ্লিমেন্ট হলো মূলত এই এনজাইম গুলোর কৃত্রিম ধরন। অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রোটেজ, এমাইলেজ ও লাইপেজ এনজাইম তৈরি করা হয়েছে যা ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের রোগীদের খাবার হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্যানক্রিয়াটাইটিসের এনজাইম সাপ্লিমেন্ট
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের জন্য আমাদের দেশে যেসব নামে এনজাইম সাপ্লিমেন্ট কিনতে পাওয়া যায় তা হলোঃ (MedEx, n.d.)
- A-zyme®
- Crezyme®
- Suprazyme®
- Suzyme®
- Zymet®
- Zymet Pro®
উল্লেখিত সাপ্লিমেন্টগুলো ৩২৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়। এই সাপ্লিমেন্টগুলো তিন ধরনের এনজাইমের সংমিশ্রণে তৈরি। অর্থাৎ একটি ট্যাবলেটের ভেতরেই প্রোটেজ, এমাইলেজ ও লাইপেজ এনজাইম রয়েছে।
কোম্পানি ভেদে প্রতি পিস ট্যাবলেটের দাম মাত্র ২ থেকে ৪ টাকা। তবে ক্যাপসুল ওষুধের (Zymet Pro®) দাম তুলনামূলক একটু বেশি। প্রতি পিস ক্যাপসুলের দাম ১০ টাকা।
আমি কীভাবে জানব আমার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত?
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের রোগীদের জন্য এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলো হলোঃ
- মাঝেমধ্যেই পেটে ব্যথা হয়
- ব্যথা পেটের বাম পাশ বা পেটের মাঝ বরাবর থেকে শুরু হয়ে পুরো পেট ও পিঠে ছড়িয়ে পড়ে
- ব্যথা খুব তীব্র প্রকৃতির হয় না তবে ব্যথার স্থায়ীত্ব দীর্ঘসময় পর্যন্ত থাকে
- বমি বমি ভাব
- বমি (Vomiting)
- ডায়রিয়া (Diarrhoea)
- ক্ষুধার অনুভূতি কমে যায়
তীব্র প্রকৃতির ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রে এনজাইম নিঃসরণ ব্যাহত হয়। এমতাবস্থায় যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হলোঃ
- খাবার খাওয়ার পরে পেট ব্যথা
- মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন
- শরীরের ওজন কমতে থাকা
- জন্ডিস (ত্বক হলুদ হয়ে যায়)
বিশেষ করে ফ্যাট জাতীয় খাবার হজম ব্যাহত হয় বলে মলের সাথে ফ্যাট বের হতে থাকে। যার ফলে মলের প্রকৃতি নরম ও তৈলাক্ত বা ফ্যাটযুক্ত বলে মনে হয়।
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের লক্ষণ থাকলেই এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না। বরং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে কতিপয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। রক্ত, প্রস্রাব ও মল (Stool) পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্যানক্রিয়াস থেকে নিঃসরণ হওয়া এনজাইমের মাত্রা কেমন তা জানতে হবে।
প্যানক্রিয়াস থেকে এনজাইম নিঃসরণ কমে গেলে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। নিজে নিজেই লক্ষণ দেখে এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।
কিভাবে প্যানক্রিয়াটাইটিসের সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ গ্রহণ করা উচিত?
প্যানক্রিয়াস থেকে এনজাইম নিঃসরণ কমে যাওয়ার মাত্রা এবং খাবার হজম প্রক্রিয়া কতটা ব্যাহত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ডোজ নির্ধারণ করা হয়।
একজন গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের (Dietitian) শরণাপন্ন হয়ে এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সুনির্দিষ্ট ডোজ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
সাধারণত প্রতিবেলার খাবার গ্রহণের সময় বা খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই ২ থেকে ৩টি এনজাইম সাপ্লিমেন্ট ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ডোজ কমবেশী হয়ে থাকে।
ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল যেধরনের ওষুধই হোক না কেন কখনো চিবিয়ে বা কামড়িয়ে খাওয়া যাবে না। কারণ ওষুধ মুখের ভেতর দীর্ঘসময় থাকলে ক্ষত ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়াও একদম খালিপেটে ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল পানি দিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি বা ঠান্ডা পানি সহযোগে খেতে হবে। ওষুধ সেবনের জন্য কখনো গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ তাপমাত্রার প্রভাবে এনজাইমের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
প্যানক্রিয়াটাইটিসের সাপ্লিমেন্টের সাথে সাথে আর কী খাওয়া উচিত?
এনজাইম সাপ্লিমেন্টের সাথে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে যা এনজাইমের কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
কিছু কিছু খাবার ও ওষুধ রয়েছে যা এনজাইম সাপ্লিমেন্টের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। এনজাইম সেবনের সময়টাতে যেসব খাবার ও ওষুধ খাওয়া যাবে না তা হলোঃ
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- কোমল পানীয়, চা ও কফি
- এন্টাসিড (Antacid) জাতীয় ওষুধ
ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের (ভিটামিন এ, ডি, ই, কে ইত্যাদি) অভাব দেখা যায়। শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে এইসব ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভিটামিনের অভাব পূরণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের রোগীদের জন্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। কারণ এগুলো হলো পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যার সাথে শরীরে ফ্যাটের ঘাটতির কোনো যোগসূত্র নেই।
সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নির্ধারিত মাত্রায় ও সঠিক নিয়মে এনজাইম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। ক্ষেত্রবিশেষে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব, বমি, পেটে অস্বস্তিবোধ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ গ্রহণ করা হলে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়াও রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে যার ফলে বাতব্যথা (Gout) শুরু হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
References
MedEx. (n.d.). Pancreatin. Retrieved from MedEx: https://medex.com.bd/generics/857/pancreatin
White, A. (2018, September 18). Should I Take Pancreatic Supplements? Retrieved from healthline: https://www.healthline.com/health/pancreatic-supplements
Last Updated on November 11, 2023
Leave A Comment