বাচ্চার ত্বকের, বড়দের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল (Sensitive) হয়ে থাকে অর্থাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং পরিবেশগত প্রভাবে সহজেই ত্বকে নানাধরনের সমস্যা হতে পারে। আর তাই বাচ্চাদের ত্বকের সুরক্ষার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

আপনার বাচ্চার স্ক্রিন ড্রাই হলে করণীয় কি, বাচ্চাকে কতক্ষণ রোদে রাখলে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, প্রতিদিন গোসল করানো উচিত হবে কিনা, কিভাবে নখ ও নাভির যত্ন নিতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো সহ মোট ৮ টি টিপস নিয়ে এই অনুচ্ছেদে আমরা কথা বলবো। এছাড়াও অনুচ্ছেদের শেষের দিকে শীতকালীন সময়ে শিশুর ত্বকের জন্য বিশেষ পরিচর্যা নেওয়ার কিছু টিপস তুলে ধরা হয়েছে।

শিশুর ত্বকের যত্নে ৮টি টিপস

১। বাচ্চাকে অতিরিক্ত রোদের তাপ থেকে দূরে রাখুন

বাচ্চাকে অতিরিক্ত রোদের তাপ থেকে দূরে রাখুন

শিশু বাচ্চাদের রোদে রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আর তাই চিকিৎসকেরা নির্দেশনা দিয়ে থাকেন যেনো বাচ্চাকে রোদ পোহানো হয়। কিন্তু আপনার বাচ্চাকে কখন এবং কতক্ষণ সময় ধরে রোদে রাখলে ভালো হবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাচ্চার শরীরে ভিটামিন ডি (Vitamin D) উৎপাদনের জন্য দিনের শুরুতে কিছুক্ষণ সময় (২০ থেকে ৩০ মিনিট) রোদ পোহাতে হবে। কারণ ভিটামিন ডি শরীরের গঠন, বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

এছাড়াও নবজাতক শিশুদের জন্ডিস (Neonatal Jaundice) হলে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে নির্দেশিত হয়ে থাকে রোদ পোহানো। জন্ডিস হলো এমন একধরনের রোগ যেখানে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। আর শিশুদের জন্ডিসের বেলায় রোদ পোহানোর মাধ্যমে রক্তের বিলিরুবিন ভেঙে অন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

রোদ পোহানোর সময় বাচ্চার শরীর যতটা সম্ভব অনাবৃত রাখতে হবে এবং এই সময়ে কোনো সানস্ক্রিন (Sunscreens) ব্যবহার করা যাবে না কারণ তাতে সূর্যের আলো থেকে কোনো উপকার পাওয়া যাবে না। এমনিতেও ৬ মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের ত্বকে সানস্ক্রিন লাগানোর ব্যাপারে নিষেধ করা হয়ে থাকে। রোদ পোহানোর ফলে ঘাম হতে পারে আর যার মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। এক্ষেত্রে শিশুর শরীরে যেন পানি স্বল্পতার সৃষ্টি না হয় তার জন্য রোদ পোহানোর পূর্বে শিশুকে দুধ অথবা পানি খাওয়াতে হবে।

ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য হোক অথবা জন্ডিসের চিকিৎসায় কোন ক্ষেত্রেই বাচ্চাকে তীব্র রোদে রাখা যাবে না। কারণ তীব্র রোদ যেমন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সূর্যের আলোর সাথে অতি বেগুনি রশ্মি (Ultraviolet ray) নিঃসৃত হয়ে থাকে। আর এই রশ্মি ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর যা ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

প্রয়োজন ছাড়া এমনিতেই শিশুকে বেশিক্ষণ রোদে খেলাধুলা করতে দেওয়া উচিত হবে না। প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার আগে এমন পোষাক পরিধান করাতে হবে যেনো তাতে শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা থাকে। অতিরিক্ত রোদ ও গরমের হাত থেকে বাঁচতে সাদা রঙের পোশাক পরানো উত্তম কারণ সাদা রঙ সূর্য রশ্মি প্রতিফলিত করতে পারে। অর্থাৎ শরীরে বেশি রোদ বা গরম লাগতে দেয় না।

২। বাচ্চার মাথা যেন অতিরিক্ত না ঘামে

রোদে থাকার দরুন হোক অথবা দীর্ঘসময় ধরে টুপি পরিয়ে রাখার জন্য বাচ্চার মাথা যেনো ঘেমে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাথায় অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে ত্বক ভেজা থাকলে সেক্ষেত্রে মাথার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। রোদে থাকার সময় এমন ক্যাপ/টুপি পড়াতে হবে যেনো তা খুব আঁটসাঁট হয়ে মাথায় লেগে না থাকে।

এছাড়াও বাচ্চাদের মাথা পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বড়দের শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না বরং বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত শ্যাম্পু বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।

বাচ্চাকে অতিরিক্ত রোদের তাপ থেকে দূরে রাখুন

অনেক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রাতের বেলায় জ্বর হয় আবার জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর ঘাম হয়ে থাকে বিশেষত মাথায় ঘাম হওয়ার ফলে অনেক সময় বালিশ ভিজে যেতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতি মাঝে মধ্যেই হলে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জ্বরের কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জ্বর ছাড়াও আরো কিছু রোগের কারণে বাচ্চাদের মাথায় অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাম হতে পারে। যেমন:

  • হৃদযন্ত্রের ত্রুটি
  • হরমোনের সমস্যা
  • ফুসফুসের রোগ
  • ইনফেকশন ইত্যাদি

উল্লেখ্য মাথায় ঘাম হলেই এই সমস্ত রোগ হয়েছে বলে আতংকিত হওয়া‌ যাবে না। তাপমাত্রার প্রভাবে এমনিতেই শিশুদের মাথায় ঘাম হতে পারে। তবে একদম স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এবং জ্বর ব্যতীতই অস্বাভাবিক ভাবে বাচ্চার মাথায় ঘাম হলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

৩। বাচ্চার ড্রাই স্কিন কিনা খেয়াল করুন

বাচ্চার ত্বক অতিরিক্ত ড্রাই বা খসখসে হলে সেটা যে কোনো মা বাবার জন্যই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে বিষয়টি অনেক শিশুর জন্য জন্মের পর স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয় যা পরবর্তীতে এমনিতেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। (Fletcher, 2020) বাচ্চার ত্বকের জন্য কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো হবে সেই বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাদান গুলো যেমন অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, নারিকেল তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি।

অনেকেই মনে করেন যে বাচ্চাদের শরীরে সরিষার তেল মাখলে হয়তো ত্বক কালো হয়ে যাবে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তবে বাজারে পাওয়া অধিকাংশ সরিষার তেলের মধ্যে ক্ষতিকর এবং ভেজাল উপাদান থাকে যা ত্বকের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর তাই আপনার ব্যবহৃত সরিষার তেল টি খাঁটি কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

শিশুর ত্বকের যত্নে তেল ছাড়াও বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, লোসন, পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ক্রিম এবং লোসনের মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যেমন Sulphates, Parabens, Phthalates, Triclosan, Triethanolamine, Retinol, Lead, Hydroquinone ইত্যাদি থাকলে তা বর্জন করুন। গ্লিসারিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরাসরি গ্লিসারিন না নিয়ে বরং গ্লিসারিনের সাথে কিছুটা পানি অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

৪। বাচ্চাকে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে গোসল করান

বাচ্চাকে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে গোসল করান

একদম ছোট্ট শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই বরং সপ্তাহে তিন দিন গোসল করানো হলে তাতেই যথেষ্ট। শিশুকে গোসল করানোর ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নির্দেশনা হলো:

  • হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উত্তম (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
  • বেবি শ্যাম্পু এবং বেবি সোপ (সাবান) ব্যবহার করতে হবে
  • চোখে যেন সাবান না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
  • ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে গোসল সম্পন্ন করতে হবে
  • গোসল শেষে পরিষ্কার ও নরম তোয়ালে দিয়ে সারা শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে
  • শরীর শুকানোর পর ডায়াপার এবং প্রয়োজনীয় পোশাক পড়ানো উচিত

যে সমস্ত বাচ্চা মাটিতে খেলাধুলা করে এমন বাচ্চাদের জন্য প্রতিদিন গোসল করানো উচিত। কারণ তাতে করে বাচ্চার শরীরের ময়লা দূর হবে এবং জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

৫। কোন প্রসাধনীতে বাচ্চার এলার্জি হয় তা খেয়াল করুন এবং সেগুলোর ব্যবহার বন্ধ করুন

শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune system) দেহের বাইরে অথবা অভ্যন্তরে কোনো ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি টের পেলে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যাকে এলার্জি বলা হয়। কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে এলার্জি দেখা গেলে বুঝতে হবে যে সেই উপাদানটিতে ক্ষতিকর কিছু রয়েছে যার ফলে শরীরে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। (Alli, 2020) এমন প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনার বাচ্চার শরীরে প্রসাধনী ব্যবহারের পর নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে এলার্জি হয়েছে। যেমন:

  • র‍্যাশ (Rashes)
  • ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
  • ছোপ ছোপ দাগ
  • ফুলে উঠা (Swelling)
  • চুলকানি (Itching)
  • ফোস্কা পড়া ইত্যাদি

উল্লেখ্য অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যে অংশ এলার্জি সৃষ্টি করে থাকে (IgE, Immunoglobulin E) তা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলে তখন সামান্য কিছুতেই এলার্জি হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতিতে অর্থাৎ বিভিন্ন খাবার, ধুলাবালি, ঠান্ডা আবহাওয়া ইত্যাদির প্রভাবে ঘন ঘন এলার্জি দেখা গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে IgE এর পরিমাণ দেখে সেই মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করে অতিরিক্ত এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

৬। বাচ্চার নখ কেমন বাড়ছে তা খেয়াল রাখুন

বাচ্চার নখ কেমন বাড়ছে তা খেয়াল রাখুন

বাচ্চার নখ কেমন বাড়ছে তা খেয়াল রাখুন

ছোট বাচ্চাদের নখ বড়দের তুলনায় দ্রুত গতিতে বাড়ে। নখ বড় হয়ে ধারালো হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে শিশুর শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঁচড় লাগতে পারে। আবার অনেক শিশু মুখের মধ্যে আঙ্গুল নিয়ে চুষতে থাকে যেখানে নখ বড় থাকলে মুখের মধ্যে ত্বক ছিঁড়ে (Abrasion) যেতে পারে। আর তাই বাচ্চাদের নখ কেমন বাড়ছে সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে এবং বড় হয়ে গেলে তা কেটে ফেলতে হবে। সাধারণত প্রতি সপ্তাহে একবার করে শিশুদের নখ কাটার প্রয়োজন পড়ে এবং তা শিশু যখন ঘুমিয়ে থাকে সেই সময়ে করলে সবচেয়ে নিরাপদ হবে।

যে সমস্ত বাচ্চা খেলাধুলা করে এবং নিজে নিজে খাবার মুখে তুলে খেতে পারে এমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও নখের ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ নখ বড় থাকলে তাতে ময়লা ও জীবাণু আটকে থাকে যা খাওয়ার সময় পেটের মধ্যে চলে যায়। সাধারণত নখের মাধ্যমে যে সমস্ত জীবাণু (Parasites) পেটে যায় তার ফলে কৃমির সংক্রমণ হয়ে থাকে।

অনেক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটি বাজে অভ্যাস দেখা যায় যে দাঁত দিয়ে নখ কাটে। এটি একটি অস্বাস্থ্যকর বিষয় যার ফলে দাঁত ও মাড়িতে ইনফেকশন হওয়া সহ পেটের রোগ হতে পারে এবং সেই সাথে নখের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই আপনার শিশুটি যেনো অস্বাস্থ্যকর এই কাজটিতে অভ্যস্ত না হয়ে পড়ে সেই দিকে খেয়াল রাখুন।

৭। অতিরিক্ত গরমে যেন র‍্যাশ না হয় তা খেয়াল রাখুন

অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে বাচ্চার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় র‍্যাশ (Rashes) হতে পারে বিশেষত গলার নিচে, বগল, কুচকি ইত্যাদি স্থানে র‍্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে। (Stöppler, 2021) র‍্যাশ হলে সেক্ষেত্রে অনেকেই ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে থাকেন যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ ট্যালকম পাউডারের মধ্যে Talc নামক একটি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা বাচ্চার ত্বকের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ উপাদান হলো নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যা ফাংগাস (Fungus) প্রতিরোধে সহায়তা করে। আর র‍্যাশ সাধারণত ফাংগাসের (Fungul infection) প্রভাবেই হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন যাবত ধরে র‍্যাশ থাকলে সেক্ষেত্রে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

র‍্যাশ হলে তা যেমন বাচ্চার জন্য যন্ত্রণাদায়ক তেমনি ভাবে তা বাচ্চার মায়ের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয়। আর তাই র‍্যাশ যেনো না হয় সেই জন্য প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন:

  • ডায়াপার পরানো এবং পরিবর্তনের বেলায় যত্নশীল হতে হবে। প্রস্রাব পায়খানা করার পর বেশিক্ষণ ভেজা ডায়াপার পড়িয়ে না রেখে দ্রুত তা পরিবর্তন করে দিতে হবে। এবং সবসময় ডায়াপার পড়িয়ে রাখা যাবে না বরং মাঝে মধ্যে ডায়াপার ছাড়া রাখতে হবে
  • নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং গোসলের পর শরীরের সব জায়গায় মুছে দিতে হবে যেনো কোথাও ভেজা না থাকে
  • বিছানা ও ঘরের পরিবেশ যেনো আদ্র এবং স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
  • বাচ্চার কাপড় ধোয়ার পর তা ভালোভাবে শুকাতে হবে। কারণ আদ্র পোশাক পরানো হলে তা থেকে ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে

৮। বাচ্চার নাভির যত্ন নিন 

বাচ্চার নাভির যত্ন নিন 

নবজাতক শিশুর নাভীর অতিরিক্ত অংশ (Umbilical cord) ১ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পেটের সাথে লেগে থাকতে পারে। অতঃপর তা আপনা আপনি ঝরে পড়ে যায় তবে কখনোই এটিকে টেনে ছাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। এই সময়ে নাভী পরিষ্কার এবং শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে।

পরিষ্কার করার জন্য গোসলের সময় শুধুমাত্র পানি ব্যবহার করাই যথেষ্ট এবং পরিষ্কারের পর শুকনো কাপড় দিয়ে তা মুছে ফেলতে হবে। তবে পরিষ্কার করার জন্য চিকিৎসক যদি কোনো ধরনের জীবাণু নাশক ব্যবহারের নির্দেশনা দিলে তা মেনে চলতে হবে।

কখনো কখনো শিশুর নাভিতে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে কতিপয় লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে ইনফেকশন হয়েছে এবং তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। লক্ষণ সমূহ হলো:

  • পুঁজ বের হওয়া (Pus)
  • লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া
  • রক্ত বের হওয়া (Bleeding)
  • জ্বর (১০০° ফারেনহাইটের বেশি)
  • দুর্গন্ধ বের হওয়া ইত্যাদি

নাভীর অতিরিক্ত অংশ ঝরে পড়ে যাওয়ার পর অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে পুনরায় নাভীর ভেতর থেকে ফুলে উঠে বাইরে বড় গোটার মতো হতে পারে যাকে মেডিকেলের ভাষায় হার্নিয়া (Hernia) বলা হয়। এটি একধরনের রোগ তবে তা মারাত্বক প্রকৃতির নয়। এবং এক্ষেত্রে তেমন কোনো যন্ত্রণাদায়ক লক্ষণ দেখা যায় না তবে একসময়ে ছোট্ট একটি শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে এটি কেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ে।

শীতে বাচ্চার ত্বকের বিশেষ যত্ন (বোনাস টিপস)

শীতে বাচ্চার ত্বকের বিশেষ যত্ন

শীতে বাচ্চার ত্বকের বিশেষ যত্ন

শীতকালে ছোট বড় সকলের জন্য ত্বকের ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ত্বক ফেটে যেতে দেখা যায় যার জন্য দিনে কমপক্ষে দুই বার এবং গোসল করানো হলে সেক্ষেত্রে গোসলের পরে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে বাচ্চাকে প্রতিদিন গোসল না করিয়ে বরং ২ থেকে ৩ দিন পর পর গোসল করানো হলেই তা যথেষ্ট হবে। সেই সাথে শীতের সুরক্ষা হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম পোশাক পরিধান করানো উচিত। হাত ও পায়ে মোজা পরাতে হবে।

যে সমস্ত বাচ্চা শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করে এমন বাচ্চাদের জন্য মাকে নিয়মিত phytonutrients সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারণ বুকের দুধ পান করে এমন বাচ্চা মায়ের শরীর থেকে পুষ্টি পেয়ে থাকে। তবে বড় বাচ্চাদের জন্য অর্থ্যাৎ যারা বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খেতে পারে তাদেরকে Phytonutrients সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।

এই পর্যায়ে Phytonutrients কি সেই বিষয়ে নিশ্চয়ই কৌতুহল বোধ করছেন? এটি হলো একধরনের পুষ্টি উপাদান যা শুধুমাত্র উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার (শাকসবজি ও ফলমূল) থেকে পাওয়া যায়। (Mikstas, 2020) আর বিশেষ এই পুষ্টি উপাদান টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা শীতকালীন সময়ে ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

শিশুর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো ত্বক যার জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। ত্বকের যে কোনো জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে অজ্ঞতা বা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে ভেষজ বা হারবাল উপাদান ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ তাতে সমস্যা আরো জটিলতর হয়ে পড়তে পারে আর তাই ত্বকের যে কোনো সমস্যার যথাযথ সমাধান পেতে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

 

References

Alli, R. A. (2020, December 17). Baby Skin Care Slideshow: Simple Tips to Keep Baby’s Skin Healthy. Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/parenting/baby/ss/slideshow-baby-skin-care

Fletcher, J. (2020, September 29). 8 Tips for Protecting Baby’s Skin. Retrieved from Healthline: https://www.healthline.com/health/baby/tips-for-protecting-baby-skin

Mikstas, C. (2020, October 27). Phytonutrients. Retrieved from WebMD: https://www.webmd.com/diet/guide/phytonutrients-faq

Stöppler, M. C. (2021, May 24). Baby Skin Care: Tips to Keep Newborn’s Skin Healthy. Retrieved from OnHealth: https://www.onhealth.com/content/1/baby_skin_care

 

 

Last Updated on November 1, 2023