ওজন কমানোর নানাবিধ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে কোনটি সহজ আবার কোনটি বেশ কষ্টসাধ্য। শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কারোর কাছেই কাম্য নয়। আবার ওজন কমানোর আকাঙ্ক্ষা থাকলেও কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো সবার জন্য সম্ভব হয়ে উঠে না।
আর তাই এই অনুচ্ছেদে আমরা আলোচনা করবো ওজন কমানোর ১৪ টি সহজ উপায় যা আপনাকে ৩০ দিনে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য আপনার খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
Table of Contents
১ মাসে ৫ কেজি ওজন কমানোর উপায়
১ মাসে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে পারলে তা মোটেও কম নয়। বরং দীর্ঘমেয়াদী ওজন কমানোর পরিকল্পনা হিসেবে এই পদ্ধতিটি বেশ সহজ ও সবচেয়ে ভালো বলে বিবেচিত। কারণ ধীরে ধীরে ওজন কমানোর পদ্ধতিতে ক্ষুধায় কষ্ট পেতে হয় না। এবং সেই সাথে এটিকে নিরাপদ বলে মনে করা হয় অর্থাৎ শরীরের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। (Link, 2018)
ব্যায়াম, খাবার ও ঘুমের মাধ্যমে ১ মাসে ওজন কমানোর ১৪ টি সহজ উপায় ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। তবে তার আগে জেনে রাখুন যে ওজন কমানোর ১ মাসের এই যাত্রাটি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর পাশাপাশি আরো কিছু উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। যেমন:
- রক্তে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে
- খারাপ কোলেস্টেরল (LDL- low density lipoprotein, TG- triglycerides) এর পরিমাণ কমায়
- রক্তচাপ (blood pressure) নিয়ন্ত্রণে রাখে ইত্যাদি
১. ৩০ দিনে ওজন কমানোর উপায়: শর্করার পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন
আমাদের খাদ্য তালিকার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভাত যা শর্করা (carbohydrate) জাতীয় খাবার। সাদা ভাত পরিশোধিত শর্করার (refined carbs) একটি প্রধান উৎস যা শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী। পরিশোধিত শর্করার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে কিন্তু ফাইবার ও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে না বললেই চলে। এছাড়াও পরিশোধিত শর্করা সহজেই হজম হয়ে যায় এবং ঘন ঘন ক্ষুধা পায়। সেই সাথে রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা (sugar) বাড়তে থাকে। আর তাই ওজন কমানোর সর্বপ্রথম নির্দেশনা হলো খাদ্য তালিকায় পরিশোধিত শর্করার পরিমাণ কমাতে হবে।
২৮৩৪ জন ব্যক্তির উপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বেশি পরিমাণে পরিশোধিত শর্করা গ্রহণ করেন তাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায় এবং সেই সাথে পেটে মেদ জমার যোগসূত্র রয়েছে বলেও ধারণা করা হয়। উল্লেখ্য পরিশোধিত শর্করা জাতীয় খাবার গুলো হলো সাদা ভাত, ময়দা দিয়ে প্রস্তুত রুটি ও অন্যান্য খাবার, চিনি ইত্যাদি।
২. ওজন কমানোর খাবার: ফাইবার
খাদ্যের প্রধান অংশ ভাত বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও আপনাকে কম খেয়ে থাকতে হবে না। বরং পেট ভরে খাওয়ার জন্য খাবার তালিকায় যোগ করতে পারেন ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার। ফাইবার সহজে হজম হয় না ফলে পাকস্থলীতে দীর্ঘসময় ধরে থাকে এবং ক্ষুধা বোধ কম হয়। সেই সাথে ফাইবারে শর্করা ও ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং তা রক্তে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আর তাই প্রত্যেকদিন নূন্যতম ৪০ গ্রাম অথবা তার বেশি পরিমাণে ফাইবার গ্রহণ করা উচিত। বেশি পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এমন খাবার গুলো হলো আটার রুটি, ওটমিল, মটরশুটি, শিম, ডাল, বার্লি, কমলা, গাজর, খোসাসহ নাশপাতি, আপেল, কলা ইত্যাদি।
৩. ওজন কমানোর জন্য খাদ্য তালিকায় যোগ করুন আমিষ
আমিষ জাতীয় খাবার খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে বা হার্টের রোগের সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু সব আমিষ শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং আপনি কোন ধরনের আমিষ কিভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে উপকারিতা। যেমন: সকালের খাবারে ভালো মানের আমিষ খেলে সারাদিনের কাজকর্মের জন্য যথেষ্ট শক্তি পাওয়া যায় এবং আমিষ ধীরে ধীরে হজম হয় বলে সহজেই ক্ষুধা লাগে না। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তা পেটে মেদ জমতে দেয় না।
ভালো মানের আমিষ বলতে মাছ ও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আমিষকে বোঝায়। মাছের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা হার্টের জন্য উপকারী। সেই সাথে মুরগির মাংস, ডিম, দুধ, পনির, মাখন, গরুর মাংস ইত্যাদিও পরিমিত মাত্রায় খাওয়া যেতে পারে।
৪. ওজন কমানোর উপায় ব্যায়াম (Resistance training)
Resistance training হলো এমন একধরনের ব্যায়াম যার মাধ্যমে শরীরের মাংসপেশী শক্তিশালী হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে। তবে এর পাশাপাশি এই ব্যায়ামের মাধ্যমে বিপাক প্রক্রিয়ার (metabolism) গতি বৃদ্ধি পায় যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
Resistance training করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো জিমে (Gym) গিয়ে ব্যায়াম করা। জিমে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম সামগ্রী রয়েছে যার মাধ্যমে উত্তম উপায়ে resistance training করা যায়। তবে বাড়িতেও পুস আপ (Push up) এবং ডাম্বেল উঠানামা করার মাধ্যমে এই ব্যায়াম করা যেতে পারে।
৫. ওজন কমানোর ব্যায়াম (কার্ডিও)
খাবারের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যায়াম। আর শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটি ভালো ব্যায়াম হলো কার্ডিও (Cardio) যার মানে বোঝানো হয় এমন ধরনের ব্যায়াম যা হৃদপিন্ডের (Heart) কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। ব্যায়ামের মাধ্যমে হৃদপিন্ডের কার্যক্রম বেড়ে গেলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি খরচ হতে থাকে। ৩০ মিনিট কার্ডিও ব্যায়াম করা হলে ৩০০ ক্যালরি ব্যয় হয় যা শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে।
কার্ডিও ব্যায়াম করার পদ্ধতি হলো হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি। অনেকেই বলেন যে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করার পরেও তাদের ওজন কমছে না। এক্ষেত্রে কারণ হতে পারে আপনার হাঁটাহাঁটির ধরন। মনে রাখবেন যখন হাঁটতে বের হবেন তখন আপনার প্রধান কাজ এবং উদ্দেশ্য হলো হাঁটা। অর্থাৎ হাঁটার পথে অহেতুক গল্প করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং সেই সাথে হাঁটার দিকে মনোযোগ দিয়ে যতটুকু সম্ভব জোরে হাঁটার চেষ্টা করুন।
৬. মেদ কমানোর ব্যায়াম (HIIT)
HIIT হলো high intensity interval training এর সংক্ষিপ্ত রূপ যা দ্বারা বোঝানো হয় এমন ধরনের ব্যায়াম যা খুব দ্রুত গতিতে এবং মাঝে বিরতি দিয়ে করতে হয়। HIIT ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ব্যয় হতে থাকে। শরীরের মেদ কমিয়ে চিকন হওয়ার জন্য ব্যায়াম হিসেবে HIIT একটি সেরা ব্যায়াম। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে অন্য সব ব্যায়ামের তুলনায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ক্যালরি ব্যয় হয়ে থাকে এই ব্যায়ামের মাধ্যমে। তবে একইদিনে কার্ডিও এবং HIIT ব্যায়াম করা যাবে না। তাহলে অতিরিক্ত ব্যায়ামের দরুন ক্যালরির ঘাটতি, শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ হবে।
HIIT ব্যায়াম করার উপায় হলো খুব দ্রুত গতিতে কিছুক্ষণ দৌড়ানো এবং তারপর বিশ্রাম নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় কয়েকবার ব্যায়াম করতে হবে। HIIT ব্যায়াম করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রেডমিলে (Treadmill) দৌড়ানো অথবা সাইকেল চালানো।
৭. ক্যালরি গণনা শুরু করুন
আমরা যে খাবার খাই তা থেকে প্রধানত ক্যালরি পাই যা দ্বারা আমাদের শরীরের সমস্ত কার্যকলাপ চলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরি প্রয়োজন হয়ে থাকে। শরীরের আকার, লিঙ্গ এবং পরিশ্রমের ধরন অনুযায়ী ক্যালরি চাহিদা কম বেশি হতে পারে। আপনার শরীরের জন্য দৈনিক কতটুকু পরিমাণে ক্যালরি প্রয়োজন এবং তা কি কি খাবার থেকে পাওয়া যেতে পারে তা নির্ণয় করতে একজন পুষ্টিবিদের (Dietitian) পরামর্শ গ্রহণ করুন।
উল্লেখ্য খাদ্যের সাতটি উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে ক্যালরি পাওয়া যায় ফ্যাট (Fats) থেকে আর সবচেয়ে কম ক্যালরি রয়েছে ফাইবার জাতীয় খাবারে। ক্যালরি হিসেবে ফ্যাটের পরেই আমিষের অবস্থান তবে ভিটামিন, মিনারেলস এবং পানিতে কোনো ক্যালরি নেই।
৮. ওজন কমাতে খাবার খেতে হবে ধীরে ধীরে (Eat More Slowly)
ওজন কমাতে কোন ধরনের খাবার খেতে হবে সেই ব্যাপারে যেমন নির্দেশনা রয়েছে তেমনি ভাবে আপনি কিভাবে খাবার খাচ্ছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমানোর জন্য একটি চমকপ্রদ টিপস হলো ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করেন তাদের শরীরে বিশেষ একধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে থাকে যাতে কম খাওয়ার পরেই পেট ভরে গেছে এমনটি মনে হয়। আর কম পরিমাণে খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন কমতে থাকে।
৯. কোমল পানীয় পরিহার করুন
কোমল পানীয় (Carbonated beverages) তে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালরি রয়েছে যা ওজন বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়াও কোমল পানীয় লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই কোমল পানীয় পানের অভ্যাস পরিহার করা উচিত।
তবে পানীয় হিসেবে পরিমিত মাত্রায় চা ও কফি খাওয়া উপকারি হতে পারে। কারণ চা ও কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন (Caffeine) ক্ষুধা বোধ দূর করে। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে (দৈনিক কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার) পানি পান করতে হবে। বিশেষত খাবার খাওয়ার আগে পানি পান করলে ক্ষুধা কমে যায়।
১০. ওজন কমানোর উপায়ঃ শাকসবজি ও ফলমূল
ফলমূল ও শাকসবজিতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নানাবিধ উপাদান যেমন ভিটামিন, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। সেই সাথে আরো রয়েছে ফাইবার তবে কম পরিমাণে রয়েছে ক্যালরি যা ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজনীয়। আর তাই প্রত্যেকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। সবজি যেমন রান্না করে খাওয়া যায় তেমনি ভাবে কিছু কিছু সবজি বিশেষত টমেটো, শশা, গাজর ইত্যাদি সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। এছাড়াও তিনবেলা খাবারের মাঝে নাস্তা (Snacks) হিসেবে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার না খেয়ে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত শাকসবজি ও ফলমূল খান তাদের ক্ষেত্রে সাধারণের তুলনায় ১৭ শতাংশ পর্যন্ত শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। সেই সাথে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে কারণ ফলমূল ও শাকসবজিতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইনফেকশন (Infection) প্রতিরোধ করে।
১১. সস (Sauces) এবং আচার বর্জন করুন
খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে অনেকেই সস (Sauces) ব্যবহার করে থাকেন। তবে এটি শুধু খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করে না বরং বেশি পরিমাণে খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। আর তাই আপনি যদি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তবে খাদ্য তালিকা থেকে সস বাদ দিতে হবে। সসের মতো আচার খাওয়ার অভ্যাসও বর্জন করা জরুরি। কারণ খাবারের সাথে মিশিয়ে আচার খাওয়ার ফলে খাদ্যের স্বাদ বেড়ে যায় যা বেশি খাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সাথে আচার তৈরি করতে চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা ওজন বেড়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ।
১২. ওজন কমাতে রোজা রাখুন বা Intermittent Fasting করুন
রমজান মাসে রোজা রাখার ব্যাপারে যেমন ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে তেমনি ভাবে এর কিছু শারীরিক উপকারিতাও রয়েছে। রোজা রাখার মাধ্যমে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকা হয় যা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়তা করে। উল্লেখ্য রমজান মাস ছাড়াও রোজা রাখা যেতে পারে।
রোজা ছাড়া এমনিতে না খেয়ে থাকার মাধ্যমেও শরীরের ওজন কমানো যায় যেই প্রক্রিয়াকে intermittent fasting বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে Intermittent fasting শরীরের ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী একটি প্রক্রিয়া। কারণ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে HGH (Human growth hormone) নামক হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে যা শরীরে মেদ কমাতে সহায়তা করে এবং ওজন কমে যায়। Intermittent fasting করার অনেক গুলো উপায় রয়েছে। যেমন:
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকা এবং পরবর্তী ৮ ঘন্টায় খাবার খাওয়া
- একদিন পর পর না খেয়ে থাকা
- সারাদিন না খেয়ে শুধুমাত্র রাতে খাওয়া ইত্যাদি
১৩. ওজন কমাতে ঘুমের ভূমিকা
সুস্থ থাকার জন্য যেমন ঘুম আবশ্যক তেমনি ভাবে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে ঘুমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা রাতের বেলায় কম ঘুমায় তাদের শরীরে Ghrelin নামক হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং সেই সাথে Leptin নামক হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। Ghrelin এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং Leptin এর পরিমাণ কমে যাওয়ার সাথে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। কারণ Ghrelin অতিরিক্ত ক্ষুধা বোধ সৃষ্টি করে আর Leptin ক্ষুধা মেটাতে সহায়তা করে। আর তাই এই হরমোন দ্বয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত।
তবে Ghrelin এর পরিমাণ কমাতে অথবা Leptin এর পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমানো যাবে না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো যথেষ্ট। রাতে ঘুমানোর ঘাটতি হলে আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হয় আর তা হলো বিপাক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে যার ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। (Mann, 2013)
১৪. ওজন কমাতে অলসতা পরিহার করুন
যারা সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটান তাদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ কোনো কাজ কর্ম না করলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি মেদ হিসেবে জমা হতে থাকে। আর তাই অলসতা পরিহার করে নূন্যতম পক্ষে ঘরের কাজ করার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেই সাথে বাগান করা, সিঁড়ি বেয়ে চলাফেরা করা, রান্না করা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যালরি ব্যয় করা যায়।
১ মাসে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানোর জন্য উপরে যে ১৪ টি উপায় বর্ণনা করা হয়েছে তা অনুসরণের মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারেন। আপনার শরীরের ওজন অনেক বেশি হলে ১ মাসের এই প্রক্রিয়াটি কয়েকমাস পর্যন্ত অনুসরণ করতে পারেন। তবে কেউ যদি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে শরীরের ওজন কমাতে চান সেক্ষেত্রে কিছু ওষুধ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
দ্রুত ওজন কমানোর ঔষধ
শরীরে কোনো রোগের কারণে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ সারানো এবং সাথে সাথে শরীরের ওজন কমানো সম্ভব হয়। এছাড়াও সরাসরি শরীরের ওজন কমাতে সক্ষম এমন কিছু ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন:
- Garcinia cambogia
- Hydroxycut
- Orlistat
- Glucomannan
- Synephrine
- Contrave
- Phentermine
- Qsymia
- Forskolin
সতর্কতা
ওজন কমাতে কার্যকরী উল্লেখিত ওষুধগুলো অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য এই ওষুধ গুলোর কার্যকারিতার পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আর তাই ওষুধ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কোন ওষুধের কার্যকরিতা কেমন এবং কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
সকালের খাবার: ডিম, অ্যাভোকাডো, পালং শাক, মাশরুম, কাঠবাদাম, পনির, দই, ইয়োগার্ট ইত্যাদি।
দুপুরের খাবার: অ্যাভোকাডো, স্যালমন, লেটুসপাতা, মটরশুটি, ছোলা, মাখন ইত্যাদি।
রাতের খাবার: মুরগির মাংস, শষা, টমেটো, ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি।
নাস্তা (Snacks): বাদাম, সবজি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি ভাজা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখিত ডায়েট টি এক দিনের পূর্ণাঙ্গ কোনো ডায়েট চার্ট নয়। বরং এই খাবার গুলো স্বাস্থ্যসম্মত এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে আর তাই কখন এগুলো খেতে পারেন সেই সম্পর্কিত ধারণা দেওয়া হয়েছে মাত্র। আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করে তা অনুসরণ করা জরুরী। (Gunnars, 2020)
উল্লেখ্য ওজন কমানোর জন্য পূর্ণাঙ্গ অনেক ডায়েট চার্ট রয়েছে। যেমন: ৭ দিনের জি এম ডায়েট, কিউকাম্বার ডায়েট, মিলিটারি ডায়েট ইত্যাদি।
১৪ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় (ডায়েট চার্ট সহ): The Cucumber Diet
মাত্র ৭ দিনে ৭ কেজি ওজন কমানোর উপায় (ডায়েট চার্ট সহ): The GM Diet
মাত্র ৩ দিনে শরীরের অতরিক্ত মেদ কমানোর উপায় (ডায়েট চার্ট সহ): The Military Diet
১ মাসে ওজন কমানোর সহজ এবং কার্যকরী উপায় গুলো অবলম্বন করে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে হয়ে উঠুন স্মার্ট এবং সুদর্শন। ওজন কমানোর এই যাত্রা শেষে পুনরায় আবার যেনো ওজন বেড়ে না যায় তার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করুন।
References
Gunnars, K. (2020, October 29). How to Lose Weight Fast: 3 Simple Steps, Based on Science. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/how-to-lose-weight-as-fast-as-possible
Link, R. (2018, October 01). How to Lose 10 Pounds in a Month: 14 Simple Steps. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/nutrition/lose-10-pounds-in-a-month
Mann, D. (2013, April 30). Sleep and Weight Gain. Retrieved from Web MD: https://www.webmd.com/sleep-disorders/features/lack-of-sleep-weight-gain
Last Updated on May 6, 2023
Leave A Comment