গবেষণায় দেখা গেছে পেটের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন- হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ঘুম না হওয়া, কোলন ক্যান্সার (Colon cancer), অকাল মৃত্যু ইত্যাদি। (Johns Hopkins Medicine, n.d.)
আজকে এমন একটি রেসিপি শেয়ার করব যা পান করলে পেটের অতিরিক্ত চর্বি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে খুব সহজেই। এই পানীয়টি পেটের মেদ কাটানোর জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে।
Table of Contents
পেটের চর্বি কমানোর উপায়
অনেকেই আছেন যারা পেটের মেদ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ডায়েট পালন করেন। হয়তো তেমন কোনো ফলাফল পান না বরং বিরক্ত ও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে মনে হয়। পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় হিসেবে খাদ্য তালিকায় আজকের এই রেসিপিটি যোগ করুন। কারণ, এই রেসিপিতে থাকা সবগুলো উপাদান পেটের ফ্যাট কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং সেই সাথে পরিপাক প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি করে থাকে।
এছাড়াও, এই রেসিপিতে থাকা উপাদান গুলো শরীরের দূষিত এবং ক্ষতিকারক পদার্থগুলো নির্মূল করতে সহায়তা করে। যার ফলে খাবারের পুষ্টিগুলো শরীরে ভালোভাবে শোষিত হওয়ার সুযোগ পায়। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক, রেসিপিটি তৈরি করতে কি কি লাগবে, কিভাবে তৈরি করবেন এবং এটি কখন খাবেন?
যা যা লাগবে
- আদা কুচিঃ ১ চা চামচ পরিমাণ
- বিলম্ব ফল (Chayote): ভাল মানের কয়েকটি
- লেবুঃ খোসাসহ অর্ধেকটা
- পার্সলে (ধনেপাতার মত এক ধরনের পাতা): ১ মুঠ পরিমাণ
- পানিঃ ১/৩ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী
সমস্ত উপকরণ একটি ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। ব্যাস! তৈরি হয়ে গেল বহুগুণের অধিকারী সেই পানীয়। প্রতিদিন এই পানীয়টি এক গ্লাস করে পান করুন। তবে খেয়াল রাখবেন, প্রতিদিন যেন একই সময়ে গ্রহণ করা হয়। যেমনঃ প্রতিদিন সকালের নাস্তার আগে নতুবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে। প্রতিদিন এটি একই সময়ে পান করলে এর কার্যকারিতা ভালো পাওয়া যায়।
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে, ভালো ফ্রেশ আদা ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দেয়। তাহলে এটি কি উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করবে? এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখি, বিলম্ব ফলের প্রাথমিক কাজ হল ব্লাড প্রেশার কিছুটা কমিয়ে দেওয়া। ফলে আদা থেকে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি হলে বিলম্ব তার ভারসাম্য ঠিক রাখবে। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি হাই ব্লাড প্রেশার বা লো ব্লাড প্রেশারের খুব বেশি সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে এই জুসটি পান করার পূর্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
উল্লেখিত এই পানীয়টি একদিকে যেমন খুব সহজেই তৈরি করা যায়, তেমনিভাবে তা পেটের চর্বি কমানোর উপায় হিসেবে বেশ কার্যকরী। আর তাই আপনি যতই ব্যস্ত হন না কেন, কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই নিয়মিত গ্রহণ করতে পারেন এই পানীয়টি। যা হোক, পেটের চর্বি কমানোর জন্য এই পানীয়টি পান করা ছাড়াও আরো কিছু বিষয় নিয়ে অনুচ্ছেদের পরবর্তীতে অংশে আমরা কথা বলবো। যেমনঃ
- পেটের চর্বি কমানোর বেল্ট আসলেই কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে কিনা?
- পেটের চর্বি কমানোর হোমিও ওষুধ কি কি?
- পেটের চর্বি কমানোর সহজ ব্যায়াম কোনটি?
- পেটের চর্বি কমানোর জন্য আপনার খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত সেই বিষয়ে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নির্দেশনা
পেটের চর্বি কমানোর হোমিও ঔষধ
পেটের চর্বি কমানোর ওষুধ হিসেবে হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে-
- Antim Crud
- Calcarea Carb
- Fucus Vesiculosus
- Graphites
- Natrum Mur
- Nux Vomica
- Phytolacca Berry
- Reckeweg R59
উল্লেখিত ওষুধগুলো নিরাপদ এবং কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করবে। তবে এক্ষেত্রে কোন ওষুধটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তা একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করে নিন। ওষুধের পাশাপাশি মৃদু থেকে মাঝারি প্রকৃতির কিছু ব্যায়াম করতে পারলে পেটের মেদ কমানোর জার্নিটা আরো দ্রুত ও সহজেই সফলতার মুখ দেখতে পাবে।
পেটের চর্বি কমানোর সহজ ব্যায়াম
পেটের চর্বি কমানোর ব্যায়াম হিসেবে কোন ধরনের ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, আপনি যেভাবে খুশি ব্যায়াম করতে পারেন যাতে করে শরীরের ক্যালরি ব্যয় হয়। মূলত ক্যালরি ব্যয় করতে থাকলে সেক্ষেত্রে পেটের মেদ বা চর্বি ভেঙে ক্যালরিতে রুপান্তরিত হয়। এছাড়াও ব্যায়ামের ফলে শরীরে নতুন করে ফ্যাট জমার সুযোগ পায় না।
অনেকেই পেটের মেদ কমাতে কি না কি ধরনের ব্যায়াম করতে হবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং ব্যায়ামের বিষয়টি জটিল মনে করেন। কিন্তু আজ থেকে আর ব্যায়ামের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন না বরং যেভাবে খুশি সেভাবে দৈনিক ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ব্যায়াম করা পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি আপনাকে সার্বিক ভাবে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।
পেটের চর্বি কমানোর বেল্ট
পেটের চর্বি কিভাবে কমানো যায় সেই চিন্তায় বিভোর মানুষজন খুব সহজেই চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পড়েন। চর্বি কমাতে বেল্ট এর ব্যবহার অনেকটা সেরকমই একটি বিষয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি আর্টিকেলে এই বিষয়ে বলা হয়েছে, এই ধরনের বেল্ট পেটের মেদ কমাতে পারে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
তবে বিজ্ঞাপনে যেটা দেখানো হয় যে, চর্বি কমানোর বেল্ট পড়ার ফলে অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে এবং পেট চুপসে যাচ্ছে। মূলত পেটের উপরের অংশের কোষ থেকে অতিরিক্ত পানি ঘাম হিসেবে বের হয়ে পেট খানিকটা কমে গেছে বলে মনে হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পানি পান করলে কোষগুলো পুনরায় আবার আগের মতো অবস্থায় ফিরে আসে। (Times of India, 2019)
আরেকটি বিষয় জানা থাকলে ব্যাপারটি নিয়ে আর ভুল হবে না। মনে রাখবেন, শুধুমাত্র পেটের চামড়ার নিচে ফ্যাট (subcutaneous fat) থাকে না বরং পেট বাড়লে সেক্ষেত্রে ফ্যাট একদম ভিতর থেকেও জমতে থাকে যাকে মেডিকেলের ভাষায় visceral fat বলা হয়। আর তাই পেটের মেদ দূর করতে বাইরে থেকে বেল্ট পড়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে।
পেটের চর্বি কমানোর খাবার
পেটের মেদ কমাতে কোন ধরনের খাবার উপকারী তা জানতে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি গবেষণা করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের দুইটি দলে ভাগ করে তাদেরকে প্রতিদিন সমপরিমাণ ক্যালরি গ্রহণের নির্দেশনা দিন কিন্তু তা ভিন্ন ধরনের খাবার থেকে। অর্থাৎ একদল কম শর্করা জাতীয় খাবার এবং অন্যদল কম ফ্যাট যুক্ত খাবার ছয় মাস পর্যন্ত খেতে থাকেন। ছয়মাস পর দেখা যায়, যারা কম শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে পেটের মেদ ১০ পাউন্ড বেশি কমেছে। এই গবেষণার পর নির্দেশনা দেওয়া হয় যে, শর্করা জাতীয় খাবার কম পরিমাণে খেতে হবে।
আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত হলো শর্করার মূল উৎস আর তাই ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। তবে শরীরের ক্যালরি চাহিদা মেটাতে ভালো মানের প্রোটিন ও ফ্যাট পরিমিত মাত্রায় খাওয়া যাবে। যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটরশুটি, বাদাম, সয়াবিন ইত্যাদি। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এমন খাবার বিশেষত ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খেতে হবে। এর পাশাপাশি কিছু কিছু খাবার বর্জন করা জরুরি। যেমনঃ
- প্রক্রিয়াজাত খাবার
- ফাস্টফুড (Fast foods)
- ট্র্যান্স ফ্যাট (Trans fat)
- কার্বোনেটেড বেভারেজ ইত্যাদি
কোন খাবারে ট্র্যান্স ফ্যাট রয়েছে তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য পেটের মেদ কমানো অত্যাবশ্যকীয় একটি কাজ। মনে রাখবেন, একজন পুরুষের ক্ষেত্রে পেটের বেড় ৪০ ইঞ্চি (waist measurement- 40 inches) এবং মহিলাদের জন্য ৩৫ ইঞ্চি (35 inches) থাকা উচিত। আপনার ক্ষেত্রে এর বেশি থাকলে আজ থেকেই পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠুন।
References
Johns Hopkins Medicine. (n.d.). 8 Ways to Lose Belly Fat and Live a Healthier Life. Retrieved from Johns Hopkins Medicine;: https://www.hopkinsmedicine.org/health/wellness-and-prevention/8-ways-to-lose-belly-fat-and-live-a-healthier-life#definitions_block
Times of India. (2019, 3 13). The truth about slimming belts for weight loss. Retrieved from Times of India;: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/weight-loss/the-truth-about-slimming-belts-for-weight-loss/articleshow/68375547.cms
Last Updated on April 27, 2023
Leave A Comment