পেটের অতিরিক্ত চর্বি অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং রোগের সাথে যুক্ত, যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (CVD), ডায়াবেটিস (Diabetes) এবং ক্যান্সার (Cancer) ইত্যাদি। পেটের চর্বির অনেকগুলো স্তর থাকে, ভিসেরাল ফ্যাট (Visceral Fat) তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর স্তর। কারণ এই ফ্যাট থেকে কিছু ক্ষতিকারক হরমোন (Hormone) ও অন্যান্য পদার্থ নিঃসৃত হয় যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। (Flinn, 2021)
গুগুলে সার্চ করলেই পেটের চর্বি কমানোর উপায় এর অনেক তথ্য খুঁজে পাবেন, তবে সেগুলো আদৌও কতটা কার্যকর সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমন কোন যাদুর কাঠি নেই যা আপনার পেটের চর্বি নিমিষেই উধাও করে দেবে। তবে, হ্যাঁ ডাক্তারের পরামর্শ অথবা বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চললে ধীরে ধীরে পেটের চর্বি কমে যায়।
তাই আপনাদের প্রয়োজনের কথা ভেবেই আমরা পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর কিছু বিজ্ঞানসম্মত উপায় আজকের লেখার মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরব। পেট কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে পুরো লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
Table of Contents
জেনে নিন পেটের চর্বি কমানোর ২০ টি কার্যকরী উপায়
পেটের চর্বি কমানোর উপায়
পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে আমাদের চেষ্টার অন্ত নেই। কিন্তু কোন পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই কম। তাই পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর ২০ টি বিজ্ঞানসম্মত কার্যকরী উপায় নিচে আলোচনা করা হল।
১. প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহন করুন
ফাইবার জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে (Intstine) প্রবেশ করে এবং এগুলো হজম হতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। দেরিতে হজম হওয়ার কারণে ক্ষুধাও কম লাগে। একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহনের ফলে ৫ বছরের মধ্যে পেটের চর্বি ৩.৭% কমে যায়।
বিভিন্ন শাকসবজি বা ফলের খোসাতেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। শাকসবজির খোসা যেমন লাউ, কুমড়া, খোসাসহ আলু ইত্যাদি ভাজি করে খাওয়া যায়। অপরদিকে ফল যেমন – আপেল, পেয়ারা ইত্যাদি ফল খোসা সহ খেলে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায়।
এছাড়াও ফাইবার জাতীয় আরও কিছু খাবার হল –
- অ্যাভোকাডো
- শালগম
- শীম
- তিসি বীজ বা আলসি বীজ (Flax seeds)
২. ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকুন
সয়াবিন তেলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বিকে (Unsaturated Fat) শরীরে থাকা হাইড্রোজেন পাম্প করে ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fat) তৈরি করে। এই ফ্যাটগুলো এতোই ক্ষতিকর যে এরা প্রদাহ (Inflammation), হৃদরোগ, ইনসুলিন প্রতিরোধ (Insulin resistance) এবং পেটের চর্বি বাড়ানোর জন্য দায়ী।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহন করে তাদের পেটের মেদ বাড়ার হার অন্যদের তুলনার ৩৩% বেশি। তাই ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা পেটের চর্বি কমানোর একটি কার্যকরী উপায়।
৩. মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন
অ্যালকোহল পান করলে কোন লাভ তো হয়ই না বরং ক্ষতিই বেশি হয়। মদ পান করলে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত মেদ জমে। যারা মদ পান করে তাদের পেটে চর্বি হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চাইতে অনেক বেশি। তাই যতদ্রুত সম্ভব মদ পান ত্যাগ করুন।
৪. উচ্চ আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহন করুন
প্রোটিন পেটের চর্বি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহন করলে বেশি পরিমাণে Peptide YY (PYY) হরমোন উৎপন্ন হয় যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
অনেক পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা কম প্রোটিন খাবার খায় তাদের তুলনায় যারা বেশি প্রোটিন খায় তাদের পেটের চর্বি কম থাকে।
উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার হল –
- মাংস
- মাছ
- ডিম
- দুধ
- মটরশুঁটি ইত্যাদি
৫. নিজেকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখুন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে (Adrenal gland) বেশি পরিমাণে কর্টিসল (Cortisol) হরমোন উৎপাদন করতে সাহায্য করে। কর্টিসল হরমোন ক্ষুধা বাড়ায় এবং পেটের চর্বি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
পেটের চর্বি কমানোর উপায় হিসেবে আনন্দদায়ক ক্রিয়াকলাপে ব্যস্ত থাকুন যা মানসিক চাপ কমায়। প্রয়োজনে নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন, এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৬. চিনিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন
চিনিতে ফ্রুক্টোজ (Fructose) থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে সেবনের কারণে পেটের চর্বি সহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয়। যেমন: হৃদরোগ (heart disease), ডায়াবেটিস (Diabetes), ফ্যাটি লিভার ডিসিজ (Fatty liver disease) ইত্যাদি।
শুধুমাত্র চিনি খেলেই যে পেটের চর্বি বাড়ে এমন কোন কথা নেই, চিনিযুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি, চিনি দিয়ে তৈরি খাবার ইত্যাদি খেলেও পেটের চর্বি বাড়ে।
৭. অ্যারোবিক বা কার্ডিও (Cardio) ব্যায়াম করুন
অ্যারোবিক ব্যায়াম (কার্ডিও) আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ক্যালোরি বার্ন করার একটি কার্যকর উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে কার্ডিও ব্যায়াম পেটের চর্বি কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়ামগুলির মধ্যে একটি।
কার্ডিও ব্যায়াম কতটুকু কার্যকরী হবে তা নির্ভর করে আপনি প্রতিদিন কতটুকু সময় ব্যায়াম করছেন তার উপর। পেটের চর্বি কমাতে হলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩০০ মিনিট পেটের ব্যায়াম করতে হবে।
৮. কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করুন
প্রতিদিন ৫০ গ্রামের কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করলে পেটের মেদ কমে, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
একটি গবেষণায় দেখা যায় যারা কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে বেশি পরিমাণে শস্য দানা খায় তাদের মেদ হওয়ার সম্ভাবনা ১৭% কম থাকে।
৯. সয়াবিনের পরিবর্তে নারকেল তেল ব্যবহার করুন
পেট কমানোর একটি অন্যতম উপায় হল রান্নায় নারকেল তেল ব্যবহার করা। নারকেল তেল স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলির মধ্যে একটি যা আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। নারিকেল তেলে থাকা মিডিয়াম চেইন ফ্যাট (Medium chain fat) বিপাক শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয়।
গবেষণা হতে জানা যায়, পেটে অতিরিক্ত মেদ আছে এমন লোকেরা যদি তাদের অন্যান্য খাবারের রুটিন পরিবর্তন না করে, তাদের খাবারের তালিকায় শুধুমাত্র নারকেল তেল যোগ করেন এবং টানা ১২ সপ্তাহ ধরে তা চালিয়ে যান। ফলাফল স্বরূপ তাদের পেটের চর্বি আশানুরূপভাবে কমতে শুরু করে।
১০. ওজন উত্তোলন প্রশিক্ষন
ওজন উত্তোলন প্রশিক্ষন বা রেসিস্টেন্স ট্রেইনিং পেশীকে শক্তিশালী করার একটি ব্যায়াম। এই ব্যায়াম পেশীকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পেটের চর্বি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
প্রকৃতপক্ষে, অ্যারোবিক এবং ওজন উত্তোলন ব্যায়াম একসাথে করতে পারলে বেশি ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
১১. মিষ্টি পানীয় ও সফট ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন
সফট ড্রিঙ্কস পান করা আজ থেকেই বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ কোমল পানীয়গুলি তরল ফ্রুক্টোজ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা আপনার পেটের চর্বি বাড়ায়। ১০ সপ্তাহের একটি গবেষণায় দেখা যায় সফট ড্রিংকসে থাকা ফ্রুক্টোজ গ্রহনের ফলে ফ্যাটি লিভার (Fatty liver) হয় এবং পেটের চর্বি বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যা পরবর্তিতে ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়।
১২. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে ওজনও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমায় না তাদের ওজন বেশি হয়।
১৬,০০০ এরও বেশি মহিলাদের নিয়ে ১৬ বছরের একটি দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি রাতে ৫ ঘন্টার কম ঘুমায় তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যাদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার (Sleep apnea) সমস্যা আছে তারাও পেটের চর্বি বাড়ার ঝুঁকিতে আছেন। একজন সুস্থ মানুষের রাতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
১৩. প্রতিদিনের খাদ্য গ্রহন ও ব্যায়েমর একটি তালিকা তৈরি করুন
এমন অনেক পদ্ধতি আছে যা আপনার ওজন এবং পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু ওজন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত আপনার শরীরের চাহিদার তুলনায় কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ডায়েরি বা অনলাইন খাদ্য ট্র্যাকার বা অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করছেন তা নোট করে রাখতে পারেন। এই কৌশল পেট কমানোর উপায় হিসেবে অনেক উপকারী। এছাড়াও, খাদ্য-ট্র্যাকিং অ্যাপ, আপনি প্রতিদিন কি পরিমাণ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার গ্রহন করছেন তা দেখতে সাহায্য করে।
১৪. চর্বিযুক্ত মাছ খান
চর্বিযুক্ত মাছ অবিশ্বাস্যভাবে স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য উপাদান। এতে থাকে উচ্চমানের প্রোটিন এবং ওমেগা ৩ ফ্যাট (Omega-3 fat) যা আপনাকে রোগ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এই ফ্যাটগুলি ভিসেরাল ফ্যাট (Visceral Fat) কমাতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায় ওমেগা ৩ ফ্যাট (Omega-3 fat) ফ্যাটি লিভার ও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
কিছু চর্বিযুক্ত মাছের তালিকা:
- স্যালমন (Salmon)
- সার্ডিন (Sardin)
- হেরিং (Herring)
- ম্যাকেরেল (Mackerel)
১৫. ফলের জুস খাওয়া বন্ধ করুন
যদিও ফলের জুসে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে, কিন্তু এতে সোডা এবং অন্যান্য মিষ্টি পানীয়র মতো উচ্চ মাত্রার চিনি রয়েছে।
২৪০ মিলি আপেলের জুসে ২৪ গ্রাম সুগার থাকে, যার অর্ধেকটাই ফ্রুক্টোস। পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে ফলের জুস, চিনিযুক্ত চা ইত্যাদি পরিহার করুন।
১৬. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, এটি শরীরের শর্করার পরিমাণ কমায়। এতে রয়েছে এসিডিক এসিড (Acidic acid) যা চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
টানা ১২ সপ্তাহ প্রতিদিন ১ চামচ করে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খেলে আধা ইঞ্চি পর্যন্ত পেটের ভুরি কমে। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই পানি মিশিয়ে খাবেন তা না হলে দাঁতের এনামেল (Enamel) ক্ষয় হতে পারে।
১৭. প্রোবায়োটিক খাবার খান
প্রোবায়োটিক (Probiotic) খাবার বলতে ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ খাবারকে বুঝায়। এইসব খাবারে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তারা উপকারী ব্যাকটেরিয়া, এরা শরীরের কোন ক্ষতি করে না, বরং উপকার করে। প্রোবায়োটিক খাবার খেলে দেহের প্রতিরক্ষা (Immune system) ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে এবং পেটের চর্বি হ্রাস সহ ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
প্রোবায়োটিক খাবারের মধ্যে প্রধানত ল্যাকটোব্যাসিলাস (Lactoballus) পরিবারের সদস্য, যেমন ল্যাকটোব্যাসিলাস ফেরমেন্টাম (Lactoballus fermentum), ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যামাইলোভারাস (Lactoballus amylovorus) এবং বিশেষ করে ল্যাকটোব্যাসিলাস গ্যাসেরি (Lactoballus gasseri) ব্যাকটেরিয়া থাকে।
কিছু প্রোবায়োটিক খাবারের উদাহরণ হল-
- দই
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
- Fermented বা গাঁজানো সবজি ইত্যাদি
১৮. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (Intermittent Fasting) সম্প্রতি ওজন কমানোর পদ্ধতি হিসাবে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পদ্ধতিটি অনেকটা রোজা রাখার মত, নির্দিষ্ট একটা সময় না খেয়ে থাকতে হয়।
এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে দুই দিন ২৪ ঘন্টা করে না খেয়ে থাকতে হয় অথবা প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয় এবং বাকি ৮ ঘন্টায় সমস্ত খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে হয়। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর মাধ্যমে ৬ মাসে ২-৭% পর্যন্ত পেটের চর্বি কমানো যায়।
তবে একটি গবেষণায় দেখা যায়, এই পদ্ধতি মহিলাদেরে তুলনার পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই পদ্ধতিকে আরও কার্যকরী করে তোলা যায়। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর ফলে যদি আপনার কোন ধরণের সমস্যা দেখা যায় তাহলে তা অনুসরণ না করাই ভাল।
১৯. গ্রিন টি পান করুন
গ্রিন টি একটি ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্যকর পানীয়। এতে রয়েছে ক্যাফেইন (Caffein) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এপিগালোকেটিচিন গ্যালেট (EGCG) । ইজিসিজি হল একধরনের ক্যাটেচিন (Catechin), যা পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। গ্রিন টি গ্রহণের সাথে সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করলে আরও ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
২০. লাইফস্টাইলের পরিবর্তন
আপনি যদি ভাল ফলাফল চান, তাহলে আপনাকে বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয় করতে হবে। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
অতএব, দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করা আপনার পেটের অতিরিক্ত মেদ বা ভূড়ি কমিয়ে সুস্থ এবং সুন্দর জীবন যাপনের চাবিকাঠি।
পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম
পেটের অতিরিক্ত চর্বি আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি উচ্চ রক্ত শর্করা (High blood sugar), উচ্চ কোলেস্টেরল (High cholesterol), উচ্চ রক্তচাপ (High blood pressure) এবং হৃদরোগের (heart disease) মতো কিছু গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।
অতএব, পেটের চর্বি কমানো গুরুত্বপূর্ণ। পেটের চর্বি কমানোর জন্য, আপনি যে পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করেন তা সীমিত করতে হবে অথবা প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহন করেন তা খরচ বা ঝরিয়ে ফেলতে হবে। ক্যালরি খরচ করা এবং পেট কমানোর উপায় হল ব্যায়াম।
পেটের চর্বি কমানোর সহজ কিন্তু কার্যকর কিছু ব্যায়াম হল:
১. নিয়মিত হাঁটা
এটি খুব সহজ কার্ডিও ব্যায়াম যা আপনাকে পেটের চর্বি কমাতে এবং ফিট থাকতে সাহায্য করে। যদি আপনি অতিরিক্ত হারে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন তবে সুষম খাদ্য গ্রহন করুন এবং নিয়মিত হাঁটুন। সকালের ফ্রেশ বাতাসে ত্রিশ মিনিটের জন্য দ্রুত হাঁটা পেটের চারপাশের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, এটি আপনার বিপাক এবং হৃদস্পন্দনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি দৌড়ানোও ফ্যাট বার্নের জন্য উপকারী। সর্বোপরি, এই হাঁটাহাঁটি করার জন্য আপনার কোনও সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই, শুধু ইচ্ছেটাই প্রয়োজন।
২. ক্রাঞ্চিং (Crunches)
পেটের চর্বি পোড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম হল ক্রাঞ্চিং।
পেটের ভুরি কমানো অন্যতম সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যায়াম এটি।
আপনার হাঁটু বাঁকিয়ে এবং মাটিতে পা রেখে সমতল মেঝেতে শুয়ে শুয়ে এই ব্যায়াম করতে পারেন।
আপনার হাত তুলে মাথার পিছনে রাখুন অথবা বুকে ক্রস করে রাখতে পারেন।
আস্তে আস্তে শ্বাস নিন এবং সেই সাথে আপনার মাথা ও পিঠ বাকিয়ে পায়ের কাছে নিয়ে যান, এভাবে কমপক্ষে ১০ বার করুন।
এই ব্যায়াম করার ফলে পেটের চর্বি কমার সাথে সাথে আপনার ফিগারটাও সুন্দর করতে পারবেন।
৩. সাইকেল চালানো
পেটের ভুরি কমানোর ব্যায়াম বা পেটের চর্বি পোড়ানোর একটি কার্যকর উপায় হল সাইক্লিং। সাইক্লিং আপনার হার্ট রেট (Heart rate) বাড়াতে সাহায্য করে এবং উল্লেখযোগ্য হাড়ে ক্যালোরি বার্নের ক্ষমতাও রাখে। এছাড়াও এটি আপনাকে আপনার উরু এবং কোমরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই সাইকেল চালিয়ে নিকটস্থ স্থানে যাতায়াত শুরু করুন। নিয়মিতভাবে সাইকেল চালান কারণ এই ব্যায়াম পেটের চর্বি কমাতে সত্যিই কার্যকর হতে পারে।
৪. অ্যারোবিক ব্যায়াম
আপনি যদি জিমে না গিয়ে পেটের মেদ হারাতে চান, তাহলে আপনি কিছু উচ্চ মাত্রার এরোবিক ব্যায়াম করতে পারেন। এই ব্যায়াম অনেক কার্যকর, সহজ, মজাদার এবং সর্বাধিক পরিমাণ ফ্যাট বার্নের জন্য দুর্দান্ত।
৫. জুম্বা (Zumba) ব্যায়াম
জুম্বা ব্যায়ামের শুরু হয় মূলত কলম্বিয়ায়। গানের সাথে নেচে নেচে ব্যায়াম করার এক অভিনব উপায় এটি।
জুম্বা ভুরি কমানোর জন্য অতি কষ্টকর একটি ব্যায়াম। এটি কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেসে ধরে রাখতে সাহায্য করে, কোলেস্টেরল (Cholesterol) এবং রক্তে শর্করার মাত্রা, এবং দ্রুত পেটের চর্বি কমায়। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় জুম্বা ব্যায়াম করার ফলে গড়ে প্রতি মিনিটে ৯.৫ ক্যালোরি বার্ন হয় যা অন্যান্য ব্যায়ামের তুলনায় বেশি। সুতরাং, একটি গান বাজিয়ে দিন এবং এখনই জুম্বা ব্যায়াম শুরু করুন!
বেলি ফ্যাট বা ভিসারাল ফ্যাট আপনার পেটের অঙ্গগুলির মধ্যে এবং চারপাশে সঞ্চিত চর্বি। এটি আপনার ক্যান্সার (Cancer), উচ্চ রক্তচাপ (High blood pressure), স্ট্রোক (Stroke), ডিমেনশিয়া (Dimentia), হৃদরোগ (Heart disease) এবং ডায়াবেটিসের (Diabetes) মত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই দ্রুত পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর উপর গুরুত্ব দিন।
আপনি কিন্তু হুট করেই শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পারবেন না। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে রুটিন মাফিক খাবার, ব্যায়াম এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমেই শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কাটানো সম্ভব। তাই আর দেরি কেন? আজ থেকেই অল্প অল্প করে উপরে উল্লিখিত ২০ টি উপায় নিজের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলুন।
-References
DoctorNDTV. (2018, December 31). health/these-simple-and-effective-exercises-can-help-melt-belly-fat-within-no-time-do-include-them-in-your-1970403. Retrieved September 9, 2021, from www.ndtv.com
Flinn. (2021, September 2). Lose-Belly-Fat. Retrieved September 7, 2021, from www.wikihow.com:
Spritzler. (2020, February 24). nutrition/20-tips-to-lose-belly-fat#_noHeaderPrefixedContent. Retrieved September 7, 2021, from www.healthline.com:
Last Updated on April 12, 2023
Leave A Comment