ভেরিকোজ ভেইন খুব জটিল কোনো রোগ নয় এবং এর জন্য সাধারণত তেমন কোনো চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। বরং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকেরা এই রোগ নিরাময়ের জন্য কিছু নিয়ম বা ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শুধুমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে এই রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। ভেরিকোজ ভেইন এর লক্ষণের তীব্রতা এবং জটিলতা অনেক কম বলে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই এই রোগে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তির জীবনকাল পার হয়ে যায়।
Table of Contents
ভেরিকোজ ভেইন এর ঘরোয়া চিকিৎসা
যেসব ঘরোয়া চিকিৎসা ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে তা নিচে বর্ণনা করা হলো। (Cadman, 2020)
১। পা উঁচুতে রেখে ঘুমানো
ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হলো রাতে পায়ের দিকটা উঁচুতে রেখে ঘুমানো। এতে করে গ্র্যাভিটির প্রভাবে পায়ের শিরা থেকে রক্ত হার্টের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ পায়।
পা উঁচুতে রাখার জন্য পায়ের নিচে বালিশ ব্যবহার করা যাবে না। বরং বিছানা পায়ের দিকটায় তোশকের নিচে কম্বল ভাজ করে দিয়ে উঁচু করা যেতে পারে। বাজারে বিশেষ ধরনের বেড কিনতে পাওয়া যায় যেগুলো ইচ্ছামতো পায়ের দিকটায় উঁচু রাখা যায়।
পায়ের নিচে বালিশ ব্যবহার করলে হাটু ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও রাতে ঘুমের মধ্যে বালিশ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২। দীর্ঘসময় একটানা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না
ভেরিকোজ ভেইনের সবচেয়ে কমন কারণ হলো একটানা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকা। তাই এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য একটানা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ না করে বরং কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে একটু বসতে হবে অথবা হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
বসে থাকার ব্যাপারেও একই নিয়ম মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ একটানা দীর্ঘসময় বসে না থেকে বরং মাঝেমধ্যে একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। এছাড়াও পায়ের উপর পা তুলে (Cross-legged) দীর্ঘসময় বসে থাকা যাবে না। এতে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
৩। বিশেষ ধরনের মোজা (Compression Stocking) ব্যবহার
ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষ ধরনের মোজা পাওয়া যায় যেগুলো রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ ধরনের এই মোজার গোড়ালির দিকের তুলনায় পায়ের উপরের দিকের চাপ কিছুটা কম থাকে যেন রক্ত সহজেই উপরের দিকে (হার্টে ফিরে যাওয়ার জন্য) যেতে পারে। আর রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হলে তা ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে।
৪। ঢিলেঢালা পোশাক ও জুতা পরিধান
টাইট পায়জামা বা প্যান্ট পরিধান করার ফলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন বিঘ্নিত হয়। তাই এমন ধরনের (ঢিলেঢালা) প্যান্ট পরিধান করতে হবে যেন তাতে পায়ের রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে উঁচু হিলের জুতা পরিধান করার প্রবণতা দেখা যায় যার ফলে পায়ের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। তাই ভেরিকোজ ভেইন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য উচু হিলের জুতা পরিধান করা যাবে না। বরং সমতল ও আরামদায়ক জুতা পরিধান করতে হবে।
৫। সঠিক খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত লবণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ এতে ভেরিকোজ ভেইনের লক্ষণ বেড়ে যায়। খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে এবং সেই সাথে অনেক বেশি পরিমাণে লবণ রয়েছে এমন খাবারগুলো (ফাস্টফুড) বর্জন করতে হবে। (Mayo Clinic, 2022)
আঁশযুক্ত ও এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার (ফলমূল ও শাকসবজি) ভেরিকোজ ভেইন আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে।
৬। ব্যায়াম করা
ব্যায়ামের ফলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় যা ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ে সাহায্য করে। তবে সবধরনের ব্যায়াম উপকারী হবে এমন নয়, বরং ভেরিকোজ ভেইন নিরাময়ের জন্য এমন ব্যায়াম করতে হবে যেগুলো পায়ের উপর কম চাপ ফেলে। যেমনঃ হাঁটাহাঁটি, সাঁতার কাটা, পা উপরের দিকে তুলে রাখা, সাইক্লিং করা ইত্যাদি।
যেসব ব্যায়াম পায়ের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে সেগুলো ভেরিকোজ ভেইন বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমনঃ ভারোত্তোলন, জোরে দৌড়াদৌড়ি করা, দীর্ঘসময় পর্যন্ত সাইক্লিং করা ইত্যাদি।
প্রতিদিন ব্যায়াম না করে বরং সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ব্যায়াম বন্ধ রেখে বিশ্রাম করতে হবে।
৭। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ
শরীরের অতিরিক্ত ওজনের ফলে পায়ের উপর বেশি চাপ পড়ে যা ভেরিকোজ ভেইন সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য দৈনিক ক্যালরি চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম খাবার খেতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৮। ধুমপান বর্জন
ধুমপানের সাথে ভেরিকোজ ভেইন হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। তাই ভেরিকোজ ভেইন নিরাময় ও প্রতিরোধের জন্য ধুমপান বর্জন করতে হবে। নিঃসন্দেহে একজন ধুমপায়ী ব্যক্তির জন্য কাজটি সহজ নয়, তবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা হিসেবে মনের জোরে ধুমপান ছাড়তে হবে।
৯। ম্যাসাজ (Massage)
পায়ে হালকা প্রকৃতির ম্যাসাজ করা হলে তা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে ভেরিকোজ ভেইন এর ক্ষেত্রে পায়ের শিরার ফোলাভাব খুব বেশি থাকলে ম্যাসাজের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন শিরায় অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। কারণ অতিরিক্ত চাপের প্রভাবে ব্যথা হতে পারে। ম্যাসাজের সময় পায়ে তেল (অলিভ অয়েল বেশি উপকারী হবে) ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০। ঠান্ডা সেঁক দেওয়া
ভেরিকোজ ভেইন এর ক্ষেত্রে পায়ে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া উপকারী হতে পারে। এতে ফোলাভাব কিছুটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক টুকরো কাপড়ের মধ্যে বরফ পেঁচিয়ে ফোলা স্থানে কিছুক্ষণ চেপে ধরে থাকতে হবে।
ভেরিকোজ ভেইন এর জন্য গরম সেঁক দেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। কারণ এতে উপকারের পরিবর্তে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তীব্র প্রকৃতির ভেরিকোজ ভেইনের ক্ষেত্রে শুধু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন না করে বরং একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শিরায় ইনজেকশন বা সার্জারির মাধ্যমে ভেরিকোজ ভেইন এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। একজন ভাস্কুলার সার্জন ভেরিকোজ ভেইন এর সার্জারি করে থাকেন। সার্জারি পরবর্তীতে পুনরায় যেন ভেরিকোজ ভেইন না হয় সেজন্য উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
References
Cadman, B. (2020, January 31). Home remedies for varicose veins. Retrieved from Medical News Today: https://www.medicalnewstoday.com/articles/321703
Mayo Clinic. (2022, March 03). Varicose veins. Retrieved from Mayo Clinic: https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/varicose-veins/diagnosis-treatment/drc-20350649
Last Updated on November 19, 2023
There is definately a lot to find out about this subject. I like all the points you made