“ভালো লাগে না” এই কথাটি অধিকাংশ মানুষের একটি কমন অভিযোগ যার কারণ হতে পারে মানসিক অবসাদ অথবা শারীরিক দুর্বলতা। আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা কথা বলবো পুরুষের ক্ষেত্রে শারীরিক ভাবে দুর্বলতা বোধের কারণ ও তার কার্যকারী সমাধান নিয়ে।

সেই সাথে অনুচ্ছেদটিতে থাকছে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর Anthony Komaroff এর দেওয়া বিশেষ কিছু নির্দেশনা যা আপনার শরীরের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়াতে সহায়তা করবে। এছাড়াও শরীর দুর্বলতার কোন পর্যায়ে গেলে সরাসরি একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

শরীরের শক্তি কমে যায় কেন?

আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তা হজম হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের প্রত্যেকটি কোষে পৌঁছে। অতঃপর বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন হয় এবং তা ATP (Adenosine triphosphate) হিসেবে কোষের মধ্যে জমা থাকে। শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য শক্তির প্রয়োজন হলে তখন ATP ভেঙ্গে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। হার্ভার্ডের প্রফেসর Anthony Komaroff বলেন যে মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা কমে যায় যার ফলে শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়ে। (Solan, 2018) তবে আশার কথা হলো এই যে তিনি শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়ানোর (Boost) জন্য কিছু টিপস দিয়েছেন যা পর্যায়ক্রমে জানতে পারবেন। বয়স বৃদ্ধি ছাড়াও একজন পুরুষের আরো কিছু কারণ রয়েছে যা শরীরের শক্তি উৎপাদন কমে যাওয়া তথা দুর্বলতা বোধ হওয়ার সাথে সম্পর্কিত। যেমনঃ

  • শরীরে কম পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন
  • থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
  • ঘুম পর্যাপ্ত না হওয়া
  • অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকা
  • বিষণ্ণতায় ভোগা
  • শরীরে আয়রনের ঘাটতি হওয়া
  • জটিল কোন রোগে ভোগা ইত্যাদি

চলুন এবার ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি কারণ ও তার সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।

কম পরিমাণে Testosterone হরমোনের উৎপাদন

টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হলো পুরুষের প্রধান সেক্স হরমোন যা যৌন সক্ষমতা ঠিক রাখা ছাড়াও শরীরের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে যা শক্তিশালী শরীর গঠনের সাথে সম্পর্কিত। যেমনঃ

  • মাংসপেশীর গঠন বৃদ্ধি করে
  • হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে যা হাড়কে মজবুত রাখার জন্য আবশ্যক
  • শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না এবং শরীরের গঠন ঠিক রাখে
  • লাল রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে ইত্যাদি

একজন পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে গেলে উল্লেখিত কার্যক্রম গুলোতে সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে শারীরিক ভাবে দুর্বলতা বোধ হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ হলোঃ

  • রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরল (LDL- low density lipoprotein) এর উপস্থিতি
  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস
  • অতিরিক্ত ওজন (Obesity)
  • মদ্যপানের অভ্যাস
  • অতিরিক্ত পরিমাণে স্টেরয়েড (steroids) জাতীয় ওষুধ সেবন
  • অন্ডকোষে (Testicls) আঘাত লাগা
  • রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির প্রভাব ইত্যাদি

শরীরের শক্তি কমে যায় কেন

Testosterone হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

আপনার শরীরে দুর্বলতা বোধের কারণ টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি জনিত কিনা তা বুঝতে রক্তে Testosterone লেভেল পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। রক্তে টেস্টোস্টেরন পরিমাণ খুবই কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী Testosterone Supplement নেওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে কার্যকরী কয়েকটি উপায় হলোঃ

  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
  • প্রত্যেকদিন রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা
  • ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য কিছু সময় রোদ পোহানো
  • যতটা সম্ভব মানসিক চাপ পরিহার করতে হবে
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা ইত্যাদি

থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা

থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে অধিক হারে হয়ে থাকে তবে পুরুষের ক্ষেত্রেও এটি হতে পারে। (Case-Lo, 2020) এক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন সমস্যা হলো থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম কমে যাওয়া তথা কম পরিমাণে হরমোন নিঃসরণ হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় Hypothyroidism বলে। হাইপোথাইরয়েডিজম এর ফলে কোষের বিপাক প্রক্রিয়ায় (metabolism) বিঘ্ন ঘটে এবং শক্তি উৎপাদন কমে যায়। এক্ষেত্রে যে সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে তা হলোঃ

  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি
  • শীতকাতর (sensitivity to cold)
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ত্বকের রুক্ষতা
  • চুল পড়া ইত্যাদি

লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিম্নলিখিত পরীক্ষা গুলো করানোর মাধ্যমে শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করা যায়। যেমনঃ

  • TSH (Thyroid stimulating hormone)
  • T4 (Thyroxine)

রক্তে TSH এর মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এবং T4 এর মাত্রা কম থাকলে তা Hypothyroidism হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে একজন হরমোনের চিকিৎসক (Endocrinologist) অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

উল্লেখ্য হাইপোথাইরয়েডিজম এর বিপরীত সমস্যা তথা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে হরমোন নিঃসরণ হলে তাকে Hyperthyroidism বলা হয়। এর ফলে হার্টের কার্যক্রম বেড়ে যায় এবং ঘুমের সমস্যা হয় যা দুর্বলতা ও ক্লান্তি সৃষ্টি করে থাকে। রক্তে TSH এর মাত্রা কম এবং T4 এর মাত্রা বেশি হলে তা হাইপার থাইরয়েডিজম হিসেবে বিবেচিত হয়।

ঘুম পর্যাপ্ত না হওয়া

ঘুম পর্যাপ্ত না হওয়া

আপনার শরীরে দুর্বলতা বোধের কারণ হতে পারে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব। এক্ষেত্রে ঘুমের সময়সীমা যেমন জরুরি তেমনি ভাবে ভালো ঘুম হওয়া আবশ্যক। ভালো ঘুম বলতে বোঝায় রাতের বেলায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা যেখানে অল্প কিছুক্ষণ পর পর ঘুম ভেঙ্গে যায় না। সুস্থ্য স্বাভাবিক পুরুষের জন্য দৈনিক ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে এবং তা অবশ্যই রাতের বেলায়। রাতে না ঘুমিয়ে দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাতের বেলায় ভালো ঘুম হওয়ার জন্য করণীয় বিষয়াবলী হলোঃ

  • নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে
  • চা ও কফি পানের অভ্যাস কমানো উচিত
  • ঘরের তাপমাত্রা, আলো ও বিছানা ঘুমের জন্য উপযোগী হওয়া জরুরি
  • ঘুমানোর পূর্বে ঢিলেঢালা বা আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে
  • দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট এর বেশি সময় ঘুমানো উচিত নয়
  • রাতের খাবার ঘুমানোর ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পূর্বে গ্রহণ করা উত্তম
  • ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে কিছুক্ষণ সময় ধরে বই পড়া,‌ মৃদু শব্দে গান শোনা, যোগব্যায়াম (Yoga) করা ইত্যাদি ঘুমের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে

 

অনেকের ক্ষেত্রেই রাতের বেলায় ঘুম না হওয়ার জন্য দায়ী শুধুমাত্র জীবন যাপন পদ্ধতি নয় বরং কিছু কিছু রোগ যাদেরকে মেডিকেলের ভাষায় sleep disorders বলা হয়। যেমনঃ ইনসমনিয়া, Sleep apnea, Narcolepsy, Restless leg syndrome বা RLS, Parasomnias ইত্যাদি।

Sleeping disorders এর কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকা

সাধারণত কাজকর্ম করার ফলে শরীরে ক্লান্তি জমা হয় এবং বিশ্রামের মাধ্যমে আবার শরীরের সতেজতা ফিরে আসে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী (৬ মাসের বেশি সময়) ক্লান্তি দেখা দিলে সেটিকে রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় chronic fatigue syndrome বা CFS বলে। এই রোগের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তি দূর হয় না বরং শারীরিক ও মানসিক কর্মদক্ষতা হ্রাস পেতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই রোগের প্রকৃত কারণ জানতে পারেননি তবে কিছু কিছু বিষয়কে এর জন্য দায়ী মনে করে থাকেন। যেমনঃ (Mayoclinic, n.d.)

  • ভাইরাসের সংক্রমণ
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব
  • শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
  • শারীরিক ও মানসিক আঘাত

 

CFS সমস্যাটির সমাধানের জন্য সাইকোলজিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় তা কর্মক্ষেত্র, পরিবার ও সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একাকী জীবন যাপনে (Isolation) অভ্যস্ত করে তোলে এবং বিষন্নতার (Depression) সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য CSF ছাড়াও ক্লান্তির অন্যান্য কারণ গুলো হলোঃ

  • অতিরিক্ত পরিমাণে পরিশ্রম করা
  • একদম অলস জীবন যাপন
  • কম পানি পান করা
  • অতিরিক্ত ওজন
  • ঘুমের ওষুধ খাওয়া
  • অতিরিক্ত চা ও কফি পানের অভ্যাস ইত্যাদি

শরীরে আয়রনের ঘাটতি হওয়া

বিষণ্ণতায় ভোগা

বিষন্নতা (Depression) একটি মানসিক রোগ তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ এটি যে একটি রোগ তা বুঝতে পারেন না। যার ফলে সমস্যা সমাধানের জন্য সাইকোলজিস্টের (Phycologist) শরণাপন্ন হওয়ার প্রবণতা খুব কম দেখা যায়। বিষন্নতায় ভোগার ফলে খাওয়ার প্রতি অনীহা ও ঘুমের সমস্যা তৈরি হয় যা শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত বিষন্নতায় ভোগার ফলে তা একসময়ে আত্মহননের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। আশার কথা হলো এই যে যথাসময়ে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং এবং ওষুধ সেবনের মাধ্যমে বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে তার জন্য বিষন্নতার লক্ষণ সমূহ বুঝতে পারা জরুরি। কি কি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে পারবেন যে আপনাকে বিষন্নতা গ্রাস করেছে এবং একজন সাইকোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • দুঃখ, হতাশা
  • কোনো কিছুতেই আগ্রহ থাকে না
  • মনোযোগের অভাব
  • স্মৃতি শক্তি কমে যায়
  • ঘুমের সমস্যা
  • শরীরের শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি

শরীরে আয়রনের ঘাটতি হওয়া

আয়রন (Iron) একটি খনিজ উপাদান যা শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের লাল রক্ত কণিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কোষে অক্সিজেন পরিবহনের কাজ করে। কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ না হলে বিপাক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে তথা শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়ে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তস্বল্পতা (Anemia) দেখা দেয় যার লক্ষণ হলোঃ

  • দুর্বলতা ও ক্লান্তি
  • ফ্যাকাশে ত্বক (pale skin)
  • শ্বাসকষ্ট
  • মাথাব্যথা ও ঝিমুনি ভাব
  • অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ইত্যাদি

লক্ষণ দেখা দিলে রক্তস্বল্পতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সহজ একটি রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে যাকে CBC (complete blood count) বলা হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩.৫ থেকে ১৬.৫ গ্রাম পার ডেসিলিটার (13.5 to 16.5 gm/dL)। এই মাত্রা ১৩.৫ গ্রাম পার ডেসিলিটার থেকে অনেক কমে গেলে আয়রন ট্যাবলেট (Iron supplement) গ্রহণ করা উচিত। তবে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্টকাঠিন্য দেখা যায়। আর তাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসেবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।

উল্লেখ্য রক্তস্বল্পতা পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে অধিক হারে হয়ে থাকে কারণ মহিলাদের প্রতি মাসে পিরিয়ডের (Menstruation) সময় রক্তক্ষরণ হয়। তবে কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যা পুরুষদের ক্ষেত্রে আয়রনের ঘাটতি তথা রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমনঃ

  • নিরামিষ আহার করা
  • পাকস্থলীতে আলসার
  • পাইলসের দরুন রক্তক্ষরণ
  • ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) ও ভিটামিন বি১২ এর অভাব ইত্যাদি

জটিল রোগে ভোগা

যে কোনো রোগে আক্রান্ত অবস্থায় মানুষের খাওয়া, ঘুম, হজম প্রক্রিয়া সহ মানব দেহের সমস্ত কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে থাকে এবং দুর্বলতা বোধ হয়। তবে এর মধ্যে কিছু জটিল প্রকৃতির রোগ রয়েছে যার প্রভাবে শরীরে অস্বাভাবিক বা দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দেয়। যেমনঃ

  • লিভার ফেইলিউর
  • কিডনি ফেইলিউর
  • হার্টের রোগ
  • ক্যান্সার (Cancer)
  • ফুসফুসের রোগ (COPD- chronic obstructive pulmonary disease)
  • ডায়াবেটিস ইত্যাদি

এছাড়াও কিছু কিছু ওষুধ সেবনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে দুর্বলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ ব্যথা নাশক ওষুধ, হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, এলার্জি ও কাশির ওষুধ ইত্যাদি। যদি এতো বেশি পরিমাণে দুর্বলতা দেখা যায় যে চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে সমস্যা হচ্ছে তবে আপনার চিকিৎসককে বিষয়টি অবগত করুন। এক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিতে পারেন।

সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে কিভাবে পুরুষের শক্তি বাড়ানো যায়?

সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে পুরুষের শক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়ার ব্যাপারে হার্ভার্ডের প্রফেসর Anthony Komaroff এর নির্দেশনা হলো দিনে ৩ বার বেশি করে খাবার গ্রহণের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে ঘন ঘন খেতে হবে। সরল শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে বেশি পরিমাণে ক্যালরি বা শক্তি পাওয়া গেলেও তা শরীরের ওজন ও রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল, সবজি, মাছ ইত্যাদি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয়, এলকোহল ইত্যাদি বর্জন করা উচিত।

খাবারের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি যা শরীরের প্রত্যেকটি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ঘাটতি হলে সর্বপ্রথম যে লক্ষণটি দেখা যায় তা হলো ক্লান্তি। আর তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য দৈনিক ৩.৭ লিটারের বেশি পানি পান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। (Solan, 2018) এতো বেশি পরিমাণে পানি পান করা অনেকের কাছেই কঠিন মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে এমন খাবার (ফলমূল ও শাকসবজি) খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। পানি খাওয়ার স্বাস্থ্যসম্মত উপায় হলো একবারে বেশি করে পানি না খেয়ে বরং সারাদিনে বিভিন্ন সময়ে বারে বারে পানি পান করা।

পানির উৎস এবং শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করতে চা ও কফির জুড়ি নেই। আর তাই তো সামান্য ক্লান্তি দেখা দিলেই আমরা চা অথবা কফির মগ নিয়ে বসে যাই। কিন্তু যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অফ সাইকিয়াট্রিস্ট এর নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য ক্যাফেইন বর্জন করা উচিত। (National Health Service, 2021) কারণ এর প্রভাবে ক্ষুধা ও ঘুম কমে যায় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ক্যাফেইনের প্রধান উৎস হলো চা ও কফি তবে এনার্জি ড্রিংকস, কোকা কোলা ও কিছু কিছু ব্যথা নাশক ওষুধের মধ্যে সামান্য পরিমাণে ক্যাফেইন রয়েছে।

তবে কি চা ও কফি খাওয়া একেবারেই বর্জন করা উচিত? না, একেবারেই বর্জন করা হলে হঠাৎ ক্যাফেইনের অভাবে মাথাব্যথা সহ শরীরে নানাবিধ অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। আর তাছাড়া একদমই চা ও কফি বর্জন করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে চা ও কফি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

ব্যায়ামের মাধ্যমে কিভাবে পুরুষের শক্তি বাড়ানো যায়

ব্যায়ামের মাধ্যমে কিভাবে পুরুষের শক্তি বাড়ানো যায়?

শরীরে দুর্বলতা বোধ হলে অর্থাৎ শক্তির ঘাটতি থাকলে সেক্ষেত্রে ব্যায়াম করার মাধ্যমে কিভাবে শক্তি বাড়বে সেই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে। কারণ ব্যায়াম করার ফলে শক্তি (ক্যালরি) ব্যয় হয় তা আমরা সবাই জানি। তবে হার্ভার্ডের প্রফেসর Anthony Komaroff এর মতে ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে কিছু বিশেষ রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয় যা শরীরের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। সেই সাথে ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংসপেশী শক্তিশালী হয় এবং কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়।  এক্ষেত্রে মৃদু প্রকৃতির ব্যায়াম দৈনিক ২০ থেকে ৩০ মিনিট সপ্তাহে অন্তত তিন দিন করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। (Solan, 2018)

কখন অতিরিক্ত দুর্বলতার জন্য ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন?

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত পরিমাণে ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের দুর্বলতা দূর না হলে সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। কারণ জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবে শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ সারাতে হব এবং এর সাথে সাথে দুর্বলতা কেটে যাবে। এছাড়াও দুর্বলতার চরম পর্যায়ে নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহ দেখা দিলে সেক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেমনঃ

  • বুকে ব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
  • তীব্র প্রকৃতির ব্যথা ইত্যাদি

নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক কারণে পুরুষের শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে সেক্ষেত্রে যথাযথ কারণ জেনে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোগের প্রভাবে শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে পুরুষের শারীরিক দুর্বলতা হোক কিংবা যৌন অক্ষমতা কোনো পরিস্থিতিতেই হকারদের প্ররোচনায় অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে না। আমাদের দেশে রাস্তা ঘাটে এমন অনেক হকার দেখতে পাওয়া যায় যারা দুর্বলতার ওষুধ বিক্রি করে থাকেন, এদের থেকে দূরে থাকতে হবে।

References

Case-Lo, C. (2020, March 29). What Causes Low Energy in Men? From Healthline: https://www.healthline.com/health/mens-health/what-causes-low-energy-men

Mayoclinic. (n.d.). Chronic fatigue syndrome. From Mayoclinic: https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/chronic-fatigue-syndrome/symptoms-causes/syc-20360490

National Health Service. (2021, March 24). Self-help tips to fight tiredness. From NHS of UK: https://www.nhs.uk/live-well/sleep-and-tiredness/self-help-tips-to-fight-fatigue/

Solan, M. (2018, September 7). Tired? 4 simple ways to boost energy. From Harvard Health publishing: https://www.health.harvard.edu/blog/tired-4-simple-ways-to-boost-energy-2018090714678

 

 

Last Updated on April 15, 2023