কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো কি কি! খুব অবাক করার মত একটা কথা, তবে হ্যাঁ, এমন কিছু খাবার আছে যা অতিরিক্ত খেলে আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর কারণ হিসাবে দাঁড়াতে পারে।
কিডনি বা বৃক্ক আমাদের দেহের অপরিহার্য একটি অঙ্গ। এটি প্রধানত দেহের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে এবং রক্ত থেকে দূষিত বর্জ্য পদার্থগুলো ছেঁকে বের করে দেয়। ‘ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অফ হেলথ’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের কিডনি দৈনিক প্রায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে এবং ২ লিটার বর্জ্য বের করে দেয় ।
কিন্তু আমরা নিজের অজান্তেই অনেক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের কিডনির অনেক ক্ষতি করছি। আমরা যা কিছু খাই বা পান করি না কেন তা আমাদের কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে।
Table of Contents
কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার গুলো কি কি
১. লাল মাংস (Red meat):
আমরা সবাই জানি প্রোটিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানের যেকোন কিছুই ক্ষতিকারক হতে পারে। লাল মাংস যেমন- গরুর মাংস, ছাগলের মাংস প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ অতিরিক্ত খাবার আমাদের কিডনির ক্ষতি করতে পারে। কারন এই উচ্চ প্রোটিন বিপাকের সময় কিডনির উপর চাপ তৈরি করে ।
প্রোটিন কি
প্রোটিন (Protein) হল এক প্রকারের বৃহৎ জৈব অণু কিংবা বৃহদাণু, যা এক বা একাধিক দীর্ঘ অ্যামিনো অ্যাসিড উদ্বৃত্তের শৃঙ্খল নিয়ে গঠিত।
প্রোটিনের একটি ‘কনভেয়ার বেল্ট’ আছে । প্রোটিন যখন অপসারনের জন্য কিডনির দিকে অগ্রসর হয় তখন তারা এই কনভেয়ার বেল্টের কারনে গতির সাথে সামঞ্জস্যতা রাখতে পারে না। ফলে কিডনি বর্জ্যজাত দ্রব্যগুলো নিষ্কাশন করতে পারে না, তখন আমাদের দেহে এসিডিক ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে থাকে যা কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
২. অ্যালকোহল
অ্যালকোহল শরীরের জন্য সর্বদাই ক্ষতিকর, বিশেষ করে কিডনির জন্য। আর তা যদি হয় অতিমাত্রায় তাহলে তো কথাই নেই।অ্যালকোহল সঠিকভাবে আমাদের রক্তে মিশতে পারে না। মদ্যপান বা অ্যালকোহল গ্রহনে কিডনির নেফ্রনে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারনে পানিশূন্যতা হতে পারে। যার ফলে কিডনি ঠিকমত কাজ করতে পারেনা।
৩. খাবার লবন
লবন ছাড়া খাবারের স্বাদ আসে না । তবে বেশী লবন খেলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে । লবনে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড থাকে । আমাদের শরীরের তরলের যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখতে সোডিয়ামের প্রয়োজন হয় বিশেষ করে আমাদের ইলেক্ট্রোলাইট এর পরিমাণ ঠিক রাখতে ।
কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রার সোডিয়ামের কারনে কিডনি পানি ধরে রাখে । এছাড়াও কিডনিতে পাথর হতে পারে । বেশী মাত্রায় লবন খেলে প্রোটিনের পরিমান বেড়ে যায় যা প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় এবং হাড়ের ক্যালসিয়ামও প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় ।
৪. ক্যাফেইন
ক্যাফেইন হচ্ছে এক ধরনের উদ্দীপক যা আমাদের শরীরকে সতেজ ও চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে । লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ক্যাফেইন এর উপর নির্ভরশীল । কফি, চা, কোকো এবং সোডাতে প্রচুর পরিমানে ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের কিডনির জন্য খুবই বিপজ্জনক । ক্যাফেইন রক্ত প্রবাহের গতিবৃদ্ধি করে যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় ।
এছাড়াও ক্যাফেইন পানিশূন্যতার জন্য দায়ী । অতিরিক্ত পানিশূন্যতার কারনে কিডনিতে পাথর হতে পারে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের প্রতিদিন ২ কাপ কফি অথবা 3 কাপ এর অধিক চা পান করা উচিত নয়।
৫. কৃত্রিম মিষ্টি বা চিনি (Artificial Sweeteners):
পরিশোধিত চিনি আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর । দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া, মোটা হয়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিক এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অনেকেই কৃত্রিম চিনির উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছেন । কিন্তু এসমস্ত কৃত্রিম চিনি বা মিষ্টি আমাদের জন্য কতটা অনিরাপদ তা আমরা অনেকে জানি না । কৃত্রিম মিষ্টি বা চিনিতে কিছু উপাদান থাকে যা কিডনি ক্যান্সার সহ অন্যান্য রোগের জন্য দায়ী ।
তাই আমাদের উচিত কৃত্রিম মিষ্টি বা চিনি ব্যাবহারে বিরত থাকা এবং প্রাকৃতিক মিষ্টি বা চিনি যেমন- মধু, আঁখের চিনি ব্যাবহার করা ।
৬. দুগ্ধজাত পণ্য :
দুগ্ধজাত পণ্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তু এবং প্রোটিন-এর একটি চমৎকার উৎস । যাদের কিডনি রোগ আছে তাদেরকে অবশ্যই দুগ্ধজাত পণ্য ব্যাবহারে সতর্ক থাকতে হবে। কারন অনেক দুগ্ধজাত দ্রব্য প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের পরিমান বাড়িয়ে দেয় যার ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। এছাড়াও যদি কিডনি অতিরিক্ত কাজ করে তখন তারা প্রোটিন নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রন করতে পারে না এবং তখন প্রোটিন বৃদ্ধি পেয়ে অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় পরিনত হয় ।
৭. কার্বোনেটেড বেভারেজ
শরীরের সতেজতা ফিরে পেতে বা চাঙ্গা রাখতে আমরা কার্বোনেটেড বেভারেজ (সোডা), এনার্জি ড্রিংকস ও কোমল পানীয় পান করি । কার্বোনেটেড সোডা, কোমল পানীয় এবং এনার্জি ড্রিংকস সাধারণত কিডনি সমস্যার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে কারন এইসব পানীয়তে ক্যাফেইন (caffeine), কৃত্রিম চিনি খুব বেশী পরিমানে থাকে ।
যদিও খাবার পানি বা লেবু পানির তুলনায় এগুলো অনেক বেশি সুস্বাদু হয় কিন্তু তা কিডনির কোন উপকারেতো আসেই না বরং খুব দ্রুত কিডনি নষ্ট করতে সাহায্য করে ।
৮ জেনেটিক্যালি মোডিফাইড করা খাদ্য
জেনেটিক্যালি মোডিফাইড অর্থাৎ জীন (Genetic) এর পরিবর্তন। ইদানীং ফসল চাষে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদনাশক ও কীটনাশক পাওয়া যায়। এগুলো ফল-মূল থেকে চাল পর্যন্ত সবকিছুতেই ব্যাবহার করা হয়। যারা কিডনি অসুখে ভুগছেন তাদের জন্য এই সমস্ত রাসায়নিক উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করা খাবার আরও বিপদজনক।
সুতরাং সুস্থ থাকতে হলে সঠিক খাবার নির্বাচন করতে হবে, পরিমিত পরিমানে খাবার গ্রহন করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
Last Updated on April 12, 2023
Leave A Comment